ফ্যাটি লিভারের নতুন চিকিৎসা

ফ্যাটি লিভারের নতুন চিকিৎসা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফ্যাটি লিভার হল সুখী অসুখ,অর্থাৎ খাব বেশি খাটবো কম। দীর্ঘদিন ধরে কেউ যদি নিত্য মদ্যপান করে, কিংবা স্নেহকে অতি স্নেহে নিজের শরীরে জায়গা করে দেয়, তখন যকৃতের কোষেরাও স্নেহকণায় নিজেদের আষ্টে পৃষ্ঠ বেঁধে ফেলে। তখন রক্ত পরিশোধন, হজমে সাহায্য করা, শক্তি উৎপাদন এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করা প্রভৃতি লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়। প্রথমদিকে বিপজ্জনক মনে না হলেও, সময়মতো সচেতন না হলে এটি সিরোসিস (যকৃত শক্ত হয়ে যাওয়া/ ফাইব্রোসিস হওয়া), লিভার বৈকল্য, ক্যান্সার প্রভৃতি জটিলতার দিকে ঘুরে যেতে পারে। । সুস্থ জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ রোগীর জন্য আশার আলো দেখিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান ডিয়েগোর গবেষকদের দ্বারা নির্মিত এক নতুন পরীক্ষামূলক ওষুধ। এটি লিভারে চর্বি জমার মূল প্রক্রিয়াটাকে বন্ধ করে প্রাথমিকভাবেই রোগের শিকড়ে আঘাত হানতে সক্ষম।

এই নতুন ওষুধটির নাম ION224। এটি লিভারের DGAT2 উৎসেচককে বাধা দেয়। সাধারণত এই উৎসেচকই লিভারে চর্বি তৈরি ও জমতে সাহায্য করে। ION224 এর কাজ হল সরাসরি এই চর্বি জমার প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দেওয়া । ফলে লিভারে আর অস্বাভাবিক চর্বি জমতে পারে না, প্রদাহও কম হয়। ফলে এই রোগের কু-প্রভাবজনিত অগ্রগতি কার্যকরভাবে থেমে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক চিকিৎসা কেন্দ্রে পরিচালিত ট্রায়ালে ১৬০ জন রোগীকে এক বছরের জন্য এই ওষুধ দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ ডোজ গ্রহণকারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ রোগীর লিভারের অবস্থার স্পষ্ট উন্নতি দেখা গেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, এ উন্নতি রোগীর শরীরের ওজন কমা বা বাড়ার ওপর নির্ভর করেনি। অর্থাৎ, অন্য থেরাপির পাশাপাশি এটি নিরাপদে ব্যবহার করা সম্ভব। আরেকটি বিশেষ বিষয় হলো, কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রমাণ মেলেনি।

 

ফ্যাটি লিভার রোগের এক মারাত্মক রূপ হল ম্যাশ (Mash) । মূলত স্থূল ও টাইপ-টু ডায়াবেটিক রোগীরাই এতে বেশি ভোগেন। দীর্ঘদিন কোনো উপসর্গ ছাড়াই এই রোগটি শরীরে বাড়তে থাকে, এজন্য একে “নীরব অসুখ ” বলা হয়। রোগীরা প্রায়ই বুঝতেই পারেন না, যতক্ষণ না এটি ভয়ংকর রূপ নিয়ে সিরোসিস, লিভার বৈকল্য কিংবা ক্যান্সারে রূপ নেয়। তখন লিভার প্রতিস্থাপনই শেষ ভরসা।

দেখা গেছে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ১০ কোটিরও বেশি মানুষ এই সমস্যায় ভুগছেন। আর বিশ্বব্যাপী প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের একজন কোনো না কোনোভাবে আক্রান্ত।

গবেষক ড. রোহিত লুম্বা বলেন, “এই প্রথম কোনো ওষুধ ম্যাশ-এর মূল জৈব প্রক্রিয়ায় সঠিকভাবে কাজ করেছে। যদি পরবর্তী পর্বেও একই ফলাফল পাওয়া যায়, তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটাই হবে প্রথম নিশানা মুখী থেরাপি, যা রোগের অগ্রগতি থামাতে খোদ রোগের কারণকেই সমূলে উপড়ে ফেলতে সক্ষম।”

 

এই সম্ভাবনা শুধু রোগীদের জীবন রক্ষার নতুন আশার আলোই নয়, বরং ব্যয়বহুল লিভার প্রতিস্থাপন ও জটিল চিকিৎসার চাপ থেকেও স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে মুক্তি দিতে পারে। সামনে বৃহত্তর পরিসরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর যদি সাফল্য আসে, তবে খুব শিগগিরই এই চিকিৎসা কোটি কোটি রোগীর কাছে পৌঁছে যাবে।

 

সূত্র: “Antisense oligonucleotide DGAT-2 inhibitor, ION224, for metabolic dysfunction-associated steatohepatitis (ION224-CS2): results of a 51-week, multicentre, randomised, double-blind, placebo-controlled, phase 2 trial” by Rohit Loomba, Erin Morgan, et.al; (23. 8. 2025), The Lancet.

DOI: 10.1016/S0140-6736(25)00979-1

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − eight =