নরম খাবার, দুর্বল চোয়াল

নরম খাবার, দুর্বল চোয়াল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ জানুয়ারী, ২০২৫

হাত আর দাঁতে করে ভাঙ্গা শক্ত বাদাম ছেড়ে, লাল কাঠবিড়ালি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে ভক্তদের আনা নরম চিনাবাদামের উপর। অনেক বেশি নরম চিনাবাদাম খেয়ে, তাদের চোয়াল তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়ছে। বদলে যাচ্ছে খুলির গঠন। এমনটাই জানাচ্ছেন, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অ্যানাটমিস্ট অ্যাস ফিল কক্স।

মূলত উত্তর ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড, ওয়েলসের কিছু জায়গায় এবং কয়েকটি জনবিরল দ্বীপে এই লাল লোমশ কাঠবিড়ালি পাওয়া যায়। এরা সাধারণত খাবারের জন্য পাইন বাদাম, হ্যাজেলনাট, চেস্টনাট, অ্যাকর্ন এবং ইয়ুর উপর নির্ভর করে। তবে গ্রেট ব্রিটেনে এদের অনেক ভক্ত রয়েছে। তারাই এদের চিনাবাদাম, হাতে করে খাওয়াতে ভালোবাসেন। কাঠবিড়ালিদের কাছে, পাইন নাট বা হ্যাজেলনাট এর থেকেও সাজানো চিনাবাদাম খাওয়া অনেক সহজ।
১৯৯০ সাল থেকে ২০১০ এর শেষের দিক অবধি প্রায় ২০ বছর ধরে লক্ষ্য করে দেখা গেছে, এই কাঠবিড়ালিরা তাদের খাবারের ৫০ শতাংশই সংরক্ষণকারী এবং প্রিয় পর্যটকদের কাছ থেকে পেয়েছে। সবটাই চিনাবাদাম। অন্যদিকে ২০১০ সালের পর থেকে সংরক্ষণকারীদের এই বিষয়ে অবগত করানো হয়। তারপর থেকেই তারা কাঠবিড়ালিগুলিকে চিনাবাদাম কম দিতে শুরু করে।

লাল কাঠবিড়ালি ((Sciurus vulgaris) সংরক্ষিত প্রজাতির। তাই এদের খাবারের ধরণ নিয়ে বিশেষ আগ্রহী বিজ্ঞানীরা। সংরক্ষণকারীরা মৃত কাঠবিড়ালি খুঁজে পেলেই, এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করে। গবেষণার জন্য নমুনা হিসাবে দলটি ১৯৯০-২০১০ সালের এবং বর্তমানের মোট ১১৩টি মাথার খুলি এবং ৩৮৭ টি চোয়ালের আকৃতি বিশ্লেষণ করেছে, তাদের কামড়ের শক্তি পরিমাপ করার জন্য। লক্ষ্য করা যায়, স্কটল্যান্ডের মাথার খুলির চেয়ে ইংল্যান্ডের কাঠবিড়ালিগুলির মাথার খুলি চাটুকার, এমনকি এদের চোয়ালে জয়েন্টের কাছাকাছি পেশী সংযুক্ত। আর উভয় বৈশিষ্ট্যই তাদের কামড়, কম কার্যকর বলে নির্দেশ করে। অন্যদিকে ২০১০ সালের পরের কাঠবিড়লিগুলির খুলীর আকার স্বাভাবিক দেখাচ্ছে। তবে চোয়াল সবল হতে সময় লাগবে।
দুর্বল চোয়াল গঠনের ঘটনা, হালের। গবেষক কক্স এর মতে, দুর্বল চোয়াল তাদের এই নরম খাবার খাওয়ার অভ্যাসের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তিনি বলছেন, “আমরা জানি হাড়ের গঠন তার যান্ত্রিক ক্ষমতার কম বেশি ব্যবহারের উপর নির্ভর করে পালটাতে পারে”।

এটাই প্রমাণ যে, মানুষের ভালোবেসে খাওয়ানো খাবার বন্য প্রাণীদের মধ্যে পরিবর্তন ঘটাতে পারে। যা অনেকসময় তাদের অনুকূলে নাও হতে পারে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকারীদের, শুধুমাত্র প্রাণীদের পুষ্টির কথা ভাবলেই চলবে না। খাবারের অভ্যাস বা তাদের খাবার দেওয়ার বিষয়ে কঠোরতা আনতে হবে।