ক্যাটাগ্লিফিস নোডাস নামে এক পিঁপড়ের প্রজাতি মরুভূমিতে বসবাস করে। এই মরুভূমির পিঁপড়ে দীর্ঘকাল ধরে তাদের দিক নির্ণয় ক্ষমতার জন্য পরিচিত। উত্তর আফ্রিকার সাহারার বৈশিষ্ট্যবিহীন স্থানে বা গ্রিসের পাইন বনে সামান্য কয়েকটা ল্যান্ডমার্ক রয়েছে। সেখানে এরা বাসা থেকে শত শত মিটার দূরে বাসা ছেড়ে জিগ-জ্যাগ প্যাটার্নে চলে যায়। কিন্তু একবার খাবার পেয়ে গেলে তারা একটা সরল রেখা বরাবর বাসার প্রবেশপথে ফিরে আসে। স্থানিক দিক নির্দেশ করার জন্য এরা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র ব্যবহার করে। পৃথিবীর ম্যগ্নেটোরিসেপশন কীভাবে কাজ করে তা নিয়ে নানা দ্বন্দ্ব রয়েছে। ছোটো সংবার্ড, পোকা মাকড়, মনার্ক প্রজাপতি আলো নির্ভর কোয়ান্টাম এফেক্ট যা র্যাডিকাল- পেয়ার মেকানিজম নামে পরিচিত, তার ভিত্তিতে দিক নির্দেশ করে। চুম্বক শলাকা উত্তর মেরুর দিকে দিক নির্দেশ করে তেমন কিছু পশুর ক্ষেত্রে এরকম ছোটো ছোটো চুম্বকীয় কণা সংবেদনশীল কোশ বা স্নায়ু কোশ হিসেবে কাজ করে, যেমন পায়রা, বাদুড়, সামুদ্রিক কচ্ছপ। চৌম্বক কণার ভিত্তিতে যারা দিক স্থির করে তারা পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণ ভূচৌম্বক ক্ষেত্রের ভিত্তিতে এই কাজ করে। আর যে প্রাণীরা র্যাডিকাল-পেয়ার মেকানিজমের সাহায্য নেয়, তারা ভূচৌম্বক ক্ষেত্রের রেখা ও পৃথিবী পৃষ্ঠের কোণের ভিত্তিতে চলে। পিঁপড়ে অন্যান্য ক্ষুদ্র পোকামাকড়ের তুলনায় চৌম্বকক্ষেত্রের একটা ভিন্ন উপাদানের ওপর নির্ভর করে দিক নির্দেশ করে। কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে জার্মানির ওল্ডেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর পলিন ফ্লিসম্যানের নেতৃত্বে গবেষকরা এই বিষয়ে জানিয়েছেন।
বর্তমান গবেষণায়, গবেষকরা গ্রীসের এক উপনিবেশে পিঁপড়েদের বিভিন্ন ধরনের চৌম্বক ক্ষেত্রে উন্মোচন করেছিলেন। এর জন্য, তাদের বাসার প্রবেশপথের ওপরে হেলমহোল্টজ কয়েল স্থাপন করেন আর পিঁপড়েরা তাদের বাসা থেকে বেড়িয়ে একটা টানেলের মধ্য দিয়ে গিয়ে কয়েলগুলোর কেন্দ্রে একটা পরীক্ষামূলক প্ল্যাটফর্মে বেড়িয়ে আসে। সেখানে মরুভূমির পিঁপড়েরা প্রথমবার বাসা ত্যাগ করার সময় যে আচরণ দেখায় তা জানার জন্য ফিল্ম বানানো হয়েছিল। দেখা যায়, এই পিঁপড়েরা হাঁটার সময় বাসার প্রবেশপথের দিক মনে রাখতে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র ব্যবহার করে। পিঁপড়েরা হাঁটার সময় বারে বারে থেমে তাদের বাসার প্রবেশপথের দিকে তাকায়। গবেষকদের অনুমান পিঁপড়েরা তাদের চাক্ষুষ স্মৃতি মনে রাখার জন্য চৌম্বক ক্ষেত্র ব্যবহার করছে। পিঁপড়েদের মস্তিষ্ক বিকাশের ওপর এই দলের গবেষণা সাম্প্রতিক PNAS-জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, যা এই তত্ত্ব নিশ্চিত করে। মনার্ক প্রজাপতি বা সংবার্ড দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার সময় ভূচৌম্বক ক্ষেত্রে সাহায্য নেয়। কিন্তু পিঁপড়েরা ছোটো ছোটো দূরত্ব অতিক্রম করতে উত্তর -দক্ষিণ দিশার ওপর নির্ভর করে। গবেষকরা উত্তর- দক্ষিণ মেরু ১৮০ডিগ্রি ঘুরিয়ে দিয়ে দেখেছেন, পিঁপড়েরা বাসায় ঢোকার পথ ভুল করছে।