নতুন পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে রেফ্রিজারেশন

নতুন পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে রেফ্রিজারেশন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩১ জুলাই, ২০২৩

আমাদের জীবনে রেফ্রিজারেটরের গুরুত্ব অপরিসীম, দৈনন্দিন নানা জিনিস ঠান্ডা করার জন্য এর দরকার। কিন্তু এটা বিশেষ পরিবেশবান্ধব নয়। বিজ্ঞানীরা গ্রহের জন্য নিরাপদ এবং ভালো এক পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন, যা প্রচলিত পদ্ধতির বদলে নতুন উপায়ে তাপমাত্রা কমাবে। সাধারণ রেফ্রিজারেশন সিস্টেমের কার্যপদ্ধতি হল একটি গ্যাসের মাধ্যমে এক স্থান থেকে তাপ পরিবাহিত হয়, যা কিছু দূরে যাওয়ার সাথে সাথে প্রসারিত হয়ে শীতল হয়। এই প্রক্রিয়া ঠাণ্ডা হওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকরী হলেও, রেফ্রিজারেশন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত বাষ্প সংকোচন সিস্টেমে বিভিন্ন হাইড্রোফ্লুরোকার্বন (HFCs) গ্যাসের ব্যবহার পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর। গবেষকরা জানিয়েছেন, এছাড়াও কিছু উপায় আছে, যা একটি পদার্থকে তাপ শক্তি শোষণ এবং ত্যাগ করতে বাধ্য করবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি এবং ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে-এর গবেষকরা একটা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যেখানে তারা উপাদানের অবস্থা পরিবর্তনের সময় যে শক্তি সঞ্চয় বা নির্গত হয়, তাকে কাজে লাগিয়ে আয়োনোক্যালরিক কুলিং পদ্ধতিতে ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করছেন। যেমন কঠিন বরফ যখন তরল জলে পরিণত হয়, তখন বরফে তাপমাত্রা না বাড়লেও বরফ গলে যায়। কারণ যা গলনের সময় চারপাশ থেকে তাপ শোষিত হয়, ফলে চারপাশ ঠাণ্ডা থাকে। আয়োনোক্যালরিক কুলিং পদ্ধতিতে তাপ না বাড়িয়ে বরফ গলানোর জন্য এতে কিছু চার্জযুক্ত কণা বা আয়ন যোগ করা হয়। শীতপ্রধান দেশে বরফ গঠন রোধ করার জন্য রাস্তাতে লবণ দেওয়া হয়। একইভাবে আয়নোক্যালোরিক চক্রেও তরল অবস্থা পরিবর্তন করতে এবং তার চারপাশ ঠান্ডা রাখার জন্য লবণ ব্যবহার করা হয়।
গবেষকরা আয়নোক্যালোরিক চক্রের মডেল তৈরি করেছেন যাতে রেফ্রিজারেটরের বর্তমানে ব্যবহৃত রেফ্রিজারেন্টের কর্মদক্ষতা বাড়ানো যায়। এখানে সিস্টেমের মধ্য দিয়ে চলমান তড়িৎ পাঠিয়ে এর মধ্যে থাকা আয়নগুলিকে স্থানান্তরিত করা হয়, এতে উপাদানটির গলনাঙ্ক পরিবর্তিত হয়ে তাপমাত্রার পরিবর্তন হয়। গবেষকরা আয়োডিন এবং সোডিয়াম দিয়ে তৈরি লবণ ব্যবহার করে ইথিলিন কার্বনেট গলানোর জন্য এই পরীক্ষা করেন। এই জৈব দ্রাবক লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিতেও ব্যবহৃত হয় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করে এটা উৎপন্ন করা হয়। এটি সিস্টেমটিকে শুধুমাত্র GWP [গ্লোবাল ওয়ার্মিং পটেনশিয়াল] মুক্ত করবে না তাকে নেতিবাচক করে তুলতে পারে। পরীক্ষায় একক ভোল্টের কম চার্জ প্রয়োগ করে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৪৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রার পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে, যা অন্যান্য ক্যালরি প্রযুক্তির ব্যবহার করে যে তাপমাত্রা পরিবর্তন হয়েছে তার চেয়ে বেশি।
লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার রবি প্র্যাশার বলেছেন, রেফ্রিজারেশনের ক্ষেত্রে তিনটি জিনিসের ভারসাম্য তারা বজায় রাখার চেষ্টা করছেন – GWP, রেফ্রিজারেন্টের শক্তি দক্ষতা এবং সরঞ্জামের খরচ। তাদের এই গবেষণা সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one + eighteen =