পোষ্যকে মুখ চাটতে দেওয়া কী আদৌ ভালো?

পোষ্যকে মুখ চাটতে দেওয়া কী আদৌ ভালো?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ মার্চ, ২০২৪

অফিস থেকে বাড়ি ফিরে এলেই আপনার পোষা কুকুর আপনাকে অভ্যর্থনা জানায়। অনেকের বাড়িতে এটাই প্রাত্যহিক চিত্র। পোষ্যের সঙ্গে এমন খুনসুটি চলতেই থাকে সারা দিন। কুকুরদের আদর করার ধরন খানিকটা আলাদা। তারা তো আর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পারে না বা আপনাকে জড়িয়ে ধরতেও পারে না। পোষ্যদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হল লেজ নাড়তে নাড়তে জিভ দিয়ে চেটে আপনার মুখ ভিজিয়ে দেওয়া। পোষ্যের কাছ থেকে এমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পেয়ে সবার মনই খুশিতে ভরে যায়। যদিও কেউ কেউ মুখ চাটতে নিরুৎসাহিত করার জন্য কুকুরদের মুখ ধরে দূরে সরিয়ে দেয়, আবার কেউ কেউ কুকুরের স্নেহে আনন্দিত হয়। কিন্তু সাময়িক এই ভালোলাগা আপনার ক্ষতির কারণ হয়ে উঠছে না তো?
আপনার সঙ্গী কুকুর সারাদিন ধরে কী চাটছে একবার ভেবে দেখা প্রয়োজন। তারা সারাদিন ধরে তাদের খাবার ও জল ছাড়াও তাদের থাবা, তাদের খেলনা এবং সম্ভবত তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থান এমনকি তাদের যৌনাঙ্গ চেটে থাকে। অনেকেই এই চাটা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামান না এবং স্বাস্থ্যবিধির বিষয়গুলো উপেক্ষা করে চলতে ভালোবাসেন।
জিভ দিয়ে চাটা কুকুরের একটি সহজাত গুরুত্বপূর্ণ আচরণ। কুকুরদের বারবার নিজেদের মুখ চাটা মূলত তাদের চাপ বা ভয়ের একটি সূক্ষ্ম লক্ষণ হতে পারে, বিশেষ করে যখন তারা তাদের কান পিছনে করে রাখে এবং তারা উত্তেজিত থাকে।
কুকুররাও মানুষের মানসিক অবস্থার আচরণগত প্রতিক্রিয়া হিসাবে ঠোঁট চাটে। আমরা জানি যে কুকুরের মতো প্রাণীরা আচরণগতভাবে সহানুভূতিশীল। তারা চোখে দেখে বা কানে শুনে মানুষ বা অন্যান্য কুকুরের আবেগকে চিনতে পারে। কুকুরের ক্ষেত্রে তাই, ঠোঁট চাটা একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি – এবং এটি তাদের মানুষের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কুকুরের অভিভাবকদের জন্য তাদের পোষ্যর সাহচর্য এবং ভালোবাসা, তাদেরে সুস্থতা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য দারুণভাবে কাজ করতে পারে কিন্তু আমাদের ভুললে চলবে না যে আনেক মানুষের ক্ষেত্রে, ক্যানাইনের লালা ভালোর চেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা যারা ইমিউনো কমপ্রোমাইজড, যাদের ক্ষতস্থান খোলা আছে, তাদের জন্য কুকুরের জিভ দিয়ে চাটা এড়িয়ে চলাই ভালো। কুকুরের মুখে বিভিন্ন ধরনের অণুজীব থাকে যা সাধারণত মানুষের জন্য খুব একটা ঝুঁকিপূর্ণ নয় কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে, জুনোসেস নামে এক সংক্রামক রোগ কুকুর থেকে মানুষের মধ্যে কামড়, চাটা এবং আঁচড়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে। বেশিরভাগ সময়, কুকুরের লালার সংস্পর্শে আসা মানুষেরা কোনও স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয় না। কিন্তু এমন বিরল ঘটনা রয়েছে যেখানে কুকুরের লালার সংস্পর্শে এসে লোকেরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। যেমন, ক্যাপনোসাইটোফাগা ক্যানিমোরসাস, নামে একটি ব্যাকটেরিয়া অন্যথায় স্বাস্থ্যকর কুকুর এবং বিড়ালের তিন চতুর্থাংশের মুখে পাওয়া গেলেও এটি ক্ষতিকারক রোগ সেপসিস সৃষ্টি করেছে। অন্যান্য জীবাণু যেমন পাস্তুরেলা মাল্টোসিডা কুকুরের লালার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে, এবং মেনিনজাইটিস সহ গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে। জুনোটিক সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে ইমিউনো কম্প্রোমাইজড ব্যক্তিরা, খুব ছোটো শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এবং গর্ভবতী মহিলারা। তাই ঝুঁকি এড়াতে পোষ্যকে সব সময় এতটা কাছে আসতে দেবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − 10 =