বন্যার জল ভাসিয়েছে পথ-ঘাট সবই। যতদূর দেখা যায় প্লাবিত অঞ্চল। মাঝে মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে দু’একটা কুঁড়ে ঘরের ছাদ। এই প্লাবনের মধ্যেও ছোট্ট ভেলা নিয়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রগুলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি, রবি কান্নন! গলায় ঝোলানো স্টেথোস্কোপ। সঙ্গে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজ এবং ওষুধের বাক্স। বন্যা-বিধ্বস্ত অসমের শিলচরে এটা শুধু অতিপরিচিত দৃশ্যই নয়, বন্যা-বিপর্যস্ত শিলচরের মুখ এখন এই পদ্মশ্রী প্রাপ্ত চিকিৎসক! প্লাবনে ইতিমধ্যেই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৫৪ লক্ষাধিক মানুষ। প্রাণ গেছে শতাধিকের। তবে এই বন্যা পরিস্থিতিতে আরও সঙ্গীন হয়ে উঠেছে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের অবস্থা। বন্যায় ভেসেছে সবকিছুই। যেখানে পথ-ঘাটই নেই, দু’বেলা খাবার পেটভরা পাওয়াও দুরূহ ব্যাপার, সেখানে চিকিৎসা পরিষেবার আশা করা বাতুলতাই বটে। এই অসহায় সময়ে শিলচরের ত্রাতা শহরের কাছার ক্যানসার হাসপাতালের ডিরেক্টর তথা সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট রবি কান্নন। ছোট্ট ভেলায় চেপে চিকিৎসা করছেন মুমুর্ষু রোগীদের।
আজ থেকে প্রায় দেড় দশক আগের কথা। চেন্নাই-এর খ্যাতনামা এক হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে তিনি চলে এসেছিলেন শিলচরে। স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা শুরু করেছিলেন দরিদ্র মানুষদের। এই হাসপাতালের ডিরেক্টর হওয়ার পর রোগীদের জন্য চালু করেছিলেন এক বিশেষ প্রকল্প। কেবলমাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে এই টেস্ট করার খরচটুকুই বহন করতে হত রোগীদের। বাকিন সবটাই প্রদান করত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২০২০-তে তাঁর এই প্রচেষ্টাকে বিশেষ সম্মান জানায় ভারত সরকার। পদ্মশ্রী পান তিনি। এবার বন্যা-বিধ্বস্ত অসমে তাঁকে আরও একবার দেখা গেল ত্রাতার ভূমিকায়। শুধুমাত্র চিকিৎসা করাই নয়, রোগীদের বাড়ি বাড়ি ওষুধও পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। কখনও প্রয়োজন পড়লে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে সংগ্রহ করে আনছেন টেস্টের নমুনা।