‘ফরএভার কেমিক্যালস’ বিনাশে ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার

‘ফরএভার কেমিক্যালস’ বিনাশে ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ আগষ্ট, ২০২৪
ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার

বেশির ভাগ রাসায়নিক যৌগেরই ক্ষয় হয়। অন্য পদার্থে পরিণত হয়ে সেগুলো মাটিতে মিশে যায় বা জলে দ্রবীভূত হয়। কিন্তু এমন অনেক রাসায়নিক যৌগ রয়েছে, যাদের কোনও ক্ষয় হয় না। সময়ের সাথে সাথে সেগুলো অন্য পদার্থে বদলেও যায় না। মানবশরীরে ঢুকলে সেগুলো সেখানেই থেকে যায় আমৃত্যু, বহু বছর। বিজ্ঞানীরা এই বিশেষ শ্রেণির রাসায়নিক পদার্থের নাম রেখেছেন ‘পারফ্লুরোঅ্যালকাইল অ্যান্ড পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল সাবস্ট্যান্সেস’ বা পিএফএএস। এই যৌগ মানুষেরই তৈরি এবং বিভিন্ন পণ্যে এগুলো পাওয়া যায়। কোনও ক্ষয় নেই বলে এদের ‘ফরএভার কেমিক্যালস’ বলে। পিএফএএস-এর প্রভাব পড়ে আমাদের স্বাস্থ্যে। তাই পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা পানীয় জলে ছয়টি সাধারণ পিএফএএসের ঘনত্বের সীমা নির্ধারণ করেছে। সম্প্রতি সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায়, গবেষকরা জানিয়েছেন যে অ্যাসিটোব্যাকটেরিয়ামের চারটি প্রজাতি কিছু পিএফএএস-এর রাসায়নিক বন্ধনকে ভেঙে ফেলতে পারে। এই তালিকায় কিছু অসম্পৃক্ত পিএফএএস রয়েছে। এদের রাসায়নিক গঠনের কারণে সম্পৃক্ত পিএফএএসের চেয়ে এদের ভেঙে ফেলা সহজ। গবেষকদের মতে বর্জ্য জল চিকিত্সা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অণুজীব ব্যবহার করে পিএফএএস ভেঙে ফেলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির মধ্যে একটি। ইতিমধ্যেই পিএফএএস দূর করতে কিছু কার্যকর পদ্ধতি রয়েছে, যেমন পরিস্রাবণ এবং তাপ চিকিত্সা। তবে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে এই জৈবিক পদ্ধতিতে জল পরিস্রুত করার বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। পদ্ধতিটি কম খরচে করা যায় এবং সহজেই ভূপৃষ্ঠের নীচে ভূগর্ভস্থ জলে প্রবেশ করানো যেতে পারে। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে জীবাণুগুলো কিছু অসম্পৃক্ত পিএফএএস-এ কার্বন-ফ্লোরিন বন্ধন ভেঙে দেয়। ডিফ্লুরিনেশন নামে পরিচিত এই প্রক্রিয়াটি এনজাইমের মাধ্যমে ঘটে। ফলে ফ্লোরাইড পরমাণু নির্গত হয়। এই পরমাণু সাধারণত ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। কিন্তু গবেষকরা দেখেছেন অ্যাসিটোব্যাকটেরিয়াম প্রজাতির এক ধরনের বিশেষ গঠন বা চ্যানেল রয়েছে যা তাদের কোশ থেকে পরিবেশে ফ্লোরাইড পাম্প করে বের করে দেয়। নিজের এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়াও বেঁচে যায়।
ডিফ্লুরিনেটিং এনজাইমের রাসায়নিক গঠন এবং বিস্তৃতভাবে তাদের সম্ভাব্য প্রভাব দেখার ক্ষেত্রে আরও গবেষণা প্রয়োজন। গবেষকদের মতে একটি জীবাণু পিএফএএস দূষণের একটি বিশ্বব্যাপী সমাধান হতে পারে এমনটা নয় তবুও, জৈবপ্রযুক্তিতে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার এককভাবে বা অন্যান্য পদ্ধতির সাথে একত্রে কাজ করতে পারে।