বলিভিয়ার হারানো দেবালয়

বলিভিয়ার হারানো দেবালয়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ জুলাই, ২০২৫

বলিভিয়ার টিটিকাকা হ্রদের দক্ষিণ প্রান্তে হারিয়ে যাওয়া এক প্রাচীন সভ্যতার মন্দিরের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা। এই সভ্যতা টিওয়ানাকু নামে পরিচিত। এটি আন্দিয়ান অঞ্চলের অন্যতম প্রাচীন ও সংগঠিত কৃষ্টি হিসেবে বিবেচিত এবং ইনকা সাম্রাজ্যের পূর্বসূরি। যদিও প্রভাবশালী, তবুও এই সভ্যতা রহস্যজনকভাবে প্রায় এক হাজার বছর আগে ধ্বংস হয়ে যায়। সম্প্রতি পেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় ও বলিভিয়ার এক গবেষক দল টিওয়ানাকু যুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্দির আবিষ্কার করেছেন, যা এই সভ্যতার সামাজিক কাঠামো, ধর্মীয় রীতিনীতি ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ সম্পর্কে নতুন তথ্য দিয়েছে।
নৃতত্ত্ববিদ ও গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক হোসে ক্যাপ্রিলেস জানান, নতুন আবিষ্কৃত এই মন্দিরটি বলিভিয়ার কারাকোল্লো অঞ্চলের একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত, যাকে স্থানীয় কৃষকরা চিনলেও আগে কখনও প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। মন্দিরটি ১২৫ মিটার লম্বা ও ১৪৫ মিটার চওড়া, যার মধ্যে ১৫টি আয়তাকার ঘেরা প্রাচীর এবং একটি কেন্দ্রীয় আঙিনা রয়েছে।
গবেষণা অনুযায়ী, এই অঞ্চলটি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথের সংযোগস্থল ছিল। উত্তরদিকে টিটিকাকা হ্রদের উর্বর উপত্যকা, পশ্চিমে শুকনো আলটিপ্লানো এলাকা যেখানে লামা পালন হতো, এবং পূর্বদিকে কোচাবাম্বার সমৃদ্ধ কৃষি এলাকা। ফলে এই স্থানের কৌশলগত গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।
স্যাটেলাইট চিত্র, ড্রোন উড্ডয়ন এবং ফটোগ্রামেট্রি(দ্বিমাত্রিক চিত্র থেকে ত্রিমাত্রিক চিত্র তৈরির প্রযুক্তি) প্রভৃতি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে, গবেষকরা মন্দিরের বিস্তারিত নকশা ও গঠন পুনর্গঠন করেছেন। মন্দিরের নকশা সৌর বিষুবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, অর্থাৎ যখন সূর্য পৃথিবীর বিষুবরেখার ঠিক উপর থাকে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে এখানে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পরিচালিত হতো।
মন্দিরের আশেপাশে পাওয়া গিয়েছে ‘কেরু কাপ’ নামের সিরামিক পাত্রের টুকরো, যা ঐতিহ্যবাহী মকাই (ভুট্টা)-এর বিয়ার ‘চিচা’ পান করার জন্য ব্যবহৃত হতো। মন্দিরে ভুট্টার অস্তিত্ব, যা স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন হতো না, দূরের কোচাবাম্বা থেকে আনা হতো, প্রমাণ করে এটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের কেন্দ্র ছিল।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, এই আবিষ্কার তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্ব বাড়িয়েছে এবং ভবিষ্যতে পর্যটন বাড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি করেছে। গবেষকরা আরও জানান, এরকম বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন এখনো মানুষের চোখের সামনে থাকা সত্ত্বেও অজানা রয়ে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven + sixteen =