নতুন জাতের জাপানি আঙুর

নতুন জাতের জাপানি আঙুর

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

সম্প্রতি জাপানের ওকায়ামা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স -এর গবেষকরা তৈরি করেছেন এক নতুন জাতের আঙুর,নাম মাসকাট শিরাগাই। এটি শুধু স্বাদে মিষ্টি ও ঘ্রাণে মাতাল করা নয়, উপরন্তু জাপানের স্থানীয় প্রকৃতি ও কৃষ্টির গর্বের প্রতীক হয়ে উঠছে। এতে রয়েছে বন্য প্রজাতির অনন্য জিন বৈশিষ্ট্য, যা একে এককথায় স্বাদে,গন্ধে ও গুণে অতুলনীয় করে তুলেছে।
গবেষণা দলের নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমেরিটাস তাকুজি হোশিনো, যিনি উদ্ভিদের বর্গীকরণ বিশেষজ্ঞ। তিনি এই নতুন জাতের আঙুরটি তৈরি করেছিলেন দুটি আলাদা প্রজাতির সংকরায়ন ঘটিয়ে।
সংকরায়নের জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতি —
১) শিরাগা, এক বিরল প্রজাতির বন্য আঙুর যা কেবল ওকায়ামা প্রদেশের তাকাহাশি নদীর তীরে জন্মায় এবং ২) মাসকাট অব আলেকজান্দ্রিয়া, বিশ্বের অন্যতম সুগন্ধি আঙুর।
এই দুইয়ের সংকরায়নে তৈরি হয় মাসকাট শিরাগাই নামক নতুন জাতের আঙুর, যার মধ্যে আছে বন্য প্রকৃতির দৃঢ়তা আর মাসকাটের মিষ্টি সুবাস একসাথে ।
হোশিনো বলেন, তাঁরা এমন এক আঙুর তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যাতে প্রকৃতির নির্ভেজাল জিনটি লুকিয়ে থাকে। যদি এই জাতটি স্থানীয় পর্যায়ে চাষযোগ্য হয় এবং আঙুরের মদ তৈরি করে স্থানীয় পর্যটন ও অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করে, তবে সেটাই হবে সর্বোচ্চ সাফল্য।
২০১৮ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়, কুরাশিকি শহর এবং ফুনাও ওয়াইনারির মধ্যে এক চুক্তির মাধ্যমে এই প্রকল্পটির শুরু হয়। এটি ছিল জাতীয় পর্যায়ে অনুমোদিত এক আঞ্চলিক উন্নয়ন কর্মসূচির অংশ।এর লক্ষ্য ছিল স্থানীয় সম্পদের ব্র্যান্ডিং ও বাজারজাতকরণ।
বছরের পর বছর পরীক্ষা, স্বাদগ্রহণ ও বিশ্লেষণের পর ২০২৪ সালে মাসকাট শিরাগাই চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়। এতে চিনি, অম্লতা, pH এবং ঘ্রাণের নিখুঁত ভারসাম্য পাওয়া যায়।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধনের জন্য জমা দেওয়া হয়, এবং ২০২৫ সালের জুনে জাপানের কৃষি মন্ত্রণালয় (এম এ এফ এফ) আবেদনটি গ্রহণ করে। আগামী ৪–৫ বছরের মধ্যেই এটি সম্পূর্ণ অনুমোদিত জাত হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অতিথিরা এই নতুন আঙুর ও এর থেকে তৈরি ওয়াইন চেখে দেখেন। সবাই একবাক্যে বলেন ফলটি মিষ্টি ও অপূর্ব সুস্বাদু, আর ওয়াইনটি মোলায়েম স্বাদের, হালকা মাসকাট ঘ্রাণে ভরপুর।
আশা করা যায় কুরাশিকিতে উৎপন্ন এই অনন্য আঙুরের মদ স্থানীয় কৃষ্টি কে বিশ্বের দরবারে আরও পরিচিত করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট হিরোইউকি হিরানো বলেন, শিল্প, শিক্ষা ও প্রশাসনের সহযোগিতাই স্থানীয় উন্নয়নের চাবিকাঠি। এই প্রকল্প সেই দিকেই এক বড় পদক্ষেপ।
বর্তমানে ফুনাও ওয়াইনারি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাগানে রয়েছে ২০টি গাছ, যেগুলো থেকে ২০২৪ সালে ৪১.৬ কেজি ফলন পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে আরও ৩০০টি গাছ রোপণ করা হয়েছে, এবং লক্ষ্য ২০২৮–২০২৯ সালের মধ্যে ৫০০ কেজির বেশি ফলন। বিজ্ঞানীরা পাতাকাটা, সারপ্রয়োগ ও সেচের উন্নত কৌশলও ব্যবহার করছেন যাতে ফলের গুণগত মান আরও উন্নত হয়।
মাসকাট শিরাগাই কেবল এক নতুন জাতের আঙুরই নয়, এটি জাপানের স্থানীয় উদ্ভিদ ঐতিহ্য, বিজ্ঞান ও কৃষ্টির এক সুমিষ্ট সংমিশ্রণ।

সূত্র: “Sweet and Very Delicious” – Japanese Scientists Create New Variety of Grape by Okayama University of Science,(15.10.2025).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − two =