ধূমপানের “উপকারিতা”

ধূমপানের “উপকারিতা”

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

প্রায় চার দশক ধরে গবেষকরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অদ্ভুত বৈপরীত্যের সম্মুখীন : কেন ধূমপান ক্রন্স রোগের (অন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত সমস্যা) ঝুঁকি বাড়ায়, অথচ আলসারেটিভ কোলাইটিসে কিছুটা উল্টো সুরক্ষা দেয়? সম্প্রতি জাপানের রাইকেন সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটিভ মেডিক্যাল সায়েন্সেস -এর বিজ্ঞানী হিরোশি ওনো ও তাঁর দল এ রহস্যের জট খুলতে সক্ষম হয়েছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান করলে ধূমপায়ীয়ের শরীরে এমন কিছু মেটাবোলাইট (বিপাকক্রিয়া জাত ক্ষুদ্র রাসায়নিক) তৈরি হয়, যা মুখগহ্বরের কিছু ব্যাকটেরিয়াকে অন্ত্রে টিকে থাকতে সহায়তা করে। বিশেষত স্ট্রেপ্টোকক্কাস নামক মুখের জীবাণুগুলো ধূমপায়ীদের কোলনের মিউকোসা স্তরে বসতি গড়তে পারে। সেখানে তারা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে তোলে।
আলসারেটিভ কোলাইটিসে প্রদাহের মূল কারণ হলো অতিরিক্ত Th2 অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া। কিন্তু ধূমপায়ীদের শরীরে মুখের ব্যাকটেরিয়াগুলো প্রবেশ করলে তা Th1 কোষকে সক্রিয় করে, যা আবার Th2 প্রতিক্রিয়াকে দমন করে। ফলে প্রদাহ কমে যায় এবং রোগের উপসর্গও হ্রাস পায়। অন্যদিকে ক্রন্স রোগে প্রদাহ সৃষ্টি করে মূলত Th1 কোষই। তাই সেখানে একই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি উল্টে প্রদাহ আরও বাড়িয়ে দেয়। এ কারণেই ধূমপান ক্রন্স রোগের জন্য ক্ষতিকর হলেও আলসারেটিভ কোলাইটিসে আশ্চর্যজনকভাবে উপকারী হয়ে ওঠে।

আরও জানা গেছে, ধূমপানের ফলে শরীরে হাইড্রোকুইনোন নামক এক ধরনের যৌগ তৈরি হয়, যা স্ট্রেপ্টোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি করে। পরীক্ষামূলকভাবে ইঁদুরে হাইড্রোকুইনোন প্রয়োগ করার পর একই ফলাফল দেখা গেল। শুধু তাই নয়,গবেষকরা ধূমপায়ীদের মুখের লালারস থেকে দশটি ব্যাকটেরিয়া সংগ্রহ করে ইঁদুরের শরীরে প্রয়োগ করেন। দেখা যায়, স্ট্রেপ্টোকক্কাস মাইটিস সরাসরি আলসারেটিভ কোলাইটিসে প্রদাহ কমায়, কিন্তু ক্রন্স রোগাক্রান্তদের ক্ষতি করে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে রোগের পার্থক্য আসলে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার কারণে।
তবে চিকিৎসকরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ধূমপান কোনোভাবেই সমাধান নয়, কারণ এটি ক্যান্সার, হৃদরোগসহ বহু প্রাণঘাতী সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। কিন্তু এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে প্রোবায়োটিক থেরাপি বা হাইড্রোকুইনোন-ভিত্তিক প্রোবায়োটিক চিকিৎসা উদ্ভাবনের পথ খুলে দিতে পারে। অর্থাৎ ধূমপানের ক্ষতিকর দিক বাদ দিয়ে, একই প্রভাব নিরাপদভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
মোটকথা, ধূমপানের মাধ্যমে মুখের ব্যাকটেরিয়ার অন্ত্রে স্থানান্তরই সেই মূল প্রক্রিয়া যা আলসারেটিভ কোলাইটিসে উপকার দেয়। এই বোঝাপড়া শুধু দীর্ঘদিনের চিকিৎসা সংক্রান্ত রহস্যের সমাধানই দেয়নি, ভবিষ্যতে নিরাপদ ও কার্যকর চিকিৎসার নতুন দিশাও দেখিয়েছে।

সূত্র: “Smoking affects gut immune system of patients with inflammatory bowel diseases by modulating metabolomic profiles and mucosal microbiota” by Eiji Miyauchi, Hiroshi Ohno,et.al;(25.08.2025), Gut.
DOI: 10.1136/gutjnl-2025-334922

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 − one =