নব অবতারে শ্রোয়েডিঙ্গারের বিড়াল

নব অবতারে শ্রোয়েডিঙ্গারের বিড়াল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ এপ্রিল, ২০২৫

এরভিন শ্রোয়েডিঙ্গার ছিলেন কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের প্রধান প্রবর্তকদের একজন। তাঁরই নামে প্রসিদ্ধ ‘শ্রোয়েডিঙ্গারের বিড়াল’ একটি কাল্পনিক পরীক্ষার নাম। এই কাল্পনিক কোয়ান্টাম দশায় একটি বিড়াল একই সঙ্গে জীবিত কিংবা মৃত দুই অবস্থাতেই বিরাজ করতে পারে। কার্যক্ষেত্রে এর নিদর্শন দেখা গেছে তড়িৎচুম্বক রেজোনেটরের আন্দোলন বা অসিলেশনে পরমাণু আর অণুর যুগপৎ অবস্থানে। এইসব কোয়ান্টাম দশাগুলিকে খুবই সাবধানে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় তৈরি ও পর্যবেক্ষণ করতে হয়। ‘উত্তপ্ত শ্রোয়েডিঙ্গার মার্জার দশা’ ওইরকমই একটি দশা। তাপমাত্রা বাড়লে ওই দশা আর টিকবে না, এটাই এতদিন জানা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি অস্ট্রিয়ার ইন্‌স্‌ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এক অসাধ্য সাধন করেছেন। তাঁরা একটি অতি-পরিবাহী মাইক্রো-রেজোনেটরের সাহায্যে অপেক্ষাকৃত কম ঠান্ডা অবস্থাতেই ওই দশা সৃষ্টি করতে পেরেছেন। সায়েন্স অ্যাডভান্সেস পত্রিকায় প্রকাশিত এই গবেষণার বিবরণ থেকে জানা গেছে, কম নিখুঁত এবং কিছুটা উষ্ণ পরিবেশেও কোয়ান্টাম পরিঘটনা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। এতদিন শ্রোয়েডিঙ্গারের বিড়াল-সদৃশ দশাগুলি তৈরি করবার জন্য প্রথমে কোয়ান্টাম বস্তুটিকে ঠাণ্ডা করে একেবারে তার ভিত্তি-দশায় নামিয়ে আনতে হত, যেখানে তার শক্তিমাত্রা সবচেয়ে কম থাকার সম্ভাবনা। কিন্তু এবার গের্হার্ড কির্চমায়ার এবং ওরিওল রোমেরো-আইসার্ট-এর পরিচালনায় গবেষকরা প্রথম দেখাতে পারলেন যে তাপ-উদ্দীপিত দশাতেও কোয়ান্টাম সুপারপোজিশন ঘটানো সম্ভব। কোয়ান্টাম সুপারপোজিশন হল সেই দশা যা যতক্ষণ না মাপা হচ্ছে ততক্ষণ একই সময়ে বিভিন্ন দশায় বিরাজ করতে পারে। গের্হার্ড বলেছেন, শ্রোয়েডিঙ্গার যে-বিড়ালটির কথা কল্পনা করেছিলেন, সে-ও তো একটি গরম জিনিসই! এই গবেষণায় তাঁরা একটি মাইক্রোওয়েভ রেজোনেটরের মধ্যে বিশেষ ধরণের ‘কোয়ান্টাম কিউবিট’ রেখে বিভিন্ন মার্জার-সদৃশ দশা উৎপন্ন করেছেন। সাধারণ কম্পিউটারের যেমন ‘বিট’, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের তেমনি ‘কিউবিট’। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের একাধিক দশায় বিরাজ করতে সক্ষম বিটকে বলে ‘ কোয়ান্টাম কিউবিট’। এই পরীক্ষাটি করেছেন সহ-গবেষক ইয়াং। তাঁর কথায়, এ থেকে প্রমাণ হল যে সুনির্দিষ্ট কোয়ান্টাম ধর্মযুক্ত খুবই মিশ্র ধরণের কোয়ান্টাম দশা উৎপন্ন করা সম্ভব। এ জন্য গবেষকরা আগের তুলনায় স্বতন্ত্র কিছু নিয়মকানুন প্রবর্তন করেছেন। এর ফলে ন্যানো-যান্ত্রিক দোলক (অসিলেটর) প্রভৃতি দুরূহ প্রযুক্তিগত ক্রিয়া সহজ হয়ে যাবে। তাত্ত্বিক গবেষক টমাস আগ্রেনিয়াস বলেছেন, আগে জানা ছিল, তাপমাত্রা বাড়লে কোয়ান্টাম ক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এখন প্রমাণিত হল যে উচ্চ তাপমাত্রাতেও কোয়ান্টাম ব্যতিচার (ইন্টারফিয়ারেন্স) টিকে থাকতে পারে। কোয়ান্টাম ব্যতিচার হল সেই ক্রিয়া যার দৌলতে হরেক রকমের রাসায়নিক গাঁটছড়া গড়ে উঠতে পারে। ফলে একটা সিস্টেমের মধ্যে ঠিকমতো আন্তঃক্রিয়া তৈরি করতে পারলে শেষ পর্যন্ত তাপমাত্রাটা এখন আর বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। এর ফলে কোয়ান্টাম প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি ঘটবে।
সূত্র: University of Innsbruck. “Hot Schrödinger cat states created.” ScienceDaily. ScienceDaily, 4 April 2025.

http://<www.sciencedaily.com/releases/2025/04/250404140611.htm>.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × three =