মালদা থেকে ক্রমে দক্ষিণের জেলাগুলোতে ভৌম জলে আর্সেনিকের অস্তিত্ব আগেই পেয়েছিলেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। এবার রামের সাথে সুগ্রীব দোসর হয়ে পাওয়া গেল ফ্লোরাইড যৌগ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ এর অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন একটি দল পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমপ্রান্তের দুটি জেলা বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া’র চাষের জমি ও ফসলের মধ্যে ফ্লোরাইডের সন্ধান পেয়েছেন।
ফ্লোরাইড কি?
প্রসঙ্গত ফ্লোরাইড বায়োস্ফিয়ারের ১২তম বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান। এবং বায়ুমন্ডলে থাকা উপাদান গুলির মধ্যে পরিমাণের দিক থেকে ফ্লোরাইডের স্থান ১৩ তম। যা মানবদেহের জন্যে ক্ষতিকর। ‘ফ্রন্টিয়ার ইন এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত তড়িৎবাবুদের জার্নাল থেকে জানা যাচ্ছে গোটা পৃথিবীতে আমেরিকা, ভারত, চীন, সৌদি আরব, উগান্ডা, ইথিওপিয়া সহ মোট ২৯টি দেশের প্রায় ২০ কোটি মানুষ ফ্লোরাইড বিষক্রিয়ায় প্রভাবিত। এই পরিমানূ প্রতিবছর বিপুল হারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ১৯৩৭ সালে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের নালগোন্ডা জেলায় প্রথম ফ্লোরাইড বিষক্রিয়ার প্রক্রিয়া সন্ধানে আসে বিজ্ঞানমহলের। এই মুহুর্তে আমাদের দেশের ২০টি রাজ্যের ৬০ লক্ষ শিশু সহ ৬ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ পানীয় জলের মাধ্যমে ফ্লোরাইড বিষে আক্রান্ত। উল্লেখ্য আক্রান্তদের পানীয় জলে ফ্লোরাইডের পরিমান প্রতি লিটারে ১.৫ মিলিগ্রাম। এবং দেশের ২০০ টি জেলায় প্রায় ৪০ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ ফ্লোরাইড অবস্থিত স্থানে বাস করেন। যাদের আগামী দিনে ফ্লোরাইড বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের বিপদ :
খুব স্বাভাবিক ভাবেই বোঝা যাচ্ছে জল থেকে উৎপাদিত শস্যেও পৌঁছে যাচ্ছে ফ্লোরাইড যৌগ। যা ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়াচ্ছে মানব স্বাস্থ্যের জন্যে।
পশ্চিমবঙ্গে ৮টি জেলায় ১২% মানুষ ফ্লোরাইড যুক্ত জল-জমির আওতাধীন। তড়িৎবাবুদের গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় কৃষিজমিতে ফ্লোরাইডের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি। বাঁকুড়ার চাইতেও পুরুলিয়ায় পরিমাণ বেশি। বিপদের সবচেয়ে বড় দিকটি এই যে, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় ফ্লোরাইড যৌগের ক্ষতিকর প্রভাব সবচেয়ে বেশি শিশুদের মধ্যে। রাজ্যের মানচিত্রের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলযুক্ত দুটি জেলায় চাষাবাদের প্রাধান সহায়ক ভৌম জল। সেই জল থেকেই বিষ চলে যাচ্ছে শস্যে। পাতাবিহীন সবজি যেমন, কুমড়ো, বেগুন, শসা, বিন্স ইত্যাদিতেই ফ্লোলাইড অধিক পরিমানে পৌঁছায়। তবে সামান্য হলেও আশার কথা একটিই, শিশুদের মধ্যেই রায়াসয়িন প্রতিরোধ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া ছাড়াও বীরভূমের জমি ও ভৌম জলের মধ্যে ফ্লোরাইড বিষের সন্ধান মিলেছে।
বাঁচার উপায়:
গবেষকরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টির জল বিষাক্ত ভৌম জলের সাথে মিশে ফ্লোরাইড লেভেলকে মাটির অনেক নিচে নামিয়ে দিতে পারে। তবে পশ্চিমাঞ্চলে প্রাকৃতিক কারণে বৃষ্টিপাত কম। তাই ব্যকটেরিয়া, ফাঙ্গি, শ্যাওলা ইত্যাদি জৈবিক রেমিডেশানের মাধ্যমে ব্যবহার করে মাটিতে ফ্লোরাইডের প্রভাব কমানো সম্ভব এবং বিষহীন সবজি উৎপাদন সম্ভব।
তাই প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মতভাবে সরকারি উদ্যোগ। তাছাড়া এ বিপদ থেকে মানব স্বাস্থ্যকে বাঁচানোর উপায় নেই।