
সাধারণত শিকারি প্রাণীরা শিকার খাওয়ার সময় মাংস খেয়ে হাড় ফেলে দেয়। কারণ শক্ত হাড় হজম করা কঠিন। কিছু ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়ও। কিন্তু বার্মিজ পাইথন (Python molurus bivittatus) সাপ এ বিষয়ে একেবারে আলাদা। এরা পুরো শিকারকে হাড়সহই গিলে ফেলে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, এই হাড়গুলি কিন্তু সাপের বিষ্ঠায় দেখা যায় না। তাহলে কোথায় যায় হাড়গুলি?
সম্প্রতি ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি অব মন্টপেলিয়ারের গবেষক ড. জা -হার্ভে লিনিও এবং তাঁর দল পাইথনের অন্ত্রে এক বিশেষ কোষের সন্ধান পেয়েছেন, যা এই রহস্যের উত্তর দিতে পারবে। এই কোষ দেখতে সাধারণ হজমকারী কোষের (enterocyte) মতো নয়। এই কোষের উপরের অংশে থাকে ছোট ছোট ভাঁজ, যেটা একধরনের ‘ক্রিপ্ট’ বা গর্ত তৈরি করে। সেই গর্তে তৈরি হয় ছোট ছোট কণিকা বা দানা, যেগুলোতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লোহা জমা থাকে। সাপ যখন হাড়সহ শিকার গিলে নেয়, তখন শরীরে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস ঢোকে। এর পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে বিপজ্জনক হতে পারে। তখন এই বিশেষ কোষগুলি শরীরের দরকারি পরিমাণ খনিজ পদার্থ শোষণ করে নেয়। আর অতিরিক্ত অংশ, দানা আকারে জমা রাখে। পরে প্রয়োজনে শরীর থেকে বের করে দেয়। এভাবে সাপ তার পুরো শিকারের হাড় হজম করতে পারে, কোনো অংশ বাদ না দিয়েই। গবেষক দল তিন ধরণের সাপের ওপর পরীক্ষা চালিয়েছেন। ১. যেগুলি উপবাসে ছিল; ২. যেগুলি সাধারণভাবে হাড়সহ শিকার খেয়েছে এবং ৩. যেগুলি হাড় ছাড়াই খাদ্য পেয়েছে। ফলাফলে দেখা যায়, উপবাসে থাকা সাপের কোষগুলো খালি থাকে। অন্যদিকে হাড় ছাড়া খাবার খেলে লোহা কিছুটা জমা হয়, কিন্তু ক্যালসিয়াম-ফসফরাসের দানা তৈরি হয় না। আবার হাড় দেওয়া হলে ক্রিপ্টের ভেতরে দানা গঠন করে। এছাড়া, সাপের বিষ্ঠায় একফোঁটাও হাড় বা কঙ্কাল পাওয়া যায়নি। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরনের কোষ আরও অনেক সাপের মধ্যেও রয়েছে, যেমন: রেটিকুলেটেড পাইথন, ব্লাড পাইথন, গ্রিন অ্যানাকোন্ডাবোয়া কনস্ট্রিক্টর এমনকি গিলা মনস্টার নামে একধরনের টিকটিকির মধ্যেও! গবেষকেরা ভাবছেন, যেসব প্রাণী সম্পূর্ণ হাড়সহ শিকার খায়, যেমন সামুদ্রিক প্রাণীভুক হাঙ্গর বা তিমি বা দাড়িওয়ালা শকুন প্রভৃতি হাড়-ভুক পাখি , তাদের মধ্যেও এই ধরনের কোষ থাকতে পারে। শুধু হজম নয়, এটি একটি সূক্ষ্ম জীববৈজ্ঞানিক অভিযোজন যা কোটি কোটি বছর ধরে গড়ে উঠেছে। সাপের এই ক্ষমতা প্রাকৃতিক রসায়নের এক নিখুঁত কেরামতি।
সূত্র: Journal of Experimental Biology (June, 2025)