নতুন আবিষ্কৃত ম্যাজিক লণ্ঠন উদ্ভিদের এক প্রজাতি

নতুন আবিষ্কৃত ম্যাজিক লণ্ঠন উদ্ভিদের এক প্রজাতি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ এপ্রিল, ২০২৪

ফেয়ারি লণ্ঠন, বা থিসমিয়াসি প্রধানত গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে পাওয়া গেলেও উপক্রান্তীয় এবং নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেও পাওয়া যায়। থিসমিয়াতে একটা ছোট লণ্ঠনের মতো লাল-হলুদ ফুল ফোটে যার কান্ড বা পাতা দেখা যায় না। এই গাছ বনের মাটিতে পাতার নীচে গজায়। যেহেতু এতে কোনো ক্লোরোফিল থাকে না, পরিপূর্ণ উদ্ভিদে ক্লোরোফিলবিহীন ফুলের ডাঁটা সমেত ফুল এবং শিকড় থাকে। এই গাছ সবুজ নয় অর্থাৎ ক্লোরোফিল থাকে না ফলে সালোকসংশ্লেষ হয়না, তার বদলে এরা মাটিতে বসবাসকারী ছত্রাকের মাইসেলিয়াম থেকে পুষ্টি নেয়। এগুলো প্রায়শই পড়ে থাকা পাতার নীচে লুকিয়ে থাকে এবং শুধুমাত্র অল্প সময়ের জন্য মাটির উপরে ফুল উৎপন্ন করে যা দেখতে কাঁচের মতো। এরা খুব বিরল, তেমন এদের খুঁজে পাওয়াও বেশ কঠিন। বর্তমানে এদের ১০০ টা প্রজাতি শনাক্ত করা গেছে। কোবে ইউনিভার্সিটির উদ্ভিদবিজ্ঞানী সুয়েতসুগু কেনজি, নন-ফটোসিন্থেটিক উদ্ভিদের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি জার্নাল অফ প্ল্যান্ট রিসার্চে জানিয়েছেন, প্রচলিত ট্যাক্সোনমি ও আধুনিক আণবিক পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখা গেছে আবিষ্কৃত উদ্ভিদ Relictithismia kimotsukiensis, থিসমিয়াসি পরিবারের এক নতুন প্রজাতি।
তিনি জানিয়েছেন, রেলিটিথিসমিয়া উদ্ভিদ বিবর্তনের শুরুতেই নিজের পরিবার থেকে আলাদা হয়ে গেছে কিন্তু পারিবারিক বৈশিষ্ট্য রয়ে গেছে। এই নতুন প্রজাতির উদ্ভিদের পুংকেশর, গর্ভকেশরকে স্পর্শ করে থাকে, যাতে স্বপরাগায়ণ হতে সাহায্য হয়। এই অভিযোজন প্রজাতিকে সুবিধা দেয়, কারণ গভীর অরণ্যে গাছের পাতায় চাপা পড়ে থাকা এই গাছে পরাগায়নকারীরা সহজে পৌঁছোতে পারেনা। ছত্রাকের ওপর নির্ভরশীল এই উদ্ভিদ স্থানীয় অঞ্চলে সীমিত, এরা পরিবেশগত পরিবর্তনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই কারণে সুয়েতসুগু আরও গভীর গবেষণা করতে চাইছেন। তার ভবিষ্যত গবেষণার একটা অংশ হবে পরিবেশগত অধ্যয়ন, যার লক্ষ্য হবে রেলিটিথিসমিয়া এবং এর ছত্রাকের হোস্টগুলোর মধ্যে মিথস্ক্রিয়া বোঝা। তিনি জানিয়েছেন, জাপানে বোটানিকাল সার্ভে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত, এখানে নতুন উদ্ভিদ প্রজাতি আবিষ্কার অত্যন্ত বিরল। এর আগে শেষ নতুন প্রজাতির উদ্ভিদ জাপোনোলিরিওন প্রায় একশো বছর আগে ১৯৩০ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল। তাই তার ধারণা অন্যান্য কিছু নতুন প্রজাতি এমন অঞ্চলে লুকিয়ে থাকতে পারে যে স্থান আগে অধ্যয়ন করা হলেও হয়তো নতুন প্রজাতি আরও ভালো করে খুঁজলে পাওয়া যেতে পারে। তিনি দেশে এবং বিদেশে উদ্ভিদের অনুসন্ধানের গুরুত্বের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + 19 =