ফলের মাছির প্রেমগীতি মশা নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি!

ফলের মাছির প্রেমগীতি মশা নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৯ জানুয়ারী, ২০২৫

‘মশা’ ছোট্ট একটি প্রাণী কিন্তু তার দাপটে জীবন জ্বালাময়। সম্প্রতি আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নতুন গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, ফলের মাছি কীভাবে প্রণয় সঙ্গী নির্বাচন করে তা বোঝার মধ্য দিয়ে মশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্ভাবনী উপায় খুঁজে পাওয়া সম্ভব হতে পারে।

ফলের মাছিদের শ্রবণ প্রক্রিয়া অধ্যয়ন করে বিজ্ঞানীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ জিন সনাক্ত করেছেন। এই জিন স্ত্রী মাছিরা কীভাবে পুরুষদের প্রেমের গানে “মূর্ছনা তৈরি করে ” তা নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ একটি পুরুষ ফলের মাছি (প্রজাতি ড্রোসোফিলা মেলানোগাস্টার) তার ডানা ঝাপটায়, এবং একটি স্ত্রী মাছিকে আকর্ষণ করার জন্য একটি স্বতন্ত্র “গান” তৈরি করে৷ এই গানগুলি প্রতিটি প্রজাতির জন্য আলাদা, যা মাছিদের উপযুক্ত সঙ্গী সনাক্ত করতে সাহায্য করে। গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে ‘শ্যাল’ নামক একটি জিন মাছির অ্যান্টেনার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়নের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করে, যা নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কে তার শ্রবণশক্তিকে সূক্ষ্মভাবে সুরক্ষিত করতে সক্ষম করে।

মজার বিষয় হল, মশারাও এই ভাবেই মিলনের আচরণ প্রদর্শন করে , তাদেরও মিলনের জন্য শ্রবণ সংকেতের উপর নির্ভর করতে হয়। তাই মশার মধ্যেও এই শ্যাল জিনকে কাজে লাগিয়ে, বিজ্ঞানীরা তাদের মিলন প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে সক্ষম হতে পারেন । যার ফলে তাদের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে এবং জিকা, ওয়েস্ট নীল ভাইরাস এবং ইস্টার্ন ইকুইন এনসেফেলাইটিসের মতো মশাবাহিত রোগের বিস্তার মোকাবেলার কাজ সহজসাধ্য হতে পারে।

জনস্টনের অঙ্গ নামে পরিচিত অঙ্গটির মধ্যে তাঁরা পটাসিয়াম আয়নের একটি পথরেখা খুঁজে পেয়েছেন। অধ্যয়ন করে জানা গেছে সেটি মাছিদের শ্রবণের সঙ্গে জড়িত নিউরনগুলিতে শক্তি সঞচার করে। এই অঙ্গটি মূলত শব্দ কম্পন সনাক্ত করে। গবেষকরা দেখেছেন যে শ্যাল নামক জিনটি একটি দ্বাররক্ষক হিসেবে কাজ কর।, ফলে বাইরের শব্দ বা নড়াচড়া বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তরিত হয় যা পরে নিউরনের মধ্যে চলে যায় এবং মস্তিষ্কে শব্দ সংকেত প্রেরণে সক্ষম করে।

গবেষণার সাথে যুক্ত একজন স্নাতক গবেষক এলি গ্রেগরি বলেছেন, শ্যাল জিন না থাকলে , স্ত্রী মাছি সেই কমপাংকে সেই শুড়ে সুর শোনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে সেই স্ত্রী প্রাণীর কাছ থেকে মিলনের ক্ষেত্রেও সাড়া তুলনামূলক কম পাওয়া যায়।

প্রকৃতপক্ষে এই গবেষণা পোকামাকড়ের মধ্যেও সঙ্গমের মতো আপাতদৃষ্টিতে সহজ আচরণকে অধ্যয়ন করার তাৎপর্য তুলে ধরে। প্রাণীর আচরণের অন্তর্নিহিত জটিল প্রক্রিয়াগুলিকে বোঝার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা রোগ বহনকারী কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য অভিনব কৌশল তৈরি করতে পারেন।

সূত্র DOI: 10.1523/ENEURO.0083-24.2024

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × two =