দুয়ারে সংকট

দুয়ারে সংকট

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

বিগত তিন দশকে জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীর ভূমিভাগের তিন-চতুর্থাংশ স্থায়ীরূপে শুষ্ক করে তুলেছে, রাষ্ট্রপুঞ্জের এক যুগান্তকারী প্রতিবেদনে এমন সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে। ৩০ বছরের আগের তুলনায় পৃথিবীর স্থলভাগের ৭৭.৬% আজ প্রায় শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে। ইউএন কনভেনশন টু কমব্যাট ডেজার্টফিকেশন-এর (ইউএনসিসিডি) একটি নতুন প্রতিবেদনে প্রকাশিত ফলাফল সতর্ক করেছে যে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে শতাব্দীর শেষ নাগাদ ৫০০ কোটি মানুষকে শুষ্ক ভূমিতে বসবাস করতে হতে পারে – যার ফলে মাটি হ্রাস পাবে, জল সম্পদ হ্রাস পাবে, এবং অত্যাবশ্যক বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়বে।
ভূমি শুষ্কতা যা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে, এই সংকটটি বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রথম, নথিভুক্ত করা হয়েছে। গবেষকদের মতে যদি একটি এলাকার জলবায়ু শুষ্ক হয়ে যায়, তবে, খরা শেষ হয়ে গেলেও তা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে না। এখন যে শুষ্ক জলবায়ু বিশ্বজুড়ে বিস্তীর্ণ ভূমি অঞ্চল প্রভাবিত করছে তা আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে না এবং এই পরিবর্তন পৃথিবী জুড়ে ‘জীবন’-কে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। বাতাসে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলায় খুব দ্রুত হারে হচ্ছে উষ্ণায়ন। গবেষকরা দেখেছেন উষ্ণায়নের গতি বেড়ে যাওয়ায়, ভূমিপৃষ্ঠ থেকে জল আরও সহজে বাষ্পীভূত হয় যাচ্ছে এবং বায়ুমণ্ডল তা শোষণ করার ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা অর্জন করছে। এর ফলে পৃথিবীর বেশিরভাগ অংশ শুষ্ক হয়ে উঠছে – একসময়ের সবুজ বন স্থায়ীভাবে শুষ্ক তৃণভূমিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। মাটি আদ্রতা হারিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। ফুটিফাটা মাটিতে কোনও ফসল উৎপাদনই সম্ভব হচ্ছে না। এই সমস্যার পাশাপাশি ভূমির অপব্যবহার, জল সম্পদের অব্যবস্থাপনার ফলে প্রায় তিনশো কোটি মানুষ এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি একটি বড়ো বিপদের মুখে এগিয়ে চলেছে। সবমিলিয়ে বিপদ ঘ্নিয়ে আসছে। বিশ্বের ৪০% কৃষি জমি এবং প্রায় ২৩০ কোটি মানুষ এই শুষ্কতার কারণে প্রভাবিত হচ্ছে। দাবানলের তীব্রতা বাড়ছে, কৃষিকাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ভূমি বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাওয়ার ফলে মানুষ এক জায়গা থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত হচ্ছে। এর মধ্যে সমগ্র ইউরোপ, পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, পূর্ব এশিয়া এবং মধ্য আফ্রিকা অন্তর্ভুক্ত। গবেষকরা সতর্ক করছেন এখনই সচেতন না হলে কয়েক দশকের মধ্যে খাদ্যাভাবের মুখে পড়বে মানুষ। অর্থনৈতিক ক্ষতি দেখা দেবে, মানুষ অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হবে। বিশ্ব উষ্ণায়নের এই প্রভাব কমাতে মানবজাতির প্রচেষ্টা আদৌ চোখে পড়ার মতো নয়। তারা সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছেন।