দিনে হাজার হাজার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে কনজাংটিভাইটিসে

দিনে হাজার হাজার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে কনজাংটিভাইটিসে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ৬ অক্টোবর, ২০২৩

চোখ লাল হওয়া বা কনজাংটিভাইটিস – এই রোগটি আজ মহামারীর আকারে ভিয়েতনাম, ভারত এবং পাকিস্তানে কয়েক হাজার মানুষকে জর্জরিত করছে। গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহ এবং রেকর্ড বৃষ্টিপাতের মধ্যে বেশ কয়েক মাস ধরে, এই সংক্রামণ ছড়িয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকটি দেশের স্বাস্থ্য আধিকারিকরা একটি অত্যন্ত সংক্রামক জীবাণুকে নিয়ন্ত্রণ করতে লড়াই করছে যা বেশি আর্দ্রতায় বৃদ্ধি পায় বলে অনুমান করা হচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে, ভিয়েতনাম, ভারত এবং পাকিস্তানের কয়েক হাজার স্কুল সংক্ষিপ্তভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এই প্রচেষ্টায় যে ভাইরাসটিকে খানিকটা প্রতিরোধ করা যাবে। যদিও ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস উভয়ের কারণেই চোখ লাল হতে পারে, তবে ভাইরাস সংস্করণটি একটু বেশি সংক্রামক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩০ দিনের জন্য বস্তুর পৃষ্ঠে এই ভাইরাস বাস করতে পারে, এবং দূষিত হাত দিয়ে চোখ একটু ঘষলে তা সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ এবং দৃষ্টিশক্তি বিষয়ক বিজ্ঞানী ইসাবেল জালবার্ট-এর মতে বিভিন্ন ধরণের ভাইরাসই ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস (COVID-19 ভাইরাস সহ) সৃষ্টি করতে পারে । তবে, ৭৫% ক্ষেত্রে সংক্রামক কনজাংটিভাইটিস, অ্যাডেনোভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়। কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের সাধারণত এক বা দুটি চোখেই সংক্রমণ হতে পারে। এই রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে চোখে লালভাব, ব্যথা, চোখের পাতা ফোলা, ঝাপসা দৃষ্টি, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা এবং জলযুক্ত স্রাব। বারবার হাত ধোয়া এবং বিভিন্ন জিনিসের পৃষ্ঠ জীবাণুমুক্ত করা ছাড়া, ভাইরাসের বিস্তার রোধে আর বিশেষ কিছু করা যায় না। সংক্রমণের ক্ষেত্রে রোগীদের দু সপ্তাহ বা তার বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষণ না তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। বৃহত্তর সম্প্রদায়ের বিস্তার এড়াতে এই সময়ে বাড়িতে থাকা অপরিহার্য। সবচেয়ে গুরুতর ক্ষেত্রে, চোখের কর্নিয়া দীর্ঘস্থায়ীভাবে স্ফীত হতে পারে, যার ফলে দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিশক্তির সমস্যা হতে পারে। সারা পৃথিবীতে বহু মানুষের বার বার এই সংক্রমণ ঘটেছে। কিন্তু যেহেতু এই অসুস্থতা একটি ঋতু চক্রের মধ্যে আবর্তিত হয় তাই ভবিষ্যতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সংবেদনশীল হতে পারে, যদিও এই ক্ষেত্রে সেভাবে গবেষণা হয়নি। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে উচ্চ তাপমাত্রা কনজাংটিভাইটিসের ক্ষেত্রে একটি ঝুঁকির কারণ। ২০২৩ সালে, চীনে গবেষণায় দেখা গেছে যে বেশি মাত্রায় আর্দ্রতা কনজাংটিভাইটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে, যদিও তাপমাত্রার তুলনায় কম আপেক্ষিক আর্দ্রতাও শুষ্কতা এবং জ্বালা সৃষ্টি করে এবং রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষকদের মতে বায়ু দূষণ সম্ভবত একটি ভূমিকা পালন করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − nine =