প্রাকৃতিক নানা ঘ্রাণ ও আমাদের ভালো থাকা

প্রাকৃতিক নানা ঘ্রাণ ও আমাদের ভালো থাকা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ মে, ২০২৪

প্রচলিত এক কথা হল প্রকৃতিতে সময় কাটানো আমাদের শরীরের পক্ষে ভালো। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রকৃতির সাথে যোগাযোগ চিন্তা, আবেগকে প্রভাবিত করে, মানসিক চাপ হ্রাস করে এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে আমাদের সুস্থতা বাড়াতে পারে। প্রকৃতির সংস্পর্শে মানুষের সুস্থ হওয়া ত্বরান্বিত হওয়া নিয়ে কিছু গবেষণা আছে। কিন্তু চাক্ষুষভাবে প্রকৃতিকে দেখার পাশে আমাদের ঘ্রাণেন্দ্রিয় এবিষয়ে কী ভূমিকা নেয় বা নিতে পারে তা জানার জন্য ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা কাজ করেছেন।
সায়েন্স অ্যাডভান্সেস-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে, গ্রেগরি ব্র্যাটম্যান, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও বন বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ও বিশ্বজুড়ে তার সহকর্মীরা কীভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশে গন্ধ এবং ঘ্রাণ আমাদের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার উপর প্রভাব ফেলে তা নিয়ে গবেষণা করার উপায়ের রূপরেখা দিয়েছেন। তাদের গবেষণার মূলে রয়েছে, মানুষের গন্ধের অনুভূতি, যা ক্রমাগত চলমান এক জটিল রাসায়নিক শনাক্তকরণ ব্যবস্থা। নাক শত শত অত্যাধুনিক রাসায়নিক সেন্সর ঘ্রাণজনিত রিসেপ্টর দিয়ে পরিপূর্ণ। ঘ্রাণের সেন্সর একসাথে, এক ট্রিলিয়নেরও বেশি ঘ্রাণ সনাক্ত করতে পারে, এবং সেই তথ্য সরাসরি স্নায়ুতন্ত্রে চলে যায় যা আমাদের মন সচেতনভাবে বা অসচেতনভাবে শনাক্ত করতে পারে। গবেষকদের মতে, প্রকৃতির গন্ধসংক্রান্ত প্রভাবগুলো সম্ভবত বিভিন্ন পথের মাধ্যমে আসে। উদ্ভিদের উদ্বায়ী জৈব যৌগের মধ্যে কিছু রাসায়নিক যৌগ, আমাদের সচেতনতা ছাড়াই আমাদের ওপর কাজ করতে পারে। অন্যান্য ঘ্রাণজনিত সংকেতগুলো মস্তিষ্ক সচেতনভাবে বাছাই করে, কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখনও আমাদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ওপর তাদের সমস্ত প্রভাব সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারেন নি। কিছু ঘ্রাণ, দেশ কাল ভেদে, মানুষের কাছে সার্বজনীন যেমন মিষ্টি গন্ধযুক্ত ফুলের মনোরম গন্ধ। আবার কিছু ঘ্রাণ সুনির্দিষ্ট স্মৃতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে আবদ্ধ, যা সংস্কৃতি এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয়। আমাদের গন্ধের অনুভূতি এবং প্রকৃতির সাথে ইতিবাচক অভিজ্ঞতার মধ্যে সম্ভাব্য যোগসূত্রের তদন্তের ক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষণা, বলছে প্রকৃতি থেকে পাওয়া কিছু গন্ধের সাংস্কৃতিক তাত্পর্য নতুন প্রজন্মের মাধ্যমে সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। অন্যান্য গবেষকরা দেখিয়েছেন যে আমরা যে বাতাসে শ্বাস নিই প্রকৃতি তাতে তার স্বাক্ষর রেখে যায়। যেমন অরণ্য থেকে বাতাসে এক জটিল রাসায়নিক প্রভাব পড়ে। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর কেমিস্ট্রি এবং সাইপ্রাস ইনস্টিটিউটের গবেষণা দেখায় যে কীভাবে প্রাকৃতিক উদ্বায়ী জৈব যৌগ পরিবেশে মিশে ঘ্রাণজ প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই ধরনের প্রতিক্রিয়াগুলো মানুষের কাছে উপকারী হলেও গবেষকরা জানিয়েছেন, মানুষের নানা কাজে দূষণের ফলে প্রাকৃতিক গন্ধের ওপর প্রভাব পড়ছে, যাতে গন্ধ পরিবর্তিত হচ্ছে।