বিজ্ঞান গবেষণায় নতুন বছরে আসন্ন পরিবর্তন

বিজ্ঞান গবেষণায় নতুন বছরে আসন্ন পরিবর্তন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫

১) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (কৃবু) এখন বিপুলভাবে বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে লাগছে। ভবিষ্যতে আরো বেশি করে লাগবে। উপযোগিতায় লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলকে ছাপিয়ে যাবে তা। নতুন ধরণের ছোটো পাল্লার কৃবু তৈরির ওপর জোর পড়বে। তারা অল্প পরিসরের উপাত্ত ভাণ্ডার থেকে শিখে নিয়ে সুনির্দিষ্ট যুক্তিশীলতার ধাঁধা সমাধান করবে। এরা কোনো লিপি বয়ান তৈরি করবে না, কেবল তথ্যসমূহের গাণিতিক উপস্থাপনাকে প্রক্রিয়াজাত করবে। এমনই একটি ছোট্টো কৃবু মডেল একটি যুক্তি-পরীক্ষায় বিশাল এক লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলকে হারিয়ে দিয়েছে।

২) ২০২৬ সালে দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হতে চলেছে। উদ্দেশ্য, বিরল জিন-বিকৃতিতে ভুগছে এমন শিশুদের ব্যক্তিনির্দিষ্ট চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এর মূলে আছে কে জে মুলডুন নামে একটি বালক শিশুর চিকিৎসা। সে একটি বিরল বিপাকীয় বিকৃতিতে ভুগত। যে-বিশেষ জিনের পরিব্যক্তির দরুন তার ওই বিকৃতি হয়েছিল, সেটাকে শুধরে নেওয়ার জন্য তাকে ‘ক্রিপ্সার’ জিন চিকিৎসা দেওয়া হয়। যে-দলটি ওই চিকিৎসা দিয়েছিলেন তাঁরা এখন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়াতে একটি ক্লিনিকাল ট্রায়ালের অনুমতি পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। এই ট্রায়ালে তাঁরা বিরল বিপাকীয় বিকৃতি যুক্ত আরো অনেক শিশুর ওপর এই জিন-চিকিৎসা কেমন কাজ করে তা যাচাই করতে চাইছেন। জানা গেছে, এই বিকৃতি ঘটে জিনের সাতটি বিভিন্ন রূপভেদ থেকে। উলডুনের চিকিৎসায় যে-ধরণের জিন সম্পাদনা করা হয়েছিল তারই সাহায্যে এর সবগুলিরই মোকাবিলা করা যাবে। অন্য একটি গবেষণা দল প্রতিরোধতন্ত্রর জিন বিকৃতি নিয়ে অনুরূপ একটি যাচাই-পরীক্ষা শুরু করার আশা করছেন।

৩) একবার মাত্র রক্ত পরীক্ষা করে পঞ্চাশ ধরণের ক্যান্সারের সুপ্ত লক্ষণ শনাক্ত করার জন্য ব্রিটেনে একটি বিশাল ক্লিনিকাল যাচাই-পরীক্ষা হয়েছে। ২০২৬ সালে তার ফলাফল প্রকাশিত হতে চলেছে বলে মনে হয়। ক্যান্সার কোষগুলি রক্তের মধ্যে ডি এন এ-র যেসব টুকরো ঢেলে দেয়, সেগুলিকে আলাদা করে শনাক্ত করতে চাইছে এই পরীক্ষা। তা থেকে জানা যাবে ঠিক কোন কোষকলা বা অঙ্গ থেকে সংকেত আসছে। চল্লিশ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে চলেছে এই পরীক্ষা। ফল যদি আশানুরূপ হয়, তাহলে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এই পরীক্ষা করার যন্ত্রপাতি হাসপাতালে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

৪) ব্রিটেনে ক্লিনিকাল ট্রায়ালকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ২০২৬-এর এপ্রিলে একপ্রস্থ নতুন নিয়মাবলী ঘোষিত হতে চলেছে। এ পরিবর্তন বিশ বছরের মধ্যে বৃহত্তম। এই নতুন নিয়মে গবেষকরা মাত্র একটি আবেদন করেই গবেষণার নৈতিকতা আর নিয়ন্ত্রণী ছাড়পত্র পেয়ে যাবেন। কিন্তু সেই সঙ্গে তাঁদের ওষুধ প্রয়োগ ঘটিত যাবতীয় ট্রায়ালে প্রথম অংশগ্রহণকারীকে নিয়োগ করার পূর্বে ট্রায়ালের কথা প্রকাশ্যে নথিভুক্ত করতে হবে; ট্রায়াল শেষ হওয়ার এক বছরের মধ্যে সেই ট্রায়ালের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করতে হবে। লক্ষ্য হল, গবেষণার গতি বাড়ানো, ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের বৈচিত্র্য বাড়ানো, আর মানুষের কছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পৌঁছে যাওয়ার সময় কমানো। এই মাসে আমেরিকাতেও একটি মাত্র ক্লিনিকাল ট্রায়াল করেই নতুন ওষুধ অনুমোদন লাভের জন্য নিয়মাবলীর প্রস্তাবিত পরিবর্তনের প্রক্রিয়াও চলতে থাকবে।

 

সূত্র: Nature, 18 December 2025.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven + nine =