প্র্যাকটিকাল ক্লাসে কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট মাপা!

প্র্যাকটিকাল ক্লাসে কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট মাপা!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

অনেকে বলছেন, এ যুগ কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের যুগ। ইউনেস্কো ২০২৫ সালকে ‘কোয়ান্টাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বর্ষ’ বলে ঘোষণা করেছে। বলা হচ্ছে কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানে দ্বিতীয় বিপ্লব ঘটছে। স্বভাবতই বেশি বেশি করে ছাত্ররা পরমাণুর চেয়ে ছোটো অব-পরমাণু কণাদের গতিপ্রকৃতি সম্বন্ধে, কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট সম্বন্ধে, জানতে উৎসুক। কোয়ান্টাম কম্পিউটার, ডেটা এন্‌ক্রিপশন ও অন্যান্য কোয়ান্টাম ভিত্তিক প্রযুক্তির জন্য এগুলো ভালো করে জানা আবশ্যক। কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট হল এমন এক দশা যেখানে দুটি কণা বা দুটি সিস্টেম কোনো একটা নির্দিষ্ট দশায় না থেকে পরস্পরের সঙ্গে বিজড়িত এক মধ্যবর্তী দশায় বিরাজ করে। যখনই কোনো পরিমাপ করা হয়, তখনই এই দশাগুলির মধ্যে একটি বাস্তবায়িত হয়। এগুলিকে জানবার জন্য ছাত্রদের বিপুল চাহিদা মেটানোর জন্য বার্সিলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন অধ্যাপক নতুন ধরণের পরীক্ষনিরীক্ষার যন্ত্রপাতি বানিয়েছেন। ‘ইপিজে কোয়ান্টাম টেকনোলজি’ নামক পত্রিকায় এর বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। এঁদের মধ্যে আছেন কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ব্রুনো জুলিয়া, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ন্যানোপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক মার্তি দুয়োকাতেলা, ইলেকট্রনিক ও বায়োমেডিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক হোসে এম গোমেজ। বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞর সাহায্য নিয়ে রাওল লাহোজ-এর পরীক্ষানিরীক্ষার ভিত্তিতে যন্ত্রপাতিগুলি গড়ে তোলা হয়েছে। সাবেকি পদার্থবিজ্ঞানের তুলনায় কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান এতই আলাদা যে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষানিরীক্ষা মারফত তাকে আয়ত্ত করা খুব কঠিন। ১৯৬৪ সালে জন এস বেল পরীক্ষা মারফত প্রমাণ করেছিলেন যে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের দেওয়া পূর্বাভাসগুলি সাবেকি পদার্থবিজ্ঞানের সঙ্গে একেবারেই খাপ খায় না। এটি বেল-এর ‘ইনিকুয়ালিটি উপপাদ্য’ নামে প্রসিদ্ধ। এর বিস্তারিত পরীক্ষাসিদ্ধ প্রমাণ দেন আল্যাঁ আস্পেক্ত, জন এফ ক্লাউসার। ২০২২ সালে তাঁরা এ জন্য নোবেল পুরস্কার পান। আজকের দিনে বিভিন্ন কোয়ান্টাম প্রযুক্তির বিকাশের প্রয়োজনে কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট নিয়ে চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু ল্যাবরেটরিতে ছাত্রদের সামনে এসব পরীক্ষা করে দেখানো এতদিন দুঃসাধ্য বলে বিবেচিত হত। এই বাধা দূর করবার জন্য বার্সিলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানীরা নতুন ধরণের যন্ত্রপাতি বানিয়েছেন যার সাহায্যে ছাত্ররা সরাসরি কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট মাপতে পারবে, দুই-ফোটন দশার কোয়ান্টাম টোমোগ্রাফি করতে পারবে। এর দৌলতে একটি কোয়ান্টাম দশাকে কতকগুলি সদৃশ কোয়ান্টাম দশার পরিমাপের সাহায্যে পুনর্গঠন করা সম্ভব। .সরল এক কৌশলে তারা বিভিন্ন কোয়ান্টাম দশা নির্মাণ করতে পারবে। ফলত ল্যাবরেটরিতে প্র্যাকটিকাল ক্লাসেই এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে তারা ‘বেল ইনিকুয়ালিটি’গুলো পুরোপুরি মাপতে পারবে। দেখা গেছে এর ফলে ফোটনের কোয়ান্টাম দশা নিয়ে কাজকর্ম চালানো যাচ্ছে। বিভিন্ন এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট দশার বিশ্বস্ত রূপ নির্মাণ করা যাচ্ছে। ফলে ছাত্ররা অগ্রসর যন্ত্রপাতির ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে পরিচিত হতে পারছে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এরই মধ্যে এই অভিনব পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটেছে। স্পেন সরকারের বিজ্ঞান বিভাগ শুধু নয়, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থবিনিয়োগে এই প্রয়াস সফল হয়েছে।

সূত্র: http://www.sciencedaily.com/releases/2025/01/250127124201.htm 27.1.2025

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 + fourteen =