মহাবিস্ফোরণের অস্তরাগে খুঁজে পাওয়া গেছে হারিয়ে যাওয়া কোনো এক অতীত ব্রহ্মাণ্ডের অবশিষ্ট অংশ, কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড(বা সংক্ষেপে সি.এম.বি)-এর নিগূঢ় পর্যবেক্ষণের পর এমনই মতামত কসমোলজিস্টদের।
কনফর্মাল সাইক্লিক কসমোলজি বা সিসিসি তত্ত্বকে জোরালো করবে নতুন এই খোঁজ। সিসিসি বলছে কী? – যে আমাদের এই মহাবিশ্ব এমন অনেক ব্রহ্মাণ্ডের একটা, আগের কোনো এক ব্রহ্মাণ্ডের ফেলে যাওয়া অংশ বলা চলে, ১৩.৬ বিলিয়ন বৎসর আগে বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের সময় তৈরি হয়েছিল। এই তত্ত্ব দাবী করে বিগব্যাং-এর মতো ঘটনা নাকি শাশ্বত চক্র, আমাদের আজকের এই ব্রহ্মাণ্ডও অনেক পরে গিয়ে ধ্বংস হয়ে আবার নতুন এক মহাবিশ্বের জন্ম দেবে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের দিকপাল অধ্যাপক রজার পেনরোজের নেতৃত্বে একটি দল নতুন এক গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেছে, তাঁরা ব্যতিক্রমী কিছু উচ্চশক্তির বৈশিষ্ট্য যা সাধারণভাবে ‘হকিং পয়েন্ট’ নামে খ্যাত, তা ঐ কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ডে খুঁজে পেয়েছেন। ব্ল্যাকহোল তার শেষ দশায় ‘হকিং রেডিয়েশন’-এর মধ্য দিয়ে বিলীন হতে থাকে, এই কারণেই ঐ ব্যতিক্রমী উচ্চশক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে ব’লে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। সাধারণ ধারণা এই যে, ব্ল্যাকহোল থেকে কোনোরকম আলোই পার পায় না। কিন্তু স্টিফেন হকিং এক অভিনব প্রক্রিয়ার প্রস্তাব দিয়ে গেছেন, যাতে সময়ের সাথে সাথে আলো ও কণাসমূহ ব্ল্যাকহোল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। ধীরে ধীরে শক্তি হারাতে থাকে এবং সংকুচিত হতে থাকে ব্ল্যাকহোল, কোয়ান্টামের হিসেবে শেষমেশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
‘অধুনা-নিঃশেষিত ব্ল্যাকহোল থেকে বিস্ফারিত শক্তি খুব দ্রুতহারে নবগঠিত ব্রহ্মাণ্ডে ছড়িয়ে পড়ে; একটি উষ্ণ কেন্দ্রবিন্দুকে ঘিরে শীতল অঞ্চল ( ‘কুলিং স্পট’ ) তৈরি হয়’ – জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সুইনবর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশ-বিশেষজ্ঞ অ্যালান ডাফি। রয়্যাল ইনস্টিটিউশান অফ অস্ট্রেলিয়া-র প্রধান বিজ্ঞানী ইনি, যদিও এই গবেষণায় তিনি যুক্ত ছিলেন না। তিনি বলছেন, ‘অন্যভাবে বললে, ওনারা এটাই প্রস্তাব রাখতে চাইছেন যে, কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ডে বিগত কোনো মহাবিশ্বের প্রতিধ্বনির খোঁজ করা যেতে পারে।’
যদিও, ব্রহ্মাণ্ডের বিবর্তনের প্রসঙ্গে এখনকার ‘স্ট্যান্ডার্ড মডেল’-এর সম্পূর্ণ পরিপন্থী অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে ‘কনফর্মাল সাইক্লিক কসমোলজি’-র নতুন এই প্রমাণ। প্রোফেসর ডাফি-র মতে, পুরনো যে সব সাইক্লিক ইউনিভার্স মডেল ছিল, সেখানে ‘বিগ ক্রাঞ্চ’ অর্থাৎ মহাবিশ্ব একটি বিন্দুতে একত্রিত হবে এই ধারণা কাজ করত; এই তত্ত্বে তা একেবারেই নেই। পরিবর্তে, এই ‘সি.সি.সি’ তত্ত্ব বলে, ডার্ক এনার্জির প্রভাবে প্রসারণশীল এই ব্রহ্মাণ্ড নাকি ‘বিগব্যাং’-এর সময়কার প্রসারণের সাথে সমতুল্য। গাণিতিকভাবে এই দুই প্রসারণের ঘটনার মধ্যে পার্থক্য না-থাকলেও অনেক ব্রহ্মাণ্ডবিশারদ এটা মানতে নারাজ যে, একটা বিগব্যাং থেকে আরেকটা বিগব্যাং সংঘটিত হয়ে নতুন মহাবিশ্ব তৈরি হয়। অতএব, পেনরোজ ও তাঁর সহকর্মীদের এই গবেষণা যে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীদের চুলচেরা বিশ্লেষণ আর বিরোধিতার মুখে পড়বে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।