পাশাপাশি বসে একই সিনেমা আমরা আলাদাভাবে দেখি

পাশাপাশি বসে একই সিনেমা আমরা আলাদাভাবে দেখি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
পাশাপাশি বসে একই সিনেমা আমরা আলাদাভাবে দেখি

বিখ্যাত এক সিনেমা নামজাদা হলে চলছে। দুজন ব্যক্তি সিনেমা হলে বসে সেই সিনেমা দেখছেন। কিন্তু কী আশ্চর্য দুজনে একই সিনেমা আলাদাভাবে দেখছেন। জাস্টাস লিবিগ ইউনিভার্সিটি গিয়েসেন (জেএলইউ) এর গবেষকরা ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেসের প্রসিডিংস জার্নালে তাদের এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছেন। গবেষণা জানাচ্ছে দর্শকদের চোখ তাদের মস্তিষ্ক একই চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সংস্করণ দেখায় আর এই পার্থক্য তাদের চোখের নড়াচড়া দেখে অনুমান করা যেতে পারে। আমাদের সকলের শরীর একই অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে তৈরি হলেও, তা ব্যক্তি বিশেষে আলাদা আলাদা। একইভাবে আমাদের মস্তিষ্ক আর তার কাজের ধরনও ব্যক্তি অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। স্নায়ুবিজ্ঞানীরা ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স ইমেজিং ও মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তির মস্তিষ্কের কার্যকলাপ তুলনা করেছেন। প্রায় এক দশক ধরে, এই কৌশলগুলো গবেষকদের বিভিন্ন মস্তিষ্কের সক্রিয়তার প্যাটার্ন বুঝতে সাহায্য করেছে।
জেএলইউ এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজি-র গবেষকরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখেছেন কীভাবে ব্যক্তিগত চোখের নড়াচড়া আমাদের উপলব্ধিকে প্রভাবিত করে। তারা একই সিনেমা দেখার সময় ১৯জন স্বেচ্ছাসেবকের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরীক্ষা করে দেখেছেন। এদের মধ্যে কেউ নিজে থেকেই সিনেমা দেখছিল, কেউ আবার নিষ্ক্রিয়ভাবে পর্দার দিকে তাকিয়েছিল। তারা দেখেছেন নিষ্ক্রিয়ভাবে দেখার তুলনায়, চোখের স্বাভাবিক নড়াচড়া মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল সেন্টারে অনেক বেশি সক্রিয়তা দেখায়। আবার এই সক্রিয়তা ব্যক্তিবিশেষে স্বতন্ত্র, যার ফলে একজনের মস্তিষ্কের কার্যকলাপের সাথে অন্যের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ মেলানো কঠিন হয়ে পড়ে।
আগে মনে করা হত আমাদের চোখের সামনে যা ঘটছে, চোখের নড়াচড়া তারই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু এখন গবেষণা জানাচ্ছে চোখের নড়াচড়া প্রতি ব্যক্তির স্বকীয়। যেমন কিছু ব্যক্তির চোখ থাকে মানুষের মুখের দিকে, আবার কারুর চোখ থাকে লেখার দিকে বা অন্যান্য কোনো জিনিসে। গবেষকরা বলছেন ব্যক্তিভেদে এই দেখার বৈশিষ্ট্য প্রতি ব্যক্তির মনে একটা আলাদা জগত তৈরি করে। তারা জানিয়েছেন পৃথক পরীক্ষায় মানুষের চোখের নড়াচড়ার সাদৃশ্য দেখে মানুষের মস্তিষ্কের কার্যকলাপের ধরন কতটা আলাদা হবে তা তারা অনুমান করতে পারবেন। চোখের নড়াচড়া যেমন শক্তিশালী স্নায়বিক কার্যকলাপের দিকে নিয়ে যায়, তেমন এই কার্যকলাপের প্যাটার্ন ব্যক্তিবিশেষে আলাদা। শক্তিশালী সংকেত মানে পরিষ্কার তথ্য, কিন্তু এখানে মস্তিষ্কে সিনেমার উপস্থাপনার সংকেত প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আলাদা আলাদা। কীভাবে একজন ব্যক্তির জীবনে চোখের নড়াচড়া বিকশিত হয় আর কীভাবে তা সিনেমার দৃশ্য বা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজ বুঝতে প্রভাব ফেলে গবেষকরা এখন সে বিষয়ে অন্বেষণ করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − four =