
প্রাণিজগতে পালক হল ত্বক সংক্রান্ত সবচেয়ে জটিল উপাঙ্গগুলির মধ্যে একটি। বিকাশ ঘটিত জীববিজ্ঞানের চর্চা থেকে এই কথা উঠে আসছে যে পালকের বিবর্তন ঘটেছে আদি প্রাক-পালক নামক এক সরল কাঠামো থেকে। এগুলি একটিমাত্র সুতোয় গাঁথা নালিকা আকৃতির কাঠামো দিয়ে তৈরি। প্রায় কুড়ি কোটি বছর আগে কয়েক ধরণের ডাইনোসরদের মধ্যে এর প্রথম আবির্ভাব। আরও আগে, প্রায় ২৪ কোটি বছর আগে, ডাইনোসর আর টেরোসরদের (ঝিল্লি-গঠিত ডানাওয়ালা প্রথম মেরুদণ্ডী প্রাণী) অভিন্ন পূর্বপ্রজন্মের মধ্যে এর উপস্থিতি ছিল কিনা তা নিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদদের মধ্যে এখনও আলোচনা চলছে। এই আদি প্রাক-পালকগুলোর সঙ্গে আধুনিক পালকের তফাত এই যে, আদি প্রাক-পালকগুলোতে উলটোমুখী ও খোঁচা-খোঁচা কাঁটা এবং ছোটো ছোটো থলি থাকত না। এই আদি প্রাক-পালকগুলোর উদ্ভবই খুব সম্ভব পালকের বিবর্তনের পথে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এগুলোই প্রথমে তাপ-সুরক্ষা দেয় এবং অলংকৃত রূপ ধারণ করে। তারপর ক্রমে প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় এগুলি জটিলতর রূপ পরিগ্রহ করে, যা প্রাণিকে উড়তে সাহায্য করে। ইউ এন আই জি ই-র জিনতত্ত্ব ও বিবর্তনতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মিশেল মিলিঙ্কোভিচ-এর ল্যাবরেটরিতে আধুনিক মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ভ্রূণের বিকাশে আঁশ, চুল এবং পালক গড়ে ওঠার পিছনে আণবিক সংকেত প্রবাহপথের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা চলছে। এর আগে একটি গবেষণায় সুইস বিজ্ঞানীরা মুরগি-ভ্রূণের রক্তবাহর মধ্যে ক্রিয়াসঞ্চারী একটি অণু ঢুকিয়ে দিয়ে “শ্শ্” নামে এইরকম এক প্রবাহপথকে উদ্দীপিত করেছিলেন। তাঁরা দেখেছিলেন এর ফলে আঁশগুলি পুরোপুরি এবং পাকাপাকিভাবে পাখির পায়ের পালকে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনার দ্বারা উৎসাহিত হয়ে বর্তমান গবেষকরা দেখতে চাইলেন ওই রূপান্তরণ ব্যাহত হলে কী ঘটে। এজন্য তাঁরা মুরগি-ভ্রূণের রক্তবাহর মধ্যে এমন একটি অণু ঢুকিয়ে দিলেন যা ভ্রূণবিকাশের নবম দিনের মাথায় ডানার উপরে পালকের অঙ্কুর গজানোর ঠিক আগে ওই একই প্রবাহপথটিকে আটকে দিল। তাঁরা দেখলেন এর ফলে পালকের এমন একটি শাখাহীন অঙ্কুর গজালো যার আকৃতি কোনোকিছুকে উলটিয়ে বাইরের দিকে টেনে আনলে যেমন হয় সেইরকম। এর সঙ্গে আদি প্রাক-পালক গড়ে ওঠার সম্ভাব্য প্রাথমিক পর্বের মিল আছে। দেখা গেল, ভ্রূণবিকাশের চোদ্দো দিনের মাথায় কিন্তু অঙ্গবিকাশ আবার কিছু পরিমাণে শুরু হল। শুধু তাই নয়, ছানাগুলো যখন জন্মাল, দেখা গেল, তাদের গায়ে পালক নেই, কিন্তু ত্বকের নীচে নিষ্ক্রিয় হয়ে-থাকা ছোটো ছোটো থলিগুলি আপনা থেকেই সক্রিয় হয়ে উঠল। শেষ পর্যন্ত ছানাগুলোর গা ভরে উঠল স্বাভাবিক পালকসজ্জায়। এ থেকে মিলিঙ্কোভিচ এই সিদ্ধান্তে এলেন যে একটি পায়ের আঁশের বিকাশে সাময়িক ব্যাঘাত সৃষ্টি করলে সেটা পাকাপাকিভাবে পালকে রূপান্তরিত হতে পারে। “খোদ পালকটির গড়ে-ওঠাকে পাকাপাকিভাবে ব্যাহত করা ঢের কঠিন কাজ”। অতএব এটা স্পষ্ট যে বিবর্তনের পথে পরস্পরের সঙ্গে ক্রিয়াশীল জিন-জালিকাগুলি অত্যন্ত জবরদস্ত চেহারা নিয়েছিল। আর তারই ফলে ব্যাপক জিনঘটিত কিংবা পরিবেশগত ব্যাঘাত সত্ত্বেও পালকগুলো যথাযথরূপে গড়ে-ওঠার সুযোগ পায়। “এখন আমরা বুঝতে চাইছি, পরস্পরের সঙ্গে ক্রিয়াশীল জিনগুলি কীকরে এমনভাবে বিবর্তিত হল যার ফলে প্রাক-পালকের মতো অভিনব অঙ্গরূপের উদ্ভব ঘটতে পারল। এ খুব দুরূহ প্রশ্ন”।
কৃতজ্ঞতা: ড. মিতা দাস
সূত্র: Cooper RL, et al. In vivo sonic hedgehog pathway antagonism temporarily results in ancestral proto-featherlike structures in the chicken. PLOS Biology (2025). DOI: 10.1371/journal.pbio.3003061