ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকল দিল্লি

ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকল দিল্লি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৪ নভেম্বর, ২০২৪
Default Alt Text

বুধবার সকালে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি ঢাকল ধোঁয়াশার চাদরে। ভোর সাড়ে ৫টা থেকেই শহর ঘিরে ছিল ঘন ধোঁয়াশার আস্তরণ। শ্বাসরুদ্ধ অবস্থা হয় বাসিন্দাদের। কারণ অবশ্যই বায়ুদূষণ, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত দৈনিক সর্বাধিকের চেয়ে প্রায় ৫০ গুণ বেশি। মৌসম ভবনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সকালে দিল্লির বাতাসের গুণগত মান বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ছিল ৩৭০, যা ‘খুব খারাপ’ পর্যায়ে পড়ে। দৃশ্যমানতা হ্রাস পাওয়ার কারণে দিল্লিগামী একাধিক বিমানের অভিমুখ বদলেছে। এই চিত্র অবশ্য প্রতি শীতেই দিল্লিতে দেখা যায়, অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে অন্তত জানুয়ারি পর্যন্ত। এই সময়ে শীতল তাপমাত্রা এবং বাতাসের ধীর গতির ফলে দূষিত কণা বাতাসে আটকে থাকে। বুধবার ভোরবেলা, শহরাঞ্চলের ৩০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের বসতি এলাকা জুড়ে দূষণের মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৮০৬ মাইক্রোগ্রাম ছাড়িয়ে গেছে। এমন কথাই জানিয়েছে আইকিউএয়ার।
দিল্লিতে বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়েই চলছে। পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, রাজধানীর বাতাসের গুণমান খুবই খারাপ। শহরের অনেকেরই এয়ার ফিল্টার ব্যবহারের ক্ষমতা নেই, আবার কারোর সে অর্থে মাথার তলার ছাদও নেই যে নিজেদেরকে বায়ু দূষণের এই বিষের থেকে রক্ষা করতে পারবে। ফলে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অকাল মৃত্যুতে ঢলে পড়ছে। বিশ্বব্যাপী এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ স্বল্পমেয়াদ অর্থাৎ কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের জন্য বায়ু দূষণের সূক্ষ্ম কণা পদার্থ বা পার্টিকুলেট ম্যাটার (PM2.5)- এর প্রভাবের কারণে প্রাণ হারায়। PM2.5 দূষণের কারণে সারা বিশ্বের মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি ঘটে পূর্ব এশিয়ায়। আইকিউএয়ার জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দৈনিক নির্দিষ্ট মানের থেকে ৫৩ গুণ বেশি সূক্ষ্ম কণা পদার্থ রয়েছে দিল্লির বাতাসে। এই পদার্থ বিপজ্জনক এবং ক্যান্সার-সৃষ্টিকারী যা ফুসফুসের মাধ্যমে রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে। সাধারণত বায়ু দূষণ দুপুর নাগাদ কম থাকে কিন্তু ওই দিন বিভিন্ন জেলায় দূষণের মাত্রা প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ গুণ বেশি ছিল। এই ধোঁয়ার মূল কারণ হল পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কৃষকদের চাষের জমি পরিষ্কারের জন্য আবর্জনা পোড়ানো, সেইসাথে কারখানা এবং যানবাহনের ধোঁয়া। ডব্লিউএইচও-র মতে বায়ু দূষণ স্ট্রোক, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের রোগের কারণ হতে পারে। গত মাসে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে প্রতিটি মানুষের পরিষ্কার বাতাসে শ্বাস নেওয়া একটি মৌলিক মানবাধিকার, তাই কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য-স্তরের কর্তৃপক্ষ উভয়কেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − two =