নিরাপদ, দীর্ঘায়ু লিথিয়াম ব্যাটারি

নিরাপদ, দীর্ঘায়ু লিথিয়াম ব্যাটারি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ জানুয়ারী, ২০২৫

দক্ষিণ কোরিয়ার চারটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি হল ডিজিআইএসটি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি ও পরিবেশ প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান গবেষক কিম জায়-হিয়ুন-এর পরিচালনায় একটি গবেষক দল লিথিয়াম ধাতুর এক নতুন ধরনের ব্যাটারি তৈরি করেছেন। এতে ‘ত্রিস্তর কঠিন পলিমার ইলেক্ট্রোলাইট’ নামক প্রযুক্তি ব্যবহার করা করা হয়েছে। এর ফলে আগুন লাগার বিপদ অনেক কমেছে, ব্যাটারির আয়ুও বেড়েছে। প্রচলিত পলিমার ইলেক্ট্রোলাইট ব্যাটারিগুলো যথেষ্ট ভালো চলে না এইজন্য যে তাদের গড়নের মধ্যে ত্রুটি আছে, যার ফলে তারা উপযুক্ত মাত্রায় ইলেক্ট্রোডের সংস্পর্শে আসতে পারে না। তাছাড়া বারবার রিচার্জ আর চার্জ-ছাড়া করতে করতে লিথিয়ামে গাছের শাখাপ্রশাখার মতো কাঠামো গজায়; প্রচলিত প্রযুক্তি সেটাকেও ঠেকাতে পারে না । এইভাবে শাখাপ্রশাখাওয়ালা কাঠামো একটা মস্ত সমস্যা। কারণ এলোমেলোভাবে গজিয়ে-ওঠা লিথিয়ামের এই কাঠামো ব্যাটারির সংযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, আগুনও ধরাতে পারে, ফেটেও যেতে পারে। এই সমস্যার সমাধানেই গবেষক দল ওই ত্রিস্তর কাঠামো বানিয়েছেন। প্রতিটি স্তরের আছে নিজস্ব ভূমিকা, যা ব্যাটারির নিরাপত্তা আর কার্যকারিতা রীতিমতো বাড়িয়ে তোলে। এই ইলেক্ট্রোলাইটে আছে ডেকা-ব্রোমো-ডিফিনাইল নামে এক রাসায়নিক পদার্থ, যা আগুন রোধ করে। এতে আছে জিওলাইট, যা ইলেক্ট্রোলাইটের শক্তি বাড়ায়। আর আছে একটি বিশেষ লিথিয়াম লবণের কড়া দ্রবণ, যা লিথিয়াম আয়নের চলাচলের গতি বাড়িয়ে তোলে। এই ত্রিস্তর কঠিন ইলেক্ট্রোলাইটের মধ্যবর্তী স্তরটি বেশ শক্তপোক্ত, যা ব্যাটারির যান্ত্রিক শক্তি বাড়িয়ে দেয়। অপর দিকে এর বাইরের দিকের নরম স্তরটি ইলেক্ট্রোডগুলির সঙ্গে চমৎকার সংস্পর্শ তৈরি করে, যা আবার লিথিয়াম আয়নের চলাচলকে স্বচ্ছন্দ করে। সব মিলিয়ে শক্তি স্থানান্তরণের হার জোরালো হয় এবং গাছপালার মতো শাখাপ্রশাখাওয়ালা কাঠামো গজানো বন্ধ হয়। এই পরীক্ষা থেকে দেখা গেছে, ১০০০ বার চার্জ করা এবং চার্জ-ছাড়ানোর চক্রর পরও এই ব্যাটারির ৮৭.৯ % কার্যদক্ষতা বজায় থাকে। প্রচলিত ব্যাটারিগুলোতে এটা ৭০-৮০%-র ওপরে ওঠে না। স্মার্ট ফোন থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ি আর বৃহৎ শক্তি-সঞ্চয় সিস্টেমগুলিতে এই ব্যাটারি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হবে বলে আশা করা যায়। ড. কিম জায়-হিয়ুন ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়ার হানইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধাপক লি জুং-হো এই গবেষণায় সহায়তা করেছেন। প্রসিদ্ধ প্রকাশক ওয়াইলি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক মর্যাদাসম্পন্ন পত্রিকা ‘স্মল’-এ এটি প্রধান প্রবন্ধ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − 5 =