পোর্তুগিজ ম্যান ও’ ওয়ার-এর হরেক প্রজাতি

পোর্তুগিজ ম্যান ও’ ওয়ার-এর হরেক প্রজাতি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ জুলাই, ২০২৫

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. স্যামুয়েল এইচ চার্চ এবং অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাইলি পিটের পরিচালনায় এক বৈশ্বিক জিন সমীক্ষায় এই তথ্য সামনে এসেছে যে, বহুদিন ধরে একটিমাত্র প্রজাতি বলে মনে করা “পোর্টুগিজ ম্যান ও’ ওয়ার” -এর আসলে চারটি আলাদা আলাদা প্রজাতি রয়েছে। এই আবিষ্কার দুই শতাব্দীর পুরনো শ্রেণিবিন্যাসের ধারণাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে।”পোর্টুগিজ ম্যান ও’ ওয়ার”, যার বৈজ্ঞানিক নাম ” ফিজালিয়া ফিজালিস “, তা জেলিফিশের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও প্রকৃত অর্থে এটি জেলিফিশ নয়। বরং এটি সিফোনোফোর নামে পরিচিত সামুদ্রিক কলোনিয়াল প্রাণী। এদের শরীরে ফোলানো নীল রঙের স্বচ্ছ অংশ থাকে, যা অনেকটা ছোট নীল বোতলের মতো দেখতে, তাই এদের Bluebottle বলা হয়।
এটি একক জীব নয়, বরং একই জিনগত গঠনের একাধিক ছোট ছোট জীবের সমষ্টি যাকে বলে জুয়েড, যাদের প্রত্যেকের নির্দিষ্ট ভূমিকা থাকে। কেউ ভাসে, কেউ শিকার ধরে, কেউ খাদ্য হজম করে এবং কেউ প্রজনন করে।
এদের স্বচ্ছ ফোলা মতো ভাসমান অংশ বা নিউম্যাটোফোর থাকে, যা বাতাসে ভেসে সমুদ্রপৃষ্ঠে এগিয়ে চলে। নিচে থাকে নেমাটোসিস্ট নামক দংশক কোষ যা শত্রু বা শিকারে বিষ ঢোকাতে সক্ষম। এদের ধারালো ফলাযুক্ত ডাঁটার মতো অংশের দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এদের বিষ মানুষের জন্য অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, যদিও প্রাণঘাতী হয় খুব কম ক্ষেত্রেই। তবে সামুদ্রিক খাদ্য শৃঙ্খলে এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

গবেষণায় চারটি ভিন্ন প্রজাতি চিহ্নিত হয়েছে, ফিজালিয়া ফিজালিস, পি. ইউট্রিকুলাস, পি.মেগালিস্টা এবং সদ্য আবিষ্কৃত পি.মিনুটা, যা নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণে পাওয়া গেছে। প্রতিটি প্রজাতির ভাসমান অংশের রঙ এবং আকার ভিন্ন। জিন তাৎত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে, এরা একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয় না, এমনকি একই সমুদ্র অঞ্চলে থাকলেও নয়।
সমুদ্রের ধারা এবং বাতাসের গতিপথ অনুসারে প্রজাতির বিস্তার নির্ভর করে। যেমন- পি. ইউট্রিকুলাস সাধারণত অস্ট্রেলিয়ার দিকে ভেসে যায়, পি.মেগালিস্টা আটলান্টিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং পি.মিনুটা তাসমান সাগরে সীমাবদ্ধ থাকে।

বিভিন্ন প্রজাতির বিষের মাত্রাও ভিন্ন, ফলে কোন প্রজাতি কোথায় ভেসে আসছে, তা জানলে সমুদ্রসৈকতে সতর্কতা বাড়ানো সহজ হবে। এই গবেষণার ফল একটি বিশেষ দিকে আলোকপাত করে যে, এদের দেহ নিঃসৃত অধিবিষগুলি একইধরনের কিনা আর চিকিৎসা ক্ষেত্রে এর কোনো উপকারিতা থাকতে পারে কিনা। এছাড়া হয়তো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বোঝা এবং সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র বুঝতে নতুন পথের সন্ধান পাওয়া যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × one =