
পৃথিবীজুড়ে বহুল ব্যবহৃত এবং অত্যন্ত বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ পি এফ এ এস (পারফ্লুরোঅ্যালকাইল অ্যান্ড পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল সাবস্টেন্সেস)। এগুলি “ফরেভার কেমিক্যালস” নামেও পরিচিত। অতি দীর্ঘ কাল ধরে মানবদেহে জমা হয়ে এরা নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্ধ্যাত্ব, হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগের সঙ্গে এর সংযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ন্যেচার মাইক্রোবায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এক চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে। মানব অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া পি এফ এ এস শোষণ করে নিজেদের কোষের ভেতর সঞ্চয় করতে সক্ষম।
এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমআরসি টক্সিকোলজি ইউনিটের পরিচালক কিরণ পাতিল। তিনি জানান, পি এফ এ এস -এর ব্যাপকতা ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বিবেচনায় কার্যকর সমাধানের অভাব অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গবেষকদল ৩৮টি মানব অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখতে পান, অনেক ব্যাকটেরিয়া পি এফ এ এস শোষণ করে নিজেদের কোষের ভেতর জমা রাখতে পারে। বিশেষ করে “ব্যাকটেরিওডিস ইউনিফরমিস” নামক ব্যাকটেরিয়া মিলিমোল মাত্রার পি এফ এ এস জমা রেখেও স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ই.কোলাই ব্যাকটেরিয়া যখন ইফ্লাক্স পাম্পের মাধ্যমে অবাঞ্ছিত পদার্থ অপসারণ করে, তখন পি এফ এ এস শোষণের হার আরও বেড়ে যায়। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষকরা পি এফ এ এস কণা সরাসরি ব্যাকটেরিয়ার কোষে দেখতে সক্ষম হন, যা এই বিষয়ে প্রথম প্রত্যক্ষ প্রমাণ।
পরবর্তী পর্যায়ে গবেষকরা মানব অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ইঁদুরের শরীরে প্রয়োগ করে পরীক্ষা চালান। দেখা যায়,পি এফ এ এস গ্রহণের পর এই ব্যাকটেরিয়া পি এফ এ এস দ্রুত শোষণ করে মল দ্বারা দিয়ে শরীর থেকে বের করে দেয়, ফলে দেহে পি এফ এ এস এর সংক্রমণ কমে যায়। এই ব্যাকটেরিয়া পি এফ এ এসকে দলবদ্ধ ভাবে জমা রাখে, যা তাদের নিজস্ব অধিবিষের প্রতিক্রিয়া থেকেও রক্ষা করে।
গবেষণার ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে গবেষকরা “ক্যাম্বায়োটিক্স” নামক একটি নতুন উদ্যোগ প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে পি এফ এ এস নিরসনে বিশেষ জীবনদায়ী অণুজীব তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা আশা করছেন ২০২৬ সালের মধ্যে প্রথম জীবনদায়ী অণুজীব বাজারে আসবে। যদিও এখনও মানবদেহে পরীক্ষা বাকি, তবে গবেষকরা বিশ্বাস করেন,মানব অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার এই বিশেষ ক্ষমতা ভবিষ্যতে পি এফ এ এস এর ক্ষতিকর প্রভাব কমানোর কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে।