
সাধারণত মেয়েদের আয়ু ছেলেদের চেয়ে বেশি। শুধু তাই নয়, তাদের বোধবুদ্ধিগত সামর্থ্যও ছেলেদের তুলনায় অনেক দিন বজায় থাকে। এর কারণ কী? স্ত্রী-দেহের দুটি এক্স-ক্রোমোসোমের মধ্যে একটি নীরবে পড়ে থাকে কোষের এক কোণে। এতদিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল ওটা কোনো কর্মের নয়। কিন্তু ডেনা ডুবাল আর ডেভিড কুলটার-এর নেতৃত্বে একটি গবেষণাদল ইঁদুরদের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন বৃদ্ধ বয়সে ওই তথাকথিত ‘নীরব’ দ্বিতীয় এক্স-টি মুখর হয়ে উঠে এমন সব জিনকে ব্যক্ত করতে আরম্ভ করে যারা মস্তিষ্কের সংযোগগুলিকে জোরালো করে তোলে। ফলে বোধবুদ্ধি বৃদ্ধি পায়। ডুবাল বলেছেন, বয়স বাড়ার প্রক্রিয়ায় মেয়ে-ইঁদুরের মস্তিষ্কর চেহারা খুব বুড়োটে হয় না, ছেলেদের তুলনায় তাদের মস্তিষ্কর বোধবুদ্ধির ঘাটতিও কম হয়।
‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ পত্রিকার ৫ মার্চ সংখ্যায় তিনি লিখেছেন, এইসব ফল থেকে দেখা যাচ্ছে স্ত্রী-দেহে উপস্থিত ওই নীরব এক্স ক্রোমোসোমটি হয়তো বয়সকালেই পুনর্জাগরিত হয়ে উঠে মেয়েদের বোধবুদ্ধির অবক্ষয়ের প্রক্রিয়াটিকে শ্লথ করে দেয়। কোন কোন জিন এ ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে, সেটা জানবার জন্য ডুবাল জেনোমিক্স বিশেষজ্ঞ বিজয় রমণীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ল্যাবরেটরিতে এক সংকর জাতির ইঁদুর তৈরি করে কৌশলে তার দুটি এক্স-এর মধ্যে একটিকে নীরব করে দিলেন। দুটি প্রজাতির ইঁদুরেরই জেনেটিক সংকেতটা তাঁদের জানা, কাজেই কোনো একটা জিন পরিস্ফুট বা ব্যক্ত হলে সেটা কোন এক্স ক্রোমোসোম থেকে আসছে তা বুঝতে তাঁদের কোনো অসুবিধা হল না। এইবার তাঁরা বিশ মাস বয়সী মেয়ে ইঁদুরের মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অঞ্চলের মধ্যে ব্যক্ত জিনগুলি পরিমাপ করলেন। কারণ হিপোক্যাম্পাসই হল মস্তিষ্কের সেই অঞ্চল যেখানে শেখার আর স্মৃতির প্রক্রিয়াগুলো চলে। বয়সে সেটাই শুকিয়ে যায়। বিশ মাসের মেয়ে ইঁদুর সমান ৬৫ বছরের বৃদ্ধা নারী। দেখা গেল, এক্স-ক্রোমোসোমটি খানবিশেক জিনকে ব্যক্ত করল! মস্তিষ্কের বিকাশে আর বৌদ্ধিক অবক্ষয়ের প্রক্রিয়ায় সেইসব জিনের মধ্যে অনেকের ভূমিকা আছে। নীরব এক্স ক্রোমোসোমের কারাগার ভেঙে বেরিয়ে আসা বাইশখানা জিনের মধ্যে একখানা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এর নাম PLP1. সংকেত পরিবাহী স্নায়ুতন্তুগুলিকে রক্ষা করবার জন্য আচ্ছাদন গড়ে তোলা এর কাজ। দেখা গেল, বৃদ্ধ ইঁদুরের তুলনায় বৃদ্ধা ইঁদুরের হিপোক্যাম্পাসে এই PLP1 জিনের আধিক্য রয়েছে। এই PLP1 জিনই স্ত্রী-ইঁদুরের মস্তিষ্ককে বয়সের ধকলের মুখে সজীব রাখে কিনা তা পরখ করবার জন্য গবেষকরা এবার কৃত্রিমভাবে ব্যক্ত PLP1 জিনটিকে বৃদ্ধা ইঁদুর আর বৃদ্ধ ইঁদুরের হিপোক্যাম্পাসে ঢুকিয়ে দিলেন। দেখা গেল দুজনের মস্তিষ্কই এর ফলে বেশ চাঙ্গা হল। শেখা এবং স্মৃতি দুই পরীক্ষাতেই অনেক ভালো ফল করল। পরের ধাপে বৃদ্ধা নারী-দেহ থেকে সংগৃহীত মস্তিষ্ককলা বিশ্লেষণ করে দেখা গেল একমাত্র নারীদেহেই ওই PLP1 জিনটি বর্ধিত মাত্রায় উপস্থিত থাকে। ডুবাল বলেছেন, এক্স ক্রোমোসোমের এই PLP1 জিনের সংখ্যা বাড়িয়ে তোলার মতো কৌশল যদি আয়ত্ত করা যায় তাহলে বয়স বাড়ার সঙ্গে পুরুষ নারী উভয়েরই বোধবুদ্ধির অবক্ষয় কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
সূত্র : Posted in: Genomics | Medical Science News | Medical Research News | Women’s Health News