পেট্রিডিশের মধ্যেই হৃৎপিণ্ডের ছোট সংস্করণ তৈরি হল

পেট্রিডিশের মধ্যেই হৃৎপিণ্ডের ছোট সংস্করণ তৈরি হল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ এপ্রিল, ২০২৩

মানুষের হৃৎপিণ্ড জীবনব্যাপী রক্ত পাম্প করে সারা শরীরে রক্ত সংবহনের কাজ করে। টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি মিউনিখ – এর একদল গবেষক একদম প্রাথমিক স্তরে হৃৎপিণ্ড কীভাবে গঠিত হয় তা জানার জন্য গবেষণা করছেন, যাতে হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। তারা স্টেম সেল ব্যবহার করে গবেষণাগারে হৃৎপিণ্ডের বিকাশের স্তরগুলো দেখেছেন। এই গবেষণায় তারা ৩৫,০০০ কোশ দিয়ে হৃৎপিণ্ডের আকৃতির একটা অঙ্গাণু তৈরি করতে পেরেছেন, যা তারা এপিকার্ডিয়ডস নাম দিয়েছেন, এবং এপিকার্ডিয়াম গঠনের জন্য দায়ী প্রাথমিক কোশ আবিষ্কার করেছেন।
কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে রিজেনারেটিভ মেডিসিনের অধ্যাপক আলেসান্দ্রা মোরেত্তির সাথে একদল গবেষক প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল ব্যবহার করে একধরনের “মিনি-হার্ট” তৈরি করার একটি পদ্ধতি নিয়েছেন। আলেসান্দ্রা মোরেত্তি ব্যাখ্যা করেছেন, একটি সেন্ট্রিফিউজে প্রায় ৩৫,০০০ কোশের একটি গোলক তৈরি করা হয়। বেশ কয়েক সপ্তাহ যাবৎ, একটি নির্দিষ্ট নিয়ম বজায় রেখে কোশে বিভিন্ন সিগন্যালিং অণু তারা যোগ করেন। যা করতে করতে তারা হৃৎপিণ্ডের গঠনের জন্য শরীরের সিগন্যালিং পথ খুঁজে পেয়ে তা অনুকরণ করতে থাকেন। এর ফলে একটা ছোট হৃৎপিণ্ডের মতো অঙ্গ তারা তৈরি করতে পেরেছেন। এই গবেষণা নেচার বায়োটেকনোলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
মিনি-হার্টের মত যে অঙ্গাণুগুলো তৈরি হয়েছিল, তা আধ মিলিমিটার ব্যাসার্ধবিশিষ্ট। এগুলো রক্ত পাম্প করতে না পারলেও, বিদ্যুৎ তরঙ্গের সাহায্যে মানব হৃৎপিণ্ডের মতো সঙ্কুচিত করা যায়। প্রফেসর মোরেত্তি আর গবেষকের দল প্রথম সফলভাবে এমন অঙ্গাণু তৈরি করতে পেরেছেন, যাতে হৃৎপেশির কোশ (কার্ডিয়োমায়োসাইটস) এবং হৃৎপিণ্ডের বাইরের আস্তরণ (এপিকার্ডিয়াম) দুটোই উপস্থিত। তাই এই অঙ্গাণুর নাম তারা দিয়েছেন, ‘এপিকার্ডিয়ডস’। এর আগে ২০২১ সালে, যে হৃৎপিণ্ডের মতো অঙ্গাণু তৈরি করা গিয়েছিল, তাতে কার্ডিয়োমায়োসাইটস আর হৃৎপিণ্ডের ভিতরের আস্তরণ (এন্ডোকার্ডিয়াম) উপস্থিত ছিল, কিন্তু এপিকার্ডিয়াম তৈরি করা যায়নি।
গবেষণা পত্রের প্রথম গবেষক ডঃ অ্যানা মেয়ার জানিয়েছেন, হৃৎপিণ্ড গঠনের জন্য এপিকার্ডিয়াম কোশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। হৃৎপিণ্ডে রক্তনালী, যোজক কলা সবই এপিকার্ডিয়াম কোশ থেকে সৃষ্টি হয়, তাছাড়া এটা হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠও তৈরি করার জন্য দায়ী। হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর কয়েক মিলিয়ন কার্ডিয়োমায়োসাইটস নষ্ট হয়ে যায়, যা আর তৈরি হয় না। এই জায়গায় ফাইবার বা তন্তুজাতীয় কলা জন্মায়, কিন্তু সেই কলা হৃৎপিণ্ডের পাম্প করার কাজ করতে পারে না। একমাত্র হৃৎপিণ্ডের এপিকার্ডিয়ামে যে পাতলা আবরণ থাকে, তা এই ক্ষত স্থানে সিগন্যাল পাঠিয়ে, আর আশেপাশের রক্তজালককে সারাতে সাহায্য করে।
এই অঙ্গাণুগুলো তৈরির পদ্ধতি জানানোর সাথে গবেষকরা এই পরীক্ষা থেকে তাদের প্রাপ্ত নতুন আবিষ্কারের কথাও জানিয়েছেন। প্রত্যেকটা কোশ বিশ্লেষণ করে তারা এই অঙ্গাণু গঠনের ৭ দিনের মধ্যে একধরনের কোশ দেখতে পেয়েছেন। সম্প্রতি ইঁদুরে এই কোশ আবিষ্কৃত হয়েছে, যা এপিকার্ডিয়ামের পূর্ববর্তী কোশ, অর্থাৎ এই কোশ থেকেই এপিকার্ডিয়াম সৃষ্টি হয়। মোরেত্তি বলেছেন, মানব শরীরেও এই কোশ কিছুদিনের জন্য বিদ্যমান থাকে। যার জন্য ভ্রূণ অবস্থায় হৃৎপিণ্ড আপনা থেকেই মেরামত হয়ে যায়, কিন্তু প্রাপ্তববয়স্ক ব্যক্তির হৃৎপিণ্ডের এই ক্ষমতা থাকে না। এই এপিকার্ডিয়ামের উপস্থিতি নিয়ে ধারণা হার্ট অ্যাটাক সহ অন্যান্য হৃদরোগের চিকিৎসা ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + eleven =