বিজ্ঞানীদের মতে বিপজ্জনক ‘ফ্যাক্টর এক্স’ পৃথিবীর বরফ থেকে বাইরে আসার অপেক্ষায় আছে

বিজ্ঞানীদের মতে বিপজ্জনক ‘ফ্যাক্টর এক্স’ পৃথিবীর বরফ থেকে বাইরে আসার অপেক্ষায় আছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১৮ নভেম্বর, ২০২৩

পৃথিবীর বরফ দ্রুত গলে পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র এবং আমাদের স্বাস্থ্যের হুমকি বাড়াচ্ছে। কারণ এই বরফের মধ্যে অনেকগুলি সম্ভাব্য প্যাথোজেন রয়েছে যা একসময় আমাদের পূর্বপুরুষদের সর্বনাশ ঘটিয়েছিল। নিউজউইকের প্যান্ডোরা দেওয়ানের রিপোর্ট অনুসারে, বিজ্ঞানীরা ক্রমশ উদ্বিগ্ন হচ্ছেন যে পারমাফ্রস্টে কয়েক হাজার বছর ধরে সংরক্ষিত থাকার পরে ভাইরাসগুলি সফলভাবে পুনরায় জাগ্রত হয়ে উঠছে যা ভবিষ্যতের পক্ষে বেশ খারাপ লক্ষণ। উমিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ বির্গিটা ইভেনগার্ড দেওয়ান বলেছেন ফ্যাক্টর এক্স সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা সত্যিই খুব বেশি কিছু জানেন না। ভবিষ্যতে কী ধরনের হুমকি আসতে পারে তা অনুমানসাপেক্ষ। বরফ গলে আর্কটিকের সম্ভাব্য জল বৃদ্ধিতে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে গবেষকরা যা আবিষ্কার করেছেন তার ওপর গুরুতর নজরদারি বজায় রাখা প্রয়োজন। সংক্রামক রোগগুলির বেশিরভাগ মহামারী একটি অভিনব উৎস থেকে আসতে পারে, যেমন বন্য প্রাণী থেকে। গবেষণায় দেখা গেছে সংখ্যা এবং বৈচিত্র্য উভয় ক্ষেত্রেই জুনোটিক রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে, মৃত্যুর হার প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গবেষকদের পরিসংখ্যান জানাচ্ছে কোভিড ১৯-এর মতো বিপর্যয়মূলক ঘটনা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবং মানুষ যত বৃহত্তর বৈচিত্র্যে আবাসস্থলের দিকে আগ্রাসন করতে থাকবে, তত ঘন ঘন প্রকোপ ঘটবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। যদিও ইতিহাস জানাচ্ছে বাতাস বা অন্য মাধ্যমে এক হোস্ট থেকে অন্য হোস্টে রোগ ছড়িয়ে পড়ে, তবে সময়ের সাথে সাথে একটি প্যাথোজেনের বিশাল লাফ দেওয়ার যে সম্ভাবনা, তা গবেষকদের জন্য নতুন এক গবেষণার অঞ্চল। ২০১৬ সালে, উত্তর-পশ্চিম সাইবেরিয়ার বিরল জনবহুল ইয়ামালো-নেনেটস জেলায় ২০০০- টিরও বেশি রেইনডিয়ার এবং এক জন ব্যক্তির মৃত্যুর জন্য অ্যানথ্রাক্স দায়ী ছিল বলে জানা গেছে। গবেষকদের মতে এই বিশেষ প্রাদুর্ভাবের উৎস একটি সংক্রামিত প্রাণীর মৃতদেহ, যা সাইবেরিয়ার বরফে দীর্ঘকাল জমাটবদ্ধ ছিল। রোগের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া, ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস, একটি স্পোর হিসেবে অ্যাম্বারে আটকে থাকা একটি মৌমাছির ভিতরে হাইবারনেট করে কয়েক মিলিয়ন বছর থাকার পর পরীক্ষাগারে পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। কয়েক শতাব্দী ধরে এভাবে ভাইরাসগুলির হাইবারনেট করার দক্ষতা থাকতে পারে। গত বছর, গবেষকরা রাশিয়ান হ্রদের ১৬ মিটার নীচে হিমায়িত পলিতে পাওয়া ৫০,০০০ বছরের পুরানো অ্যামিবা ভাইরাসের পুনরুজ্জীবনের বিষয়ে রিপোর্ট করেছিলেন। যদিও ভাইরাসগুলিকে হোস্ট কোশে আটকাতে এবং ভিতরে প্রতিলিপি তৈরি করতে সঠিক পরিবেশের প্রয়োজন হয়, তবে তারা আমাদের কীভাবে কতটা সংক্রামিত করতে পারে তা অনুমান করা কঠিন।
অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা উচ্চ আর্কটিকের বৃহত্তম মিষ্টি জলের হ্রদ হ্যাজেনের মাটি এবং জলে পাওয়া ভাইরাসগুলির একটি ছবি তৈরি করতে ডিএনএ এবং আরএনএ সিকোয়েন্সিং ব্যবহার করেছেন। এবং তাদের গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে বরফ গলে যাওয়ায় হিমায়িত উত্তর “উদীয়মান মহামারীর জন্য উর্বর ভূমি” হয়ে উঠতে পারে।