বনে খাবারের অভাব

বনে খাবারের অভাব

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২১ জানুয়ারী, ২০২৪

কর্ণাটকের পশ্চিমঘাট অঞ্চলে ক্ষতিকারক উদ্ভিদের ফলে তৈরি হচ্ছে খাদ্য সংকট, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এক উদ্বেগজনক খবর উঠে এসেছে। পশ্চিমঘাট অঞ্চলে এমন কিছু উদ্ভিদ প্রজাতির বিস্তার দেখা যাচ্ছে যার ফলে দেশীয় গাছপালা তাদের মাটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এর ফলে পরিবেশে এক গভীর প্রভাব পরেছে, সৃষ্টি হচ্ছে পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার, উসকে দিচ্ছে খাদ্য সংকট। খাবারের অভাবে বন্য প্রাণীরা মানুষের বসতিতে হামলা করছে। প্রাণী ও মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্রতর হচ্ছে।
পশ্চিমঘাটের নৈসর্গিক কিছু অঞ্চল বিশেষ করে জাতীয় মহাসড়ক, রাজ্য মহাসড়ক এবং জেলার প্রধান সড়ক সংলগ্ন কিছু অঞ্চলে একটা রূপান্তর প্রত্যক্ষ করা গেছে। ওই অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ সহ অর্থনৈতিকভাবে মূল্যবান উদ্ভিদ যেমন কফি, অ্যারেকা, রেড স্যান্ডার্স, সেগুন, মেহগনি এবং রাবারের বদলে গজিয়ে উঠছে কিছু বিদেশী প্রজাতি যেমন সিমারউবা গ্লুকার। ক্ষতিকারক উদ্ভিদ প্রজাতি, যেমন ল্যান্টানা, ইউপেটোরিয়াম এবং পার্থেনিয়ামের মতো গাছ বন্য কিছু প্রজাতির ফলের গাছ যেমন আম, বুনো কাঁঠাল, বুনো কলা, ফরেস্ট জ্যাক এবং বিভিন্ন বেরির জাতীয় ফল যা বেশ কিছু প্রাণী, ইঁদুরদের খাবার, সেগুলো নষ্ট করে দিচ্ছে। ক্ষতিকারক প্রজাতির এই উদ্ভিদ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে পশ্চিমঘাট অঞ্চলের উদ্ভিদ ও প্রাণীজগত নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। চিতাবাঘের মতো বড়ো স্তন্যপায়ী প্রাণী, খাবারের সন্ধানে মানুষের আবাসস্থলে প্রবেশ করছে। বড়ো আকারের মাংসাশী প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের বাসস্থানের ক্ষতি এবং গাছপালার রূপান্তরের ফলে প্রাণীদের মধ্যে সংঘাত বাড়ছে।
সংরক্ষণবিদ গিরিধর কুলকার্নির মতে বান্দিপুর জাতীয় উদ্যানের (বিএনপি) ৮৭,২২৪ হেক্টর অঞ্চল দখল করেছে ল্যান্টানা, যা পার্কের মোট এলাকার প্রায় ৭৫%। এই গাছের বৃদ্ধি প্রাণীদের চলাফেরা বিঘ্নিত করে। কিছু কিছু অঞ্চলে, আগাছা এতটাই বেশি যে তার পিছনে একপাল হাতিও লুকিয়ে থাকতে পারে। নব্বইয়ের দশকে এই উদ্যানে চরে বেড়াত গৌড়, চিতল এবং হরিণের মতো কিছু তৃণভোজী প্রাণী। চারণ ক্ষেত্রগুলোয় প্রায়ই বাঘ, বন্য কুকুর এবং চিতাবাঘ শিকার করতে আসত। সেখানকার তৃণভূমি দখল করে নেয় আগাছা ফলত তৃণভোজীরা অন্যত্র চলে যায় বা খাবারের অভাবে মারা যায়। খাদ্যের অভাব এবং অবাধে চলাফেরা না করতে পারার ফলে বন্য প্রাণী মানুষের বসতিতে প্রবেশ করেছে। চিতাবাঘ গ্রামে ঢুকে কুকুর ও গবাদি পশু আক্রমণ করছে আর বাঘের মতো বড়ো মাংসাশী প্রাণীরা মানুষ ও গবাদি পশুদের আক্রমণ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 − 3 =