
পার্কিনসন রোগের প্রাথমিক লক্ষণ উপেক্ষা করলে বা দেরিতে শনাক্ত করলে রোগটি নিরাময়যোগ্য না থেকে জটিল রূপ নেয়। কম্পন, মাংসপেশীর শক্ত হওয়া এবং নড়াচড়ায় বিলম্ব ইত্যাদি উপসর্গ সাধারণত অনেক দেরিতে প্রকাশ পায়। এদিকে, ইতিমধ্যে রোগীর ডোপামিন-উৎপাদনকারী স্নায়ুর প্রায় অর্ধেকের বেশিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত না হওয়ায় চিকিৎসার সফলতা কমে যায়। তবে কিছু জৈব নির্দেশনাভিত্তিক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব। কিন্তু তার জন্য যে ধরনের চিকিৎসাকেন্দ্র, উন্নত যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষিত পেশাদার ব্যক্তি প্রয়োজন, তা অনেক রোগীরই নাগালের বাইরে। এই পরিস্থিতিতে, ইউসিএল-এর হেনরি স্যামুয়েল স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড সায়েন্সের বায়োইঞ্জিনিয়ার জুন চেন ও তাঁর গবেষকদল একটি নতুন ‘স্মার্ট ম্যাগনেটোইলাস্টিক পেন’ উদ্ভাবন করেছেন। এটি সহজ ও তুলনামূলকভাবে অল্প খরচে পার্কিনসনের প্রাথমিক নিদর্শন শনাক্ত করতে সক্ষম। যন্ত্রটি নমনীয় সিলিকন-নির্মিত চুম্বকযুক্ত ডগা এবং ফেরোফ্লুইড কালি দ্বারা তৈরি, যা আণবিক চুম্বকীয় কণিকা ধারণ করতে সক্ষম। কলমটির কাঠামোতে একটি পরিবাহী সুতো রয়েছে, যা কলমের গায়ে কুণ্ডলী পাকিয়ে মোড়ানো। ব্যবহারকারী যখন কলমটি কাগজে বা বাতাসে নাড়েন, তখন যে চুম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি হয় তার পরিবর্তন ও ফেরোফ্লুইড প্রবাহের গতিশীলতা যন্ত্রটিকে স্বয়ংক্রিয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহায়তা করে। সেই সংকেত ডিজিটাল তথ্যে রূপান্তরিত হয়। ১৬ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৩ জন পার্কিনসন রোগী ছিলেন। একটি প্রাথমিক গবেষণায় এই কলম দিয়ে সংগৃহীত হাতের লেখার তথ্য কৃত্রিম স্নায়ুজালের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে রোগ-সম্পর্কিত সূক্ষ্ম নমুনা শনাক্ত হয় এবং ৯৬.২২% নির্ভুলতায় রোগী ও সুস্থ ব্যক্তিদের পার্থক্য নির্ধারণ করা যায়। চেন বলেন, পার্কিনসন রোগের অনেক সচলতা ঘটিত ‘মোটর’ লক্ষণ চোখে দেখা যায় না, তবে স্নায়ু সংকেত বিশ্লেষণে ধরা পড়ে। এই স্মার্ট পেন সেই সূক্ষ্ম ভিন্নতাগুলো চিহ্নিত করতে সক্ষম। এই কলম কেবল একটি পরীক্ষার যন্ত্র নয়, এটি স্নায়বিক ক্ষয়জনিত রোগ নির্ণয়ে প্রযুক্তি, স্নায়ুবিজ্ঞান ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংমিশ্রণে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করছে, যা আগাম সতর্কতা দেওয়া সম্ভব করে। এই উদ্ভাবন ভবিষ্যতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।