মানুষ যা প্রকাশ করে তাতে রয়েই যায় তার চিন্তা-ভাবনার ছাপ। তেমনই জাতি-বর্ণবিদ্বেষী সমাজমনের ছাপ পশু-পাখির নামকরণেও থাকবে -এ আর আশ্চর্য কি! তবে আশার কথা এই ধরণের নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।
যেমন দক্ষিণ মার্কিন অঞ্চলের পাখি স্কট ওরিল। স্কট নামটি বহন করছে ভয়ানক হিংস্রতার স্মৃতি। উইনফিল্ড স্কট একজন আমেরিকান সৈন্য। আঠেরো শতকে আদিম আমেরিকান অধিবাসী ‘চিরোক’দের হত্যা ও দেশত্যাগে ভূমিকা রাখেন তিনি। তার নামানুসারেই স্কট নামটি দেওয়া। এরকম বিদ্বেষী ঐতিহ্যবহনকারী পশুপাখি পতঙ্গের নাম পরিবর্তন করে ইএসএ বা এন্টোমলজিকাল সোসাইটি অফ আমেরিকা। উদাহরণ স্বরূপ- লিমান্ট্রিয়া ডিস্পার ও অ্যাফআনোগেস্টার আরানিওডেস এই দুই বিজ্ঞানসম্মত নামের পতঙ্গই ‘জিপসি’ নামে পরিচিত চলতি জুলাই মাসে ‘জিপসি’ নামের পতঙ্গের সাধারণ নাম বদলাতে চলেছে ‘ইএসএ’। জিপসি নামটি রোমানীয় জনগণের অপমানসূচক একটি শব্দ। ইএসএ-র প্রেসিডেন্ট জেসিকা ওয়ারে সাধারণ মানুষের কাছে ‘নাম’ আহ্বান করেছেন। মাঝের এই সময়টাতে বিজ্ঞানসম্মত নামেই পতঙ্গটি চিহ্নিত হবে। ইএসএ বিদ্বেষমূলক সংবেদনশীল নামগুলি পরিবর্তনের জন্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যার নাম “বেটার কমন নেম প্রোজেক্ট”। চলতি মাসে ‘ইএসএ’ প্রায় ৮০টি সংবেদনশীল নাম চিহ্নিত করেছে। তার মধ্যে আছে বিছে, মাছ, পাখি যাদের ‘হটেনটট’ শব্দবন্ধ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। হটেনটট শব্দবন্ধটি প্রকৃতপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার ‘খইখই’ জনজাতির মানুষের অপমানজনক শব্দবন্ধ। আবার ‘ডিগার পাইন ট্রি’ আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলের পাইউট জনজাতির বিদ্বেষসূচক ইতিহাস বহন করছে।
দেখা যায় বিজ্ঞানসম্মত নাম এবং সাধারণ নাম দুই ধরণের নামের সঙ্গেই বিদ্বেষের ঐতিহ্য জুড়ে থাকতে পারে। তবে সাধারণ নামের ক্ষেত্রে বিদ্বেষ ঐতিহ্য বেশি। কেননা বিজ্ঞানসম্মত নামগুলি ল্যাটিন বুৎপত্তি অনুসারে দেওয়া। তাছাড়াও বিজ্ঞানসম্মত নাম বদলের সমস্যা কম, কেননা সেগুলির আন্তর্জাতিক মান্যায়ন রয়েছে। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মার্গারেটা মাতাচে বলেন, বিদ্বেষমূলক নাম পরিবর্তনের প্রচেষ্টা ক্ষুদ্র হলেও এর ঐতিহাসিক মূল্য অনেক।