হাইপারসোনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনেও সফল হলেন চিনের বিজ্ঞানীরা। আর তার ফলে চিনের সামনে খুলে গেল নতুন এক দিগন্ত। হাইপারসোনিক অস্ত্র তৈরি করার পাশাপাশি চিনের বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারদের পরিকল্পনায় এবার হাইপারসোনিক যাত্রী বিমানও চালু করা। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানমহল এবং রাজনৈতিক মহলের অনুমান হাইপারসোনিক প্রযুক্তির আসল সাফল্য হল, চিন এবার মহাকাশে হাইপারসোনিক প্রযুক্তির সহায়তায় মহাকাশেও পারমাণবিক অস্ত্র পাঠাবে যা অনেকবছর পর্যন্ত মহাকাশে পৃথিবীকে ঘিরে প্রদক্ষিণ করবে! আপাতত যাত্রী বিমানের ইঞ্জিন পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত চিনের বিজ্ঞানীরা এবং ইঞ্জিনিয়াররা। পরীক্ষায় পাস করে গেলে হাইপারসোনিক ফ্লাইটে চলার উপযোগী আরও নানারকমের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করতে সুবিধা হবে।
গত ২১ নভেম্বর গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত হয়েছিল, চিনের তৈরি করা এক মিটারের হাইপারসোনিক এরোডায়নামিক বায়ু সুড়ঙ্গ, যার নাম এফএল-৬৪, গুরুত্বপূর্ণ ক্যালিব্রেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। চিনের এভিয়েশন ইনডাস্ট্রি কর্পোরেশনের অধীনে থাকা এরোডায়নামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট বানিয়েছিল এই বায়ুসুড়ঙ্গটি। বায়ুসুড়ঙ্গ বানানোর মূল উদ্দেশ্য পরবর্তীকালে হাইপারসোনিক অস্ত্রসস্ত্র ও অন্যান্য হাইপারসোনিক যন্ত্রপাতি বানানো। বায়ুসুড়ঙ্গ তৈরি হওয়া মানেই ভবিষ্যতে যে কোনও হাইপারসোনিক যন্ত্রপাতির পরীক্ষানিরীক্ষা করতে পারা।
চিনের এই গবেষণা ও হাইপারসোনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সাফল্যের কথা গোপন থাকেনি। এমাসের শুরুতে, মার্কিন স্পেস এজেন্সির এক আধিকারিক (সলজম্যান তার নাম) ফাঁস করে দেন চিনের হাইপারসোনিক প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা এবং এর আসল উদ্দেশ্য। জানিয়ে দেন যে, হাইপারসোনিক প্রযুক্তিতে তৈরি অস্ত্রের তাৎপর্য যে, হাইপারসোনিক ক্ষেপনাস্ত্রকে ইচ্ছে করলে বহুবছর ধরে মহাকাশে পৃথিবীর কক্ষে রেখে দেওয়া যায়! সলজম্যান আরও ফাঁস করেন যে, এই প্রযুক্তি এমনই এক যুগান্তকারী প্রযুক্তি যার সহায়তায় চিন হাইপারসোনিক গ্লাইডার তৈরি করে তার মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধ পর্যন্ত শুরু করে দিতে পারে।
যে হাইপারসোনিক যাত্রী বিমানের ইঞ্জিন নিয়ে এই মুহুর্তে চিনের বিজ্ঞান সমাজে হৈ চৈ তার সম্পর্কেও সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট জানাল, যে ইঞ্জিন চিনের বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন বলে জাহির করছেন তার নকশা করেছিলেন ২০ বছর আগে চিনে জন্মানো এক মার্কিন বিজ্ঞানী মিন হান তাং এবং সেই নকশা বাতিল করেছিলো নাসা। হাইপারসোনিক এই বিমানের দু’পাশে রাখা হয়েছে দু’টো ইঞ্জিন। অন্য হাইপারসোনিক বিমানের পেটে থাকে ইঞ্জিন। মিং-এর ব্লু-প্রিন্টকে সামনে রেখেই ন্যাংজিং অ্যারোনেটিক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী তান হুইজুন ও তার সহযোগীরা তৈরি করছেন এই বিশেষ হাইপারসোনিক ইঞ্জিন। যার গতি হবে ঘন্টায় ১২ হাজার মাইল! ১০জন যাত্রী এই বিমানে একসঙ্গে চড়তে পারবে। পৃথিবীর যে কোনও স্থানে এই বিমানে চেপে সময় লাগবে মাত্র এক ঘন্টা!
কিন্তু শুধু যাত্রী নয়, অলৌকিক এই বিমান তৈরির ভাবনার পেছনেও থাকছে যুদ্ধ কীভাবে কত সহজে করা যায়! বলা হচ্ছে, অলৌকিক এই বিমান অনেক পরিমাণে হাইপারসোনিক অস্ত্র উৎপাদনের কাজটাও সহজ করে দেবে এবং খরচও কমে যাবে। বিজ্ঞানীরা আরও লক্ষ করেছেন হাইপারসোনিক প্রযুক্তিতে টাইটেনিয়াম অ্যালয় জাতীয় উপাদানও তৈরি করতে সুবিধে হচ্ছে।
তবে চিনের সেনাবাহিনী কিন্তু প্রথমে ভরসা করতে পারেনি হাইপারসোনিক প্রযুক্তি ও বিমানের ওপর। তার একটা কারণ ছিল। ইঞ্জিন তৈরির সময় এত পরিমাণে বায়ুদূষণ হয়েছে, এত সময় লেগেছে যে সেনাবাহিনী মনে করেছিল এই প্রযুক্তিতে তৈরি উপাদান শক্তিশালী হবে না।
এখন অবশ্য সব অবিশ্বাসের সমাপ্তি! এক ধাপ এগিয়ে সরকার ভাবছে হাইপারসোনিক প্রযুক্তিতে নাগরিকদের সুবিধার্থে আগামীদিনে কিছু করা যায় কী না!