পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক, যা মাটিতে মিশে যায়

পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক, যা মাটিতে মিশে যায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ আগষ্ট, ২০২৩

এমন একটা প্লাস্টিকের কথা ভাবুন যা সাধারণ প্লাস্টিকের চেয়ে শক্ত, দাহ্য নয়, এমনকি এটা নিজেই নিজের ক্ষতি মেরামত করতে পারে। এটা ঘরের সাধারণ তাপমাত্রায় জল ব্যবহার করে উত্পাদন করা যায়, ফলে খুব বেশি শক্তি এবং টক্সিক দ্রাবকের প্রয়োজন হয় আবার শক্ত হওয়ার আগে, আপনি প্লাস্টিকটাকে নিজের ইচ্ছামতো যে কোনও আকার দিতে পারেন। আবার জল যোগ করে, নএই প্লাস্টিককে যে কোনও সময় তার আগের আকারে রূপান্তরিত করা যায়, পরে নিজের ইচ্ছামত আবার আকার দিয়ে পুনর্ব্যবহার করা যায়। ২০১৬ সালে, কনস্ট্যানজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ হেলমুট কোলফেনের গবেষণা দল ঠিক এমন একটা অভূতপূর্ব খনিজ প্লাস্টিক উপাদান উপস্থাপন করেছিলেন। কিন্তু তিনি নিজেই তা খারিজ করে দিয়েছিলেন, কারন তা পরিবেশের সাথে জৈব পদ্ধতিতে মিশতঁ না।
স্মল মেথডস জার্নালে তিনি জানিয়েছেন আগে, তারা খনিজ প্লাস্টিক তৈরি করতে পলিঅ্যাক্রিলিক অ্যাসিড ব্যবহার করেছিলেন। রাসায়নিকভাবে, এই অ্যাসিডের পলিথিনের মতোই কাঠামো, ফলে তা জৈব পদ্ধতিতে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়না। এতে প্লাস্টিকের মতোই পরিবেশে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে। তার নেতৃত্বে গবেষণা দল পরিবেশবান্ধব খনিজ প্লাস্টিক তৈরির জন্য একটি বিকল্প মৌলিক বিল্ডিং ব্লকের সন্ধান করছিলেন, যেখানে এই ধরনের আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যগুলোও বজায় থাকবে। তাদের বর্তমান প্রকাশনায়, এই রসায়নবিদরা জানিয়েছেন, পলিঅ্যাক্রিলিক অ্যাসিডের মতো পেট্রোলিয়াম-ভিত্তিক উপাদানের পরিবর্তে, তারা এখন পলিগ্লুটামিক অ্যাসিড ব্যবহার করে সাফল্য পেয়েছেন। এটি প্রাকৃতিক বায়োপলিমার, যা সহজেই প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, এটি অণুজীব ব্যবহার করে জৈবপ্রযুক্তিগতভাবে উত্পাদন করা যায়। পরিবেশে বিদ্যমান বিভিন্ন অণুজীব পলিগ্লুটামিক অ্যাসিডকে ক্ষয়ও করতে পারে।
তিনি তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানীদের সাহায্য এই প্লাস্টিকের জৈবিক ভাবে ক্ষয় প্রমাণ করে দেখান। কনস্ট্যানজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের ডেভিড শ্লেহেক এবং পোস্টডক হ্যারি লার্নার পরীক্ষায় দেখান যে বনের মাটিতে বিদ্যমান অণুজীবগুলো, কয়েক দিনের মধ্যে এই খনিজ প্লাস্টিক বিপাক করা শুরু করে। মাত্র ৩২ দিনে, অণুজীবগুলো প্লাস্টিকটাকে সম্পূর্ণ নষ্ট করে ফেলেছিল। অতএব গবেষকদের বানানো খনিজ প্লাস্টিকে সমস্ত ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য আছে, আশা করা যায় এটি ভবিষ্যতে প্লাস্টিক ব্যবহারের ফলে দূষণ ছড়ানো বন্ধ করতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 + 8 =