যেসব অণু আর কোষ দিয়ে আমাদের শরীর গঠিত তাদের ভালো করে অনুধাবন করাটা চিকিৎসাশাস্ত্রের অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত জরুরি। তাই চোখের নাগালের বাইরে শরীরে কী ঘটে চলেছে তার স্পষ্টতর ও পরিচ্ছন্নতর ছবি পাওয়ার জন্য নিত্যই গবেষণা চলেছে। ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সম্প্রতি রামণ আণুবীক্ষণিক পদ্ধতি সহযোগে উচ্চমানের স্পষ্টতাযুক্ত ছবি তোলার এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। এই রামণ আণুবীক্ষণিক পদ্ধতি জৈব নমুনার ছবি তোলার এক কার্যকর প্রকৌশল। কারণ এই পদ্ধতিতে দেহপ্রক্রিয়ায় ক্রিয়াশীল প্রোটিন প্রভৃতি সুনির্দিষ্ট অণুর ছবি তোলা যায়। মুশকিল হচ্ছে, জৈব নমুনা থেকে যে রামণ-আলো বেরিয়ে আসে তা খুবই ক্ষীণ। ফলে অনেক সময় পটভূমি থেকে আসা নানান ব্যাঘাত সেই সংকেতকে ঝাপসা করে তোলে। এ সমস্যার সমাধানে গবেষকরা এবার এমন একটা অণুবীক্ষণ তৈরি করতে পেরেছেন যা আগে থেকে নিম্ন তাপমাত্রায় জমাট-বাঁধানো জৈব নমুনার তাপমাত্রা, নমুনাটি সংগ্রহ করার কালে অপরিবর্তিত রাখতে পারে। এই পদ্ধতিতে আগের তুলনায় আট গুণ উজ্জ্বল ছবি পাওয়া গেছে। গবেষক দলের প্রধান কেন্তা মিজুশিমা বলেছেন, ছবি যে ঝাপসা হয়ে যায় তার একটা কারণ হল আপনি যে-জিনিসগুলো দেখতে চাইছেন তার নড়াচড়া। জমাট-বাঁধা নমুনা নড়াচড়া করতে পারে না, তাই তাদের নষ্ট না করে অনেকক্ষণ ধরে তাদের ওপর আলো ফেলে ছবি তোলা সম্ভব। তাই পটভূমির তুলনায় জোরালো সংকেত পাওয়া গেছে, বেশি রেজোলিউশনের ছবি আর প্রশস্ততর দৃষ্টিক্ষেত্র পাওয়া গেছে। এই প্রকৌশলে কোনো রং ব্যবহার করা হয় না, কোষগুলিকে নির্দিষ্ট অবস্থায় ধরে রাখার জন্য কোনো রাসায়নিক পদার্থও ব্যবহার করা হয় না। তাই ছবিতে কোষের আচার আচরণ আর প্রক্রিয়াগুলির খুবই প্রতিনিধিত্বসূচক চেহারা ফুটে ওঠে। তাঁরা আরও প্রমাণ করতে পেরেছেন যে অতিশীতল অবস্থায় জমাট বাঁধানোর প্রক্রিয়ায় প্রোটিনের ভৌত-রাসায়নিক অবস্থাগুলি অবিকৃত থাকে। আগে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে যে-ফল পাওয়া যেত তা থেকে এই অতিশীতল অবস্থায় জম্নাট বাঁধানোর পদ্ধতি অনেক সুবিধাজনক। আর একজন প্রবীণ গবেষক কাৎসুমাসা ফুজিতা জানিয়েছেন, এই রামণ আণুবীক্ষণিক প্রক্রিয়া ছবি তোলার হাতিয়ার-বাক্সে এক নতুন মাত্রা সঞ্চার করেছে। এ প্রক্রিয়ায় শুধু যে ছবি পাওয়া যায় তা নয়, অণুগুলি কীভাবে ছড়িয়ে আছে, কী তাদের রাসায়নিক দশা সে সম্বন্ধেও তথ্য পাওয়া যায়। সবচেয়ে বিস্তারিত উপলব্ধিতে পৌঁছনোর জন্য আমাদের যে-বিরামহীন প্রয়াস তাতে এটা খুবই কাজ দেয়। জৈব নমুনাকে বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করার অন্যান্য যেসব আণুবীক্ষণিক কৌশল আছে তাদের সঙ্গে মিলিয়ে এটিকে কাজে লাগানো যাবে। চিকিৎসাবিজ্ঞান ও ঔষধবিজ্ঞান সহ জীববিজ্ঞানের বহু ক্ষেত্রে এর ফলপ্রদ প্রয়োগ হবে বলেই আশা।
সূত্র Osaka University. “Enhanced Raman microscopy of cryofixed specimens: Clearer and sharper chemical imaging.” ScienceDaily. ScienceDaily, 30 December 2024. <www.sciencedaily.com/releases/2024/12/241230132101.htm>.