পৃথিবীর ৭৫% জল হওয়া সত্ত্বেও পানীয় বা ব্যবহারযোগ্য জলের পরিমাণ মাত্র ১%। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে অব্যবহৃত জল রয়েছে, যা প্রাণীর ব্যবহার উপযোগী। এই জল সংগ্রহের জন্য এমন উপাদান প্রয়োজন যা দক্ষতার সাথে আর্দ্রতাকে ধরে সংগ্রহ করতে পারে, যাতে এটা পানযোগ্য জলে রূপান্তরিত হয়। জিলিন ইউনিভার্সিটি, এনওয়াইইউ আবুধাবির স্মার্ট ম্যাটেরিয়ালস ল্যাব এবং সেন্টার ফর স্মার্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালস-এর বিজ্ঞানীরা একটা কেলাসের উপাদান তৈরি করেছেন, যা কোনো শক্তি ছাড়াই কুয়াশা থেকে জল সংগ্রহ করতে পারে। মরুভূমির গাছপালা ও প্রাণী যারা শুষ্ক অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে তাদের আদলে জানুস ক্রিস্টাল নামে এই কেলাসগুলো তৈরি করা হয়েছে। যেমন বিবর্তনের ফলে মরুভূমির বিটল জাতীয় পোকা, টিকটিকির শরীরের পৃষ্ঠদেশের কাঠামো এমনভাবে বিকাশিত হয়েছে যার হাইড্রোফিলিক (জল আকর্ষণ) ও হাইড্রোফোবিক (জল বিকর্ষণ) উভয় ক্ষমতা রয়েছে। এরা বাতাস থেকে আর্দ্রতা ধরতে পারে। জল হাইড্রোফিলিক এলাকায় আকৃষ্ট হয় যেখানে জলের ফোঁটাগুলো জমা হয় আর হাইড্রোফোবিক এলাকার মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। রসায়নের অধ্যাপক প্যান্স নাউমভের নেতৃত্বে গবেষকরা আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির জার্নালে তাদের গবেষণা উপস্থাপন করেছে।
গবেষকরা তিনটে বহুমুখী রাসায়নিক জৈব যৌগ নিয়েছিলেন যার থেকে তারা ইলাস্টিক জৈব কেলাস তৈরি করেছেন। তারপরে তারা পরীক্ষা করে দেখেন যে এই উপাদানগুলোর প্রতিটা কীভাবে বায়ুবাহিত জলের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে, যার ফলে নতুন জল-সংগ্রহকারী উপাদান, জানুস ক্রিস্টাল তৈরি হয়। এগুলোর পৃষ্ঠে হাইড্রোফিলিক ও হাইড্রোফোবিক উভয় অঞ্চলই থাকে, এর মধ্যে একটা জল শোষণ করে আর অন্যটা জল স্থানান্তর করে, একটা আধারে সংগ্রহ করে। জল শোষণ ও সংগ্রহ একসঙ্গে হয় বলে এটা অত্যন্ত দক্ষ জল-সংগ্রহ প্রক্রিয়া । জানুস কেলাস দক্ষতার সঙ্গে আর্দ্র বাতাস থেকে সর্বোচ্চ আর্দ্রতা শোষণ করতে পারে। কেলাসগুলোর সংকীর্ণ, অস্বচ্ছ কাঠামোর জন্য গবেষকরা আলো ব্যবহার করে কুয়াশার ফোঁটা সংগ্রহ ও ঘনীভবন নিরীক্ষণ করতে সক্ষম হন। পানীয় জল উৎপাদনের জন্য জলের লবণ দূর করা একটা বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি, কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় শক্তির চাহিদা প্রচুর। কিন্তু জানুস কেলাসে ব্যবহৃত বায়বীয় আর্দ্রতা বা কুয়াশার ঘনীভবনের প্রক্রিয়া উপযুক্ত পরিস্থিতিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয়, যাতে শক্তির প্রয়োজন পড়েনা। উপরন্তু এটা পরিষ্কার জলের অফুরন্ত উৎস। গবেষকরা জানিয়েছেন, তাদের তৈরি করা কেলাসগুলো ভবিষ্যতে বড়ো পরিসরে ব্যবহার করে জলের ঘাটতি মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারে।