পতঙ্গের অনুকরণে তৈরি হল মাইক্রো রোবট

পতঙ্গের অনুকরণে তৈরি হল মাইক্রো রোবট

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২৫ জানুয়ারী, ২০২৪

বিজ্ঞানীরা প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন কীটপতঙ্গ পর্যবেক্ষণ করে, তাদের কলা কৌশল ব্যবহার করে নতুন জিনিস আবিষ্কারে কাজে লাগান। এই ভাবে ছারপোকার মতো মিনি-বাগ আর জলের ওপরে হাঁটতে সক্ষম ওয়াটার স্ট্রাইডার এই দুটো ছোটো পোকার অনুকরণে ছোটো মাইক্রোরোবট তৈরি করেছেন। এখনও অবধি সবচেয়ে হালকা, ছোটো আর দ্রুততম এই কার্যকরী মাইক্রো-রোবট ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে তৈরি করা হয়েছে। এই রোবট নানা কাজে লাগানো যায় যেমন কৃত্রিম পরাগায়ন, কোনো কিছু অনুসন্ধানে এবং উদ্ধারে, পরিবেশ পর্যবেক্ষণে, মাইক্রো-ফ্যাব্রিকেশন বা রোবোটিক-সহায়ক সার্জারিতে। মাইক্রোফ্যাব্রিকেশন হল মাইক্রোমিটার স্কেল এবং ছোট আকারের ক্ষুদ্র কাঠামো তৈরির প্রক্রিয়া। আইইইই রোবোটিক্স অ্যান্ড অটোমেশন সোসাইটির ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন ইন্টেলিজেন্ট রোবট অ্যান্ড সিস্টেমস, তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মিনি-বাগের ওজন আট মিলিগ্রাম এবং ওয়াটার স্ট্রাইডারের ওজন পঞ্চান্ন মিলিগ্রাম। উভয়ই সেকেন্ডে প্রায় ছয় মিলিমিটার গতিতে চলতে পারে। তবে এই ক্ষুদ্র রোবোট কিন্তু ছোটো জীবিত প্রাণীর মতো দ্রুত গতিতে চলতে পারে না, দেখা যায় একটা পাঁচ মিলিগ্রাম পিঁপড়ে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় এক মিটার গতিতে চলতে পারে। আবার ওয়াটার স্ট্রাইডার তাদের পা দিয়ে জলে দাঁড়ের মতো সাঁতার কাটতে পারে, যা তাদের গতি বাড়াতে সাহায্য করে, কিন্তু এই সুবিধা রোবটে পাওয়া যায় না।
ক্ষুদ্র রোবটের চাবিকাঠি হল তাদের ক্ষুদ্র অ্যাকচুয়েটর যা রোবটকে নড়াচড়া করায়। এখানে অ্যাকচুয়েটরকে এক মিলিগ্রামেরও কম মাপে করা হয়েছে, যা এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে ছোটো অ্যাকচুয়েটর। অ্যাকচুয়েটরে মেমরি অ্যালয় নামে একটা উপাদান ব্যবহার করা হয় যা উত্তপ্ত হলে আকার পরিবর্তন করতে পারে। এটাকে ‘শেপ মেমরি’ বলা হয় কারণ এটা মনে রেখে তার আসল আকারে ফিরে আসতে পারে। সাধারণ মোটর যা রোবটকে নড়াচড়া করাতে পারে তাদের চলমান অংশ বা স্পিনিং উপাদান থাকে, যা এই সংকর ধাতুগুলির নেই। অল্প পরিমাণ তড়িতের সাহায্যে, অ্যাকচুয়েটরের তারগুলোকে উত্তপ্ত করা যায় এবং সহজেই ঠান্ডা করা যায়, যা রোবটগুলিকে তাদের পাখনা মেলতে বা প্রতি সেকেন্ডে ৪০ বার পর্যন্ত তাদের পা নাড়াতে দেয়। প্রাথমিক পরীক্ষায়, অ্যাকচুয়েটর তার নিজের ওজন ১৫০ গুণ বেশি ওজন তুলতে সক্ষম হয়েছিল। গবেষকরা ওয়াটার স্ট্রাইডারের অনুকরণে এমন রোবট তৈরির পরিকল্পনা করছেন, যা জলের ওপরে নীচে দু জায়গাতেই কাজ করতে সক্ষম। আর ব্যাটারি বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে একে চালানো যাবে, এগুলো স্বনিয়ন্ত্রিত হবে।