পৃথিবীর জলের উৎস কি বাইরের গ্রহাণু? উইঞ্চকম্ব উল্কার ইঙ্গিত তেমনই

পৃথিবীর জলের উৎস কি বাইরের গ্রহাণু? উইঞ্চকম্ব উল্কার ইঙ্গিত তেমনই

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ৭ মার্চ, ২০২৩

২০২১ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারির সন্ধ্যে তখন সবে শেষের পথে। উত্তর ইংল্যান্ডের আকাশ বেয়ে পিচকালো পাথর মহাকাশ থেকে এসে পড়েছিল মাটিতে। আট সেকেন্ডের একটা চিত্তাকর্ষক আতশবাজির প্রদর্শন যেন। তারপর সেই মহাজাগতিক পাথর ভেঙে খানখান। সবচাইতে বড়ো টুকরোটা আছড়ে পড়ে ঐতিহাসিক শহর উইঞ্চকম্বে।
তারপর থেকেই উইঞ্চকম্ব উল্কার খণ্ড নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছিলেন লন্ডনের ন্যাচারাল হিষ্ট্রি মিউজিয়ামের গ্রহবিজ্ঞানী অ্যাশলে কিং। টুকরোগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সেটা সৌরজগতের বাইরের দিক থেকে এসেছিল। কিন্তু আশ্চর্য তথ্য হল পৃথিবীর জলের মতো রাসায়নিক গুণসম্পন্ন জলকণার সন্ধান মিলেছে ঐ উল্কাখন্ডেও। গবেষণার খবরটা প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্স অ্যাডভান্সেস পত্রিকায়। কীভাবে পৃথিবীতে জলের উদ্ভব হল, এটা দীর্ঘদিনের একটা রহস্য বিজ্ঞানীদের কাছে। কিন্তু নতুন এই গবেষণা থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে নবীন গ্রহে কোনও একসময়ে জল এসেছিল বাইরের থেকে আছড়ে পড়া গ্রহাণুর মাধ্যমে।
অ্যাশলে কিং ও তাঁর সহকারী গবেষকরা নানা জটিল পদ্ধতিতে টুকরোটার রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। তাঁদের মতে, ঐ উল্কার মধ্যে ওজনের হিসেবে প্রায় ১১% জল রয়েছে। আবার, খনিজে আবদ্ধ জলের মধ্যেকার হাইড্রোজেন কিন্তু ডয়টেরিয়াম, অর্থাৎ হাইড্রোজেনেরই একটা ভারী আইসোটোপ। আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এই যে, পৃথিবীর পরিমণ্ডলে হাইড্রোজেন আর ডয়টেরিয়ামের অনুপাত যা, উল্কার মধ্যেও সেই একই অনুপাত! প্রোফেসর কিং বলছেন, এটাই আপাতত সবচেয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত যে পৃথিবীতে জলের উৎস বাইরের কোনও জলধারক গ্রহাণু।
এছাড়াও ঐ উল্কাখন্ডে অ্যামিনো অ্যাসিড ও অন্যান্য জৈব পদার্থেরও খোঁজ পেয়েছেন গবেষকরা। অধ্যাপক কিং জানিয়েছেন, ঐ যৌগগুলোই কিন্তু ডিএনএ তৈরির গঠনগত উপাদান (বিল্ডিং ব্লকস)।