পরিবেশবিদদের মতে, ডাইনোসরেরও আগের আমল থেকেই পৃথিবীতে পিঁপড়ের বাস। এখনও পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৫ হাজারের কিছু বেশি প্রজাতি এবং উপপ্রজাতির পিঁপড়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীতে এদের সংখ্যা প্রায় ২০ কোয়াড্রিলন (১ কোয়াড্রিলন=১ হজার লক্ষ কোটি)। পিঁপড়েরা মানুষের মতোই জোটবদ্ধ প্রাণী। তারা মানুষের থেকেও অনেক বেশি বেঁধে বেঁধে থাকতে জানে। তবে রানি পিঁপড়ের হৃদয় বেশ কঠিন। তাদের অসুস্থ সন্তানদের তারা যত্ন নেয় না। যদি দেখা যায় একটি সদ্য ডিম ফুটে বেরনো কালো পিঁপড়ে একটি প্যাথোজেনের সংস্পর্শে এসেছে, তবে কলোনির অন্য পিঁপড়েদের রক্ষা করতে রানি পিঁপড়ে তার সংক্রামিত সন্তানদের খেয়ে ফেলতে একটুও সময় নষ্ট করে না। এমন কথাই জানাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা। বিজ্ঞানীরা এই প্রক্রিয়ার নাম দিয়েছেন হাইজিনিক ক্যানিবালিজম। একসঙ্গে বাস করার জন্য অন্যান্য মূককীট এবং রানি পিঁপড়ে যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়ে তাই এই কঠিন সিদ্ধান্ত নেয় রানি পিঁপড়ে। এর মাধ্যমে এটিও নিশ্চিত হয় যে পরের বার ডিম পাড়ার জন্য রানি পিঁপড়েদের আরও শক্তি সঞ্চিত থাকে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী ফ্লিন বিজেল বলেন যে রানি পিঁপড়েরা একাই তাদের উপনিবেশ শুরু করে এবং কর্মী পিঁপড়েদের মুখে খাবার তুলে দিয়ে নিজেরা অনাহারে থাকে। যে সব রানি পিঁপড়েরা সবচেয়ে বেশি কর্মী পিঁপড়ে উৎপাদন করে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তারা সংক্রামিত মূককীট খেয়ে তা আবার ডিম উৎপাদনে পুনর্ব্যবহার করতে সক্ষম। দেখা গেছে একটি উপনিবেশে কর্মী পিঁপড়েরা নিজ গোষ্ঠীর লার্ভা খাওয়ার প্রবণতা দেখায় না। কিছু প্রজাতির পিঁপড়েদের মধ্যে দেখা গেছে শ্রমিক এবং সৈন্য পিঁপড়েরা প্রকৃতপক্ষে অসুস্থ বা আহত পিঁপড়েদের ওষুধ দিয়ে বা জীবন রক্ষাকারী অপারেশন করে চিকিত্সা করে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া বাগানের কালো পিঁপড়ে, লাসিয়াস নাইজারের মধ্যে দেখা যায় না। সংক্রামিত মূককীট সহ যখন রানি পিঁপড়েরা তাদের বাসায় বন্দি থাকে, তাদের সাহায্য করার কেউ থাকে না। তারা ওই সংক্রামিত লার্ভাকে টেনে অন্যত্রও নিয়ে যেতে পারে না। এই পরিবেশে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি একজন রানির পক্ষে উপেক্ষা করা কঠিন। যখন সে তার বাসায় কোনো প্যাথোজেন শনাক্ত করে, তখন সে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংক্রমিত প্রতিটি লার্ভা বের করে নেয়। যদি প্রয়োজন হয়, রানি পিঁপড়ে ৯২% সংক্রামিত লার্ভাকে ভক্ষণ করতে পারে, কারণ পরবর্তী ক্ষেত্রে সে প্রায় ৫৫% বেশি ডিম পাড়তে পারে। আর এর ফলে অন্য পিঁপড়ের প্রাণও রক্ষা পায়।