
কৃষ্টি এক জটিল সামগ্রিকতা। জ্ঞান, বিশ্বাস, নৈতিকতা, শিল্প, আইন, রাজনীতি, আচার, সমাজের একজন সদস্য দ্বারা অর্জিত অন্য যেকোনো সম্ভাব্য সামর্থ্য বা অভ্যাস যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বজায় থাকে – সবই তার অন্তর্গত। বিজ্ঞানীরা এখন বুঝতে পারছেন, কৃষ্টি শুধু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; অনেক প্রাণীর মধ্যেও স্থানীয় রীতিনীতি ও সামাজিকভাবে শেখার আচরণ বিদ্যমান। সম্প্রতি অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রথমবারের মতো একটি উন্মুক্ত বৈশ্বিক ডেটাবেস তৈরি করেছেন, যেখানে বিভিন্ন প্রাণীর কৃষ্টি ও সামাজিকভাবে শেখা আচরণের তথ্য সংরক্ষিত হয়েছে।
প্রাণীদের সামাজিক আচরণ ও কৃষ্টি বিষয়ক তথ্যভাণ্ডারে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গবেষণাপত্রের তথ্য সংকলন করা হয়েছে। সেখানে তিমির সঙ্গীত, শিম্পাঞ্জির পাথর দিয়ে যন্ত্রপাতি ব্যবহার, হাতির আলাদা আলাদা ভাষা প্রভৃতি অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। এই ডেটাবেসের মাধ্যমে দেখা যায় কীভাবে বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাণীরা পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের আচরণ বদলায়, বা প্রজন্মর পর প্রজন্ম ধরে বিশেষ কৌশল রপ্ত করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাণীদের এই কৃষ্টি সংরক্ষণ করাটা শুধু গবেষণার জন্যই নয়, বেঁচে থাকার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, যদি স্থানান্তরিত কোনো হাতি নতুন দলের ভাষা না বুঝতে পারে, তাহলে সামাজিক মেলবন্ধন এবং নিরাপত্তা সংকট দেখা দিতে পারে। একইভাবে, যদি তিমিরা তাদের চিরাচরিত চলার পথ হারিয়ে ফেলে বা পাখিরা গান হারায়, তাহলে তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে।আবার, মানুষ যখন আবাসস্থল হ্রাস করে, শব্দ দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনও এই ঐতিহ্যগুলি মুছে ফেলার হুমকি দেয়।
এই ডেটাবেসের সক্রিয় মানচিত্রের মাধ্যমে দেখা যায়, কোথায় কোন প্রাণীর কী রকম আচরণ বা কৃষ্টি আছে। যেমন বোর্নিও দ্বীপে ওরাংওটাংদের বাসা বানানোর কৌশল, টোঙ্গার তিমিদের জটিল সঙ্গীত, কিংবা শহরের কাকদের গাড়ির সাহায্যে বাদাম ভাঙ্গার মতো উদ্ভাবনী আচরণ, এছাড়াও ইউরোপীয় বনাঞ্চলের ইঁদুরগুলি কিভাবে পাইনের খোসা ছাড়তে শিখেছিল, বা কীভাবে কিছু পাখি দাবানলের পরে তাদের আবাসস্থল পরিবর্তন করার পরে সঙ্গমনৃত্যকে পুনর্নির্মান করে ইত্যাদি।
গবেষক কিরণ বাসাভা বলেন, “বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে কৃষ্টির সংজ্ঞা এবং মানুষের হাতে পরিবেশ পরিবর্তনের ফলে প্রাণীরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, তা বোঝার জন্যই এই উদ্যোগ।” তিনি আরও জানান, অবিলম্বেই এই তথ্যভাণ্ডারে আরও ৬০০ টি গবেষণা যোগ হবে এবং অন্য গবেষকরাও তাদের তথ্য দিতে পারবেন।
এই প্রকল্প শুধু গবেষণার ক্ষেত্রেই নয়, শিক্ষার্থীদের শেখানো, নীতিনির্ধারণ এবং প্রাণীর অধিকার নিয়ে আলোচনাতেও ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতে ডেটাবেসে প্রাণীদের ভাষা, ভিডিও, এমনকি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জ্ঞানও যুক্ত করা হবে।