দূর সমুদ্রে দূষণ 

দূর সমুদ্রে দূষণ 

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

অনেকদিন ধরে মনে করা হত, দূরবর্তী সমুদ্র অঞ্চলগুলি মানবসৃষ্ট দূষণ থেকে বেশ দূরেই থাকবে। কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টার্কটিকার আশেপাশের সামুদ্রিক পাখিদের দেহেও দীর্ঘস্থায়ী দূষিত রাসায়নিক জমছে। অর্থাৎ দূরবর্তী সমুদ্র অঞ্চলগুলি সুরক্ষিত নয়। ‘পি এফ এ এস’ বলে পরিচিত পদার্থ, যেগুলোকে ‘ফরএভার কেমিক্যাল’ বলা হয়, সেগুলো বাতাস আর সাগরপ্রবাহ কেটে হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এই দূরবর্তী এলাকায় পৌঁছে যায়। মূলত নন-স্টিক বাসন, দাগ-রোধী কাপড়, খাবারের মোড়ক আর আগুননির্বাপক ফোমে ব্যবহৃত এসব যৌগ মাটি, জল ও জীবদেহে দীর্ঘদিন রয়ে যায়। একেবারে অক্ষত অবস্থায় । দক্ষিণ মহাসাগরের ব্ল্যাক-ব্রাউড অ্যালবাট্রস, হোয়াইট-চিন্ড পেট্রেল আর কমন ডাইভিং পেট্রেল, এই তিনটি প্রজাতির সামুদ্রিক পাখির যকৃতের নমুনা বিশ্লেষণে, বিজ্ঞানীরা প্রায় ৪০ ধরনের পিএফএএস খুঁজে পেয়েছেন।

 

২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ ও সাউথ জর্জিয়ার কাছেই, মাছ ধরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত পাখিদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বিশ্লেষণে ২২ ধরনের পিএফএএস পাওয়া গেছে। তার মধ্যে দুই প্রজাতিতে প্রথমবার এই রাসায়নিক পরীক্ষা করা হল। অধিকাংশ নমুনায় বহু বছর আগেই নিষিদ্ধ পিএফওএস ‘প্রধান উপাদান’ হিসেবে ধরা পড়ে। এটি মোট পিএফএএসের প্রায় ৮০ শতাংশ। বাকিটা ছিল দীর্ঘ শৃঙ্খলযুক্ত পিএফএএস। বিভিন্ন প্রজাতিতে মাত্রাগত পার্থক্য থাকলেও মোট ধরণ প্রায় একই ছিল, যা ব্যাপক সামুদ্রিক অঞ্চলে একই ধরণের দূষণ উৎসের ইঙ্গিত দেয়। পিএফএএস সাধারণত চর্বিতে জমে না, বরং দেহের প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত থাকে। তাই যকৃতে এর মাত্রা দীর্ঘমেয়াদি দূষণ বোঝার গুরুত্বপূর্ণ সূচক।

শীর্ষস্থানীয় সামুদ্রিক পাখিরা জল আর খাবারের মাধ্যমে এসব রাসায়নিক জমা করে। তাই তারা সমুদ্রের স্বাস্থ্য বোঝানোর ক্ষেত্রে একেবারে “জীবন্ত সূচক”। খাবারের ধরন আর বিচরণভাগ ভেদে প্রতিটি প্রজাতির শরীরে পিএফএএসের মাত্রা আলাদা। প্ল্যাঙ্কটন খাওয়া পাখিদের শরীরে ‘কমন ডাইভিং পেট্রেলে’র মাত্রা সাধারণত কম পাওয়া যায়। আর বড় শিকারের উপর নির্ভরশীল পাখিদের ক্ষেত্রে ‘হোয়াইট-চিন্ড পেট্রেলের’ মাত্রা বেশি দেখা যায়। দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল এলাকায় খাবার খোঁজার সময় অনেক পাখি অতিরিক্ত দূষণের সংস্পর্শে পড়ে। উদ্বেগের কথা হল, নিষিদ্ধ পিএফএএসের বদলে যে নতুন রাসায়নিকগুলো ব্যবহার হচ্ছে, সেগুলোও কিছু পাখির শরীরে পাওয়া গেছে এবং তারা পরিবেশে স্থায়ী হয়েই থেকে যাচ্ছে। এগুলি কিন্তু সমান বা বেশি ক্ষতিকরও হতে পারে। ফলে দেখা যাচ্ছে একের পর এক রাসায়নিক বন্ধ করেও সমুদ্র ও বন্যপ্রাণীর দূষণ থামছে না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পুরো পিএফএএস গোষ্ঠীর উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং দূরবর্তী অঞ্চলের বন্যপ্রাণী নজরদারি ছাড়া বিশ্বজুড়ে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করা কঠিন।

 

 

সূত্র :Per- and Polyfluoroalkyl Substances (PFAS) in Sub-Antarctic Seabirds: Insights into Long-Range Transport and Bioaccumulation of Legacy and Replacement Chemicals; ACS Environmental Au

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 + eight =