নীলকান্তমণি… সবচেয়ে মূল্যবান রত্নের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু জানেন কী এটি শুধুমাত্র রাসায়নিকভাবে “দূষিত” অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড বা কোরান্ডাম দ্বারা গঠিত। বিশ্বব্যাপী, এই নীল রঙের পাথর প্রধানত কম মাত্রার সিলিকন দিয়ে গঠিত আগ্নেয় শিলায় দেখতে পাওয়া যায়। রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে, হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটির ভূ-বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে মিলিমিটার আকারের নীলকান্তমণির কণা জার্মানির আইফেল অঞ্চলে আগ্নেয়গিরি থেকে গঠিত। আইফেল ইউরোপের কেন্দ্রে একটি আগ্নেয়গিরি অঞ্চল। সেখানে প্রায় ৭০০,০০০ বছর ধরে পৃথিবীর ম্যান্টেল থেকে ম্যাগমা ভূত্বকে প্রবেশ করছে। এই ম্যাগমায় সিলিকন-ডাইঅক্সাইড কম পরিমাণে থাকলেও তা কিন্তু সোডিয়াম ও পটাসিয়াম সমৃদ্ধ। সারা বিশ্বে এই ধরনের ম্যাগমা নীলকান্তমণি বা নীল স্যাফায়ারের প্রাচুর্যের জন্য পরিচিত। তবে কোরান্ডামের এই অত্যন্ত বিরল রূপটি কেন এই ধরনের আগ্নেয়গিরির অঞ্চলে জমা পাথরের মধ্যে পাওয়া যায় তা এখন পর্যন্ত একটি রহস্য। গবেষকরা ব্যাখ্যা করেছেন যে পৃথিবীর অভ্যন্তরে নীলকান্তমণি উচ্চ তাপমাত্রা এবং চাপের ফলে কাদামাটি পলল থেকে উদ্ভূত হয়। আগ্নেয়গিরি থেকে উৎপন্ন ম্যাগমা বাহকের কাজ করে সেই কেলাসগুলো পৃথিবী পৃষ্ঠে নিয়ে আসে।
তবে বেশিরভাগ নীলকান্তমণি নদীর পলির মাধ্যমে আসে। অন্যান্য খনিজের তুলনায় সোনার মতোই নীলাও কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে কণাগুলো শিলা থেকে বেরিয়ে এসে নদীতে জমা হয়। তাদের উচ্চ ঘনত্বের কারণে, তারা সহজে হালকা পলি উপাদান থেকে আলাদা করা যায়। গবেষকরা একটি সেকেন্ডারি আয়ন মাস স্পেকট্রোমিটার ব্যবহার করে নীলা কত পুরানো তা নির্ধারণ করেছেন। এবং এর অক্সিজেন আইসোটোপের গঠনও শনাক্ত করেছেন। গবেষকরা দেখেন আইফেলের নীলকান্তমণি ও সেখানকার আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত প্রায় একই সময়ে ঘটে। গবেষণাটি কন্ট্রিবিউশন টু মিনারোলজি অ্যান্ড পেট্রোলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে ।