বিকল্প প্লেট টেক্টনিকের প্রমাণ মিলল

বিকল্প প্লেট টেক্টনিকের প্রমাণ মিলল

Posted on ৯ এপ্রিল, ২০১৯

টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথিতযশা ভূবিজ্ঞানী জে. তুজো উইলসন ১৯৬০ সালে যখন প্রথম প্লেট টেক্টোনিক তত্ত্বের প্রবর্তন করেন, তখনও পৃথিবীর ভৌত চরিত্র এবং আচরণ সম্পর্কে সেটাই ছিল সবচেয়ে আধুনিকতম গবেষণা। কয়েক দশক পর, টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ইস্তানবুল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে মধ্য তুরস্কের বিস্তীর্ণ আগ্নেয়গিরি এবং পর্বতাঞ্চলে গবেষণা চালানো হয়- শুধুমাত্র প্লেটের সংঘর্ষে নয়, পৃথিবীর উপরিতলের নীচে নিম্নতম প্লেটটি নিমজ্জিত অবস্থায় বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে।

মধ্য তুরস্কের অ্যানাতলিয়ান উপত্যকা বিগত ১০ মিলিয়ন বছর ধরেই ধীরে ধীরে উচ্চতা বৃদ্ধির মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে। পৃথিবীর ক্রাস্ট বা ম্যানটেল, অর্থাৎ লিথোস্ফিয়রের ঘনত্ব বৃদ্ধি হয়েছে এবং পোক্তভাবেই তা ঐ অঞ্চলের মাটির নীচে অবস্থান করছে। যখন লিথোস্ফিয়ার স্তরটি নিম্নতম ম্যান্টেলের নীচে নিমজ্জিত হয়, প্রথমেই জমির উপরিভাগে একটি অববাহিকা সৃষ্টি হয়েছিল। এবং ক্রমাগত ভাঙ্গনের ফলে স্তরটি ম্যান্টেলের আরও গভীরে প্রবেশ করে।

Plate tectonic structures in simulation
মধ্য অ্যানাতলিয়ার মাটির নীচে প্লেটের মাঝে অনেকটা ফাঁক থেকে গেছে, কারণ টেক্টনিক প্লেটের অধিকতর ওজনের দরুন তা ম্যান্টেলের অনেক গভীরে পৌঁছেছে। এবং কয়েকশো কিলোমিটার জায়গা জুড়ে মাটির স্তর ক্রমশ উপর দিকে উঠে আসছে লিথোস্ফিয়ারের অনুপস্থিতিতে, জানিয়েছেন অধ্যাপক অগুজ এইচ. গোগাস । প্রোফেসর গোগাস বর্তমানে ইউরেশিয়া ইন্সটিটিউট অফ আর্থ সায়েন্সের গবেষক, তিনিই মুখ্য উদ্যোক্তা নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রটির।
প্লেট সংকোচন অকস্মাৎ বন্ধ হলে, পর্বত বলয়ে গভীর ভাঁজ সৃষ্টি হয়। মধ্য তুরস্কের জমিতে যে ক্রনিক উচ্চতা বৃদ্ধি, তার কারণ ক্রমশ ঘন হতে থাকা লিথোস্ফিয়ার। সাধারণত প্লেট টেক্টনিক সীমানা থেকে এতও দূরে অবস্থিত উচ্চ তাপমাত্রার এই মালভূমি অঞ্চলে ভূগর্ভে কীভাবে লিথোস্ফিয়ার স্তরটি অবলুপ্ত হল – এ এক জটিল ধাঁধা।

প্রচলিত ভূতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণের বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে ক্ষমতাশালী কম্পিউটার মডেলের সাহায্যে দেখানো হয়েছে কীভাবে লিথোস্ফিয়ারের উপাদানগুলি ক্ষরিত হতে হতে সামগ্রিকভাবে এই অঞ্চলের উচ্চতা বৃদ্ধি হয়েছে।

Earth constructed of plates and layers
প্লেট টেক্টনিকের মৌলিক তত্ত্বগুলির চেয়ে নতুন এই গবেষণা পৃথক অবশ্যই, বলছেন সহ গবেষক প্রোফেসর রাসেল পিস্কলিভেক । তিনি আরও যোগ করেছেন, ম্যান্টেল স্তরের পরিচলন স্রোতের কারণে পাথুরে উপাদানগুলির খুবই ধীর গতিতে ভূগর্ভ থেকে পৃথিবীপৃষ্ঠে পৌঁছায়। ফলে, ভূপৃষ্ঠেও সচল প্লেট টেক্টনিকের সাক্ষী থাকেন বিজ্ঞানীরা।
পিস্কলিভেক পৃথিবীর আরও নানা জায়গার উদাহরণ পেশ করেছেন, যেখানে ভূপৃষ্ঠের নীচে লিথোস্ফিয়ার স্তরটিই অনুপস্থিত। যদিও শীঘ্রই আশঙ্কার তেমন কোনো কারণ নেই বলেই তাঁর দাবী।
প্রোফেসর গোগাস টেক্টনিকের সাথে সুন্দরভাবে মানবসভ্যতার সূক্ষ্ম যোগসূত্র টেনেছেন। মধ্য তুরস্কের এই অংশেই পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল একদিন। খ্রিস্টপূর্ব ৭-এও স্ট্রাবো’র জিওগ্রাফিকা বইতে লাইকাওনিয়া-র শীতল শুষ্ক অঞ্চলের উল্লেখ আছে, নিদর্শন আছে প্রাগৈতিহাসিক গুহায় অগ্ন্যুৎপাতের দেয়ালচিত্রেও।