কল্পনাপ্রবণ মনের অধিকারী যারা, তাঁরাই পারে চোখের দৃষ্টিসীমার বাইরেও দেখতে। পারে মনের আলোয় পর্যবেক্ষণ করতে কিংবা নানান বিষয়ের সঙ্গে অর্থপূর্ণ সংযোগসাধন করতে। রবীন্দ্রনাথের কথায় বললে, ‘সমস্ত চৈতন্য দিয়ে দেখতে’। আর ‘চোখের আলোয়’ এই যে ‘চোখের বাহির’-কে দেখতে পারার ক্ষমতা – সে ক্ষমতার সঙ্গে যখন মেধা আর অন্তর্দৃষ্টি-র ক্ষমতাও যুক্ত হয়; এমন ক্ষমতার অধিকারী হয়েছে যারা, তারাই তো সার্থকতার সন্ধান পায়।
কল্পনাশক্তির কথা উঠলে, প্রথমেই মনে আসবে কবি সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী বা শিল্পকলার অন্যান্য ক্ষেত্রের সৃষ্টিশীল মানুষদের কথা। সেটাই স্বাভাবিক। কেননা শিল্প, সাহিত্য, সংগীত, নাটক কিংবা কবিতা-র জগতের মানুষদের ক্ষেত্রে কল্পনাপ্রবণ মনের প্রয়োজনীয়তা যে ভীষণ জরুরি, তা কে না জানে? তবে ‘কল্পনাশক্তি’ কেবল একচেটিয়া কাব্য বা শিল্পকলা জগতের মানুষদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। বিজ্ঞান প্রযুক্তি জগতের মানুষদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে সত্য। এই লেখার উপজীব্য মূলত বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে থাকা মানুষের কল্পনাপ্রবণ মনের বিশেষ ভূমিকা নিয়ে।
বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে মানুষের মৌন সংলাপই বিজ্ঞানের ভিত্তি। বিজ্ঞানের কাজ হল, বিশ্বপ্রকৃতির দুর্জ্ঞেয় রহস্য আর নিয়মকানুনগুলিকে জানা আর বোঝার চেষ্টা করা। মহাবিশ্বের অভাবনীয় সৌন্দর্য আর প্রকৃতির মধ্যে যে অসামান্য বৈভব, বৈচিত্র্য, সামঞ্জস্য, স্থিরতা, অস্থিরতা – সে সম্বন্ধে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা। এই জানা এবং বোঝার জন্য বিশেষভাবে যে গুণ থাকা দরকার তা হল – অনুভবী আর কল্পনাপ্রবণ মন। প্রকৃতির অধরা মাধুরির ছন্দবন্ধনকে ছুঁতে পারা, যথেষ্ট কঠিন কাজ! তার জন্যে মেধার পাশাপাশি লাগে তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ শক্তি, জাগরুক ও অনুসন্ধানী মন। আর প্রয়োজন অন্তর্দৃষ্টি এবং কল্পনাশক্তি। কেবলমাত্র তথ্য ও জ্ঞানের সম্ভার দিয়ে কখনওই সফলতা আসতে পারে না ।
যদিও বিজ্ঞানে কল্পনাশক্তির কথা নতুন কিছু নয়। অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের সেই উক্তিটি ‘Imagination is more important than knowledge.’ মনে পড়বে। শুধু আইনস্টাইন কেন, আরও অনেক বিখ্যাত মানুষ বিজ্ঞানে কল্পনাশক্তির প্রসঙ্গ নিয়ে বলেছেন। বিশ্ববন্দিত বিজ্ঞানী স্যার উইলিয়াম লরেন্স ব্রাগের কথা – ‘The important thing in science is not so much to obtain new facts as to discover new ways of thinking about them.’ আমরা পড়েছি। ইনিই সেই লরেন্স ব্রাগ, মাত্র ২৫ বছর বয়সে যিনি পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পান (১৯১৫)। ‘ব্রাগস-ল-অফ-এক্স-রে-ডিফ্রাক্সান’- যুগান্তকারী এই কীর্তিস্তম্ভ স্মরণীয় ক’রে রেখেছে তাঁকে। এ-প্রসঙ্গে মনে পড়বে হাঙ্গেরিয়ান কীর্তিমান ডাক্তার বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট সয়েন্ট জর্জির কথাও। ১৯৩৭ সালে ফিজিওলজি ও মেডিসিন বিভাগে নোবেল পুরস্কার পান জর্জি। তিনি একটু অন্যভাবে বললেন – ‘Discovery consists of seeing what everybody has seen and thinking what nobody has thought’। প্রত্যেকের কথা একই সুরে বাঁধা। স্বকীয় দৃষ্টিভঙ্গি আর বোধের কথা বলেছেন ওঁরা। মূলত এটাই পার্থক্য গড়ে দেয় একজন সৃষ্টিশীল উদ্ভাবকের সঙ্গে অন্য আর একজনের । কিন্তু কল্পনাশক্তির সবটাই কি সহজাত ক্ষমতা? না কি এর পরিসর বাড়ানো সম্ভব? এ-বিষয়ে কোনো উত্তর আছে কিনা সেই অনুসন্ধান করতে গিয়ে যা জানতে পেরেছি , সেই সমীক্ষার কথা বলব এখানে।
জ্ঞানের একাধিক বিষয়ে চর্চা করার সঙ্গে কল্পনাশক্তি বাড়ার একটি সম্পর্ক আছে। কয়েকজন গবেষক এরকমই উল্লেখ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, বিভাগের সীমারেখা ভেঙে জ্ঞানচর্চার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক গড়ে উঠলে, সেক্ষেত্রে কল্পনা এবং জ্ঞানের পরিধি সমৃদ্ধ ও বিস্তৃত হয়। এভাবেই বোধ আর কল্পনার জানলাগুলি খুলে যাওয়া সম্ভব। দেখা গেছে মেধাবী আর জিনিয়াস মানুষরা তাঁদের মগজকে সজীব, সক্রিয় আর উদ্দীপিত রাখেন এভাবেই। একাধিক বিষয়ের সংলগ্নতা যে কল্পনার পরিসর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হয়, তা বিশ্ববন্দিত কৃতবিদ্য বিজ্ঞানীদের আগ্রহের বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে সমীক্ষা করলেই স্পষ্ট হয়। দেখা গেছে, শতাধিক নামজাদা বিজ্ঞানীর শিল্পকলার নানান বিভাগে আগ্রহ এবং নিবিড় সংযোগ রয়েছে। বিজ্ঞানের পাশাপাশি কখনও তা সংগীত, চিত্রশিল্প, কবিতা কিংবা কখনও বা চারুকলা। এইভাবে বিজ্ঞানীর নিজের ভুবনের সঙ্গে গ’ড়ে উঠেছে অন্যতর সৃজনশীল ভুবনের এক মেলবন্ধন। প্রথমেই বলব ভ্যান্ট হফ-এর কথা। পুরো নাম জ্যাকোবাস হেনরিকাস ভ্যান্ট হফ। জন্ম নেদারল্যান্ডসে। জগদ্বিখ্যাত একজন রসায়নবিদ। কেমিক্যাল কাইনেটিক্স, কেমিক্যাল ইকিউলিব্রিয়াম, অসমোটিক প্রেসার আর স্টিরিও-কেমিস্ট্রিতে তাঁর অবদানের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। মিশ্রণ-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১৯০১ সালে তিনি রসায়নে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। প্রায় একশো পঁয়ত্রিশ বছর আগে, তখন ১৮৭৮ সাল। আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণ অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেছেন ছাব্বিশ বছরের তরুণ ভ্যান্ট হফ। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্রারম্ভিক বক্তৃতা দিতে হবে তাঁকে। বক্তৃতার জন্যে ভ্যান্ট হফ অন্যরকমের একটি বিষয় বাছলেন। তাঁর বক্তৃতার শিরোনাম ছিল ‘ইমাজিনেশন ইন সায়েন্স’।
সেই বক্তৃতায় অভিনব এক সমীক্ষা পেশ করেন ভ্যান্ট হফ। যা ছিল আসলে চারুকলা, শিল্প, সংগীত বা আর্টের সঙ্গে বিজ্ঞানের সংযোগ নিয়ে। বিষয়টি খুলে বলি। বিজ্ঞানের সঙ্গে শিল্পকলার যোগসূত্রের কথায় বরেণ্য বিজ্ঞানীদের কথা উল্লেখ করেন ভ্যান্টহফ। সেই তালিকায় ভ্যান্ট হফের পূর্বসূরি দু’শ জনবরেণ্য বিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বিদের নাম উঠে এসেছে , শিল্পকলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছে যাঁদের সংযোগ। ভ্যান্ট হফ আরও বললেন, একজন বিজ্ঞানীর আগ্রহের পরিধিতে যদি চারুকলা, শিল্প, সংগীত বা আর্ট থাকে, তাহলে সেই সংযোগ পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। তিনি বিশ্বাস করতেন কেবলমাত্র জ্ঞান (Knowledge) বা তথ্য (Information) জানা-র ওপর সায়েন্টিফিক-ক্রিয়েটিভিটি নির্ভর করে না। প্রয়োজন কল্পনাশক্তি। ভ্যান্ট হফের বলা সেই লম্বা তালিকায় রয়েছে কোপারনিকাস থেকে গ্যালিলিও, কেপলার, নিউটন, ডেভি, বয়েল, হার্শেল, ফ্যারাডে প্রমুখ দিকপাল বিজ্ঞানীদের নাম। বিজ্ঞানীসত্তা ছাড়া আর্ট বা শিল্পের সঙ্গেও যে এইসব কিংবদন্তি জ্যোতির্বিদ বা বিজ্ঞানীদের কোনো নিবিড় সংযোগ আছে, এমন কথা সত্যিই আমাদের অজানা ছিল। অসাধারণ চিত্রশিল্পি ছিলেন কোপারনিকাস। তিনি কবিতারও চর্চা করতেন। তেমনি, শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চাতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না গ্যালিলিও। চিত্রশিল্প ,চারুকলা, কবিতা, গানবাজনাতেও ছিল তাঁর গভীর অনুরাগ। লিখেছেন অজস্র কবিতাও। স্বনামধন্য বিজ্ঞানী জোহানেস কেপলার যে একজন পরিপূর্ণ মিউজিসিয়ান আর কম্পোজার ছিলেন, তা ক’জনই বা জানে? তেমনি, আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছেন যে আইজ্যাক নিউটন, তিনি ছবি আঁকতেন এবং কবিতা লিখতেন! ভ্যান্ট হফের সেই ভাষণে এসেছে আধুনিক রসায়নবিদ্যার স্থপতি স্যার হামফ্রে ডেভির কথা। কবিতার অনুরাগী ছিলেন ডেভি। কাব্যরস সমৃদ্ধ অনেক কবিতা রচনা করেন তিনি। এছাড়াও আমরা জানতে পারি, উদ্ভাবক ডেভি-র সঙ্গে গভীর সখ্য ছিল স্বনামধন্য কবি স্যামুয়েল ট্যেলর কোলরিজ এবং ওয়ার্ডসয়ার্থ-এর। বুঝতে অসুবিধা হয় না, বিজ্ঞানী ডেভি কাব্যরসেও কতখানি সিঞ্চিত ছিলেন! ভ্যান্ট হফ যখন ‘ইমাজিনেশন ইন সায়েন্স’ বলছেন, বলা বাহুল্য, তখন নোবেল পুরষ্কারের প্রবর্তন হয়নি । ১৯০১ সাল থেকে শুরু হয় এই পুরষ্কার দেওয়া। রসায়নে প্রথম নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ভ্যান্ট হফ। বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কারকে চুড়ান্ত সফলতার মাপকাঠি হিসেবে ধ’রে, নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীদের শিল্পকলায় আগ্রহ সম্পর্কে অনুসন্ধান করলে কি সেখানেও ভ্যান্ট হফের সমীক্ষার মতো ফলাফল মিলবে? বস্তুত এক্ষেত্রেও সমীকরণটি একই রকমের । অর্থাৎ নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রেও শিল্পকলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছে তাঁদের সংযোগ স্পষ্ট।
শিল্পকলায় অনুরাগী সেইসব বিশ্ববন্দিত বিজ্ঞানীদের নামের তালিকাটি দীর্ঘ! তাই সেখান থেকে দৃষ্টান্তস্বরূপ কয়েকজন বিশ্ববিশ্রুত নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীর কথাই বলব এখানে। ভ্যান্ট হফকে দিয়েই শুরু করব সেই তালিকা। ভ্যান্ট হফের জীবনের কথা থেকে তাঁর শিল্পী মনের পরিচয়টি উঠে এসেছে। বিজ্ঞানের পাশাপাশি কাব্য ও সংগীতকলাতেও গভীর অনুরাগ ছিল ভ্যান্ট হফের। বলা যায় যে, কাব্য ও সাংগীতিক মননের এই সংযোগ ও পরিবোধ থেকেই ভ্যান্ট হফের বিজ্ঞানভাবনায় উদ্দীপনা সঞ্চারিত হয়েছে। এই বহুমুখী আগ্রহ ও অন্তর্ভুক্তিই হয়তো তাঁকে পরিপূর্ণভাবে গ’ড়ে উঠতে সাহায্য করেছে। ভ্যান্ট হফ যেমন তাঁর পূর্বসূরী প্রতিভাধর বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে শিল্পকলায় সংযোগের কথা বলেছেন, একইভাবে ভ্যান্ট হফের সম্পর্কেও সে কথা প্রযোজ্য। কেন না জানতে পারছি যে, তিনিও ছিলেন কবিতা ও চিত্রশিল্পের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত।
আমরা জানি প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন ১৯২১ সালে। তাত্ত্বিক-পদার্থবিজ্ঞানে তাঁর অনন্যকীর্তির পাশাপাশি আইনস্টাইন যে একজন আদ্যপ্রান্ত মিউজিসিয়ানও ছিলেন, ছিলেন নিমগ্ন পিয়ানো ও বেহালা শিল্পী – তা অনেকেই জানি না। মিউজিক যে কী ব্যাপকভাবে তাঁর বিজ্ঞান মননের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছিল, আইনস্টাইন নিজেই সে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘থিওরি অফ রিলেটিভিটি আমার কাছে ধরা দেয় স্বজ্ঞা (ইন্টিউশন) থেকে। আর এই ইন্টিউশনের পেছনে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে মিউজিক। আমার যখন ছ-বছর বয়স তখন আমার বাবা আমাকে ভায়োলিন শেখানোর জন্য ভর্তি করেন। আমার এই নতুন আবিষ্কার বস্তুত আমার মিউজিক্যাল পারসেপশেনরই ফসল।’ ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক; বিশ্ববন্দিত এই বিজ্ঞানী স্মরণীয় হয়ে আছেন যুগান্তকারী কোয়ান্টাম তত্ত্বের উদ্ভাবক হিসেবে। ১৯১৮-তে তিনি ফিজিক্সে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন এই কাজের জন্য। এই বিজ্ঞানী একজন অসাধারণ মেধাবী যন্ত্রশিল্পীও ছিলেন। পিয়ানো আর অর্গান বাজানোতেও তিনি দারুণ পারদর্শী ছিলেন। অনেক সংগীত সৃষ্টি করেছেন এবং সুর রচনা করেছেন প্ল্যাঙ্ক। আইনস্টাইনের সঙ্গে ছিল তাঁর গভীর বন্ধুত্ব। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক এবং আইনস্টাইন ডুয়েট যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশনও করেছেন একাধিকবার! রিচার্ড ফেইনম্যানের (১৯১৮- ৮৮) কথাও উল্লেখা করতে হয়। অসামান্য মেধাবী কৃতবিদ্য এই পদার্থবিদ বিংশশতাব্দীর একজন অন্যতম মাইলফলক উদ্ভাবক। ১৯৬৫ সালে ফিজিক্সে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। বিজ্ঞানে তাঁর গগনচুম্বী সাফল্য তার। সেই ফেইনম্যান চুয়াল্লিশ বছর বয়সে ছবি আঁকার শিক্ষা নিচ্ছেন! এবং তারপর থেকে বিজ্ঞানসাধনার পাশাপাশি আজীবন তিনি ছবি এঁকেছেন। শিল্পী বন্ধুর স্টুডিয়োতে ব’সে পোট্রেট এঁকেছেন, চিত্রায়ণ করেছেন ঘন্টার পর ঘন্টা ধ’রে একাধিক মডেলদের নানা শরীরী বিভঙ্গিমা। বিখ্যাত চিত্রশিল্পের সমগোত্রীয় তাঁর শতাধিক চিত্রশিল্প, রেখাচিত্র আর ড্রয়িংগুলি দেখলে আশ্চর্য হতে হয়। পেন্টিং ছাড়াও ফেইনম্যান একজন দুর্দান্ত বংগো-বাদকও ছিলেন। বিজ্ঞান কেমন ক’রে সমৃদ্ধ করেছে কবিতাকে কিংবা কবিতা ও শিল্পবোধ কেমন ক’রে বিজ্ঞানবোধের দিগন্তকে আরও প্রশ্নাতুর করেছে – এই মেলবন্ধনের আর একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র রোয়াল্ড হফম্যান (১৯৩৭)। এই সময়ের একজন নোবেলজয়ী রসায়নবিদ। জৈব ও অজৈব অণুর জ্যামিতিক গঠন সক্রিয়তা সংক্রান্ত গবেষণার জন্যে ১৯৮১ সালে রসায়নে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসায়নিক জীববিজ্ঞান বিভাগে গবেষণা ও অধ্যাপনায় নিযুক্ত। পাশাপাশি সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গেও রয়েছে তাঁর নিবিড় এবং দীর্ঘ সম্পর্ক। বস্তুত তিনি একজন আদ্যপ্রান্ত কবিও। এই বিজ্ঞানী-কবির রচনা একাধিক কবিতার সংকলন, মননঋদ্ধ গদ্যসাহিত্যের সংকলন আর নাটক প্রকাশিত হয়েছে। অণু-পরমাণুর অন্দরমহলের যে অসীম বিস্ময়, যে শৈল্পিক সুষমা, তারই খোঁজে হফম্যানের অনুসন্ধান জারি রয়েছে আজও।
হফম্যান-এর লেখা তিনটি নাটকের মধ্যে একটি লিখেছেন যুগ্মভাবে কার্ল জেরাসির (১৯২৩ -১৯১৫) সঙ্গে। মঞ্চসফল এই নাটকের নাম ‘অক্সিজেন’। প্রায় পনেরোটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এই নাটক। কার্ল জেরাসিও একজন প্রবাদপ্রতিম রসায়নবিদ। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের অধ্যাপনায় নিযুক্ত ছিলেন তিনি। সিনথেটিক হরমোনের আবিষ্কারক হিসেবে তিনি বিশ্ববিখ্যাত। ১৯৫১ সালে উদ্ভাবন করেছেন ‘ন্যরথিন্ড্রন’ নামের স্টেরয়ড যৌগ, বিশ্বে যা প্রথম ওরাল কন্ট্রাসেপ্টিভ। জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল। বিংশ শতাব্দীর এই দিগদর্শী উদ্ভাবন এবং অসামান্য অবদানের জন্যে তিনি পেয়েছেন একাধিক শিখরউঁচু সন্মান ও পুরষ্কার । বিশ্ববিখ্যাত রসায়নবিদ কার্ল জেরাসি একজন সমাদৃত প্রবন্ধকার ও ঔপন্যাসিকও ছিলেন। ‘অক্সিজেন’ ছাড়াও লিখেছেন আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাটক। আর দৃষ্টান্ত বাড়াতে চাই না । তবে দুজন প্রথিতযশা বিজ্ঞানীর কথা উল্লেখ না-করলেই নয়। তাঁরা নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হননি ঠিকই। তবে তাঁদের বৈজ্ঞানিক মনীষা, মৌলিক গবেষণার অবদান আর উদ্ভাবনার গুরুত্ব বিচার করলে, নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীদের সঙ্গে তাঁদের যে এক সারিতে বসানো যায় তাতে কোনও সন্দেহ নেই। একাধিক কৃতবিদ্য বিজ্ঞান গবেষকরা তাঁদের গবেষণা সম্পর্কে এরকমই মূল্যায়ন ক’রে থাকেন। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, জগদীশ্চন্দ্র বসু আর সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কথা বলছি।
বেতারতরঙ্গ উৎপাদন ও গ্রাহকযন্ত্রে তা ধরার ব্যবস্থা – যুগান্তকারী এই উদ্ভাবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জগদীশচন্দ্রের নাম। মাইক্রোওয়েভ সংক্রান্ত কাজ এবং প্রাণ-পদার্থবিদ্যা বিষয়ে অভিনব মৌলিক গবেষণার জন্য তাঁর খ্যাতি সারা পৃথিবীতে। গবেষণার প্রয়োজনে ব্যবহার উপযোগী সূক্ষ্ম যন্ত্রাদি নির্মাণেও ছিল তাঁর বিস্ময়কর প্রতিভা। এইভাবে নিজের উদ্ভাবিত যন্ত্রের সাহায্যে তিনি করেছেন তাঁর বহু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নিরীক্ষা। বস্তুত তাঁর সমকালীন বিজ্ঞানীদের থেকে ভাবনায় ও কাজে তিনি অনেক এগিয়ে ছিলেন। সাহিত্য ও বিজ্ঞানকে কখনও আলাদা করে দেখেননি জগদীশচন্দ্র। তাঁর সঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সখ্যের কথা আমাদের অনেকেরই জানা। সমসাময়িক শিল্পী সাহিত্যিক মহলের সঙ্গেও ছিল তাঁর নিবিড় সংযোগ। পারস্পরিক এই সংযোগই আমাদের বুঝিয়ে দেয় জগদীশের শিল্পীমানস সম্পর্কে। তাঁর বাংলায় লেখাগুলির সংকলন ‘অব্যক্ত’ বইটির সাহিত্যগুণ সম্পর্কে আমরা সকলেই ওয়াকিবহাল। বিরল প্রতিভাধর সত্যেন্দ্রনাথ বসু। বোস-সংখ্যায়ন তাঁর অক্ষয় কীর্তি। গত নব্বই বছর ধ’রে কণাবিজ্ঞানের যে বিশাল সৌধ গড়ে উঠেছে, তাঁর অন্যতম স্তম্ভ হল সত্যেন্দ্রনাথ উদ্ভাবিত ‘বোস-সংখ্যায়ন’। বোস-সংখ্যায়নের সূত্র ধ’রে একাধিক বিজ্ঞানী নোবেল পুরষ্কার লাভ করেছেন। গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ ছিলেন তিনি। তবু বিভাগের সীমানা ছাড়িয়ে তাঁর আগ্রহের পরিধিতেতে ছিল জীববিদ্যা কিংবা রসায়ন। পাশাপাশি সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস বিভাগেও ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ । তাঁর নিজের কথায় ‘আমি চাই না শুধু একটি বিষয়েই একতারা বাজাতে, আমার হৃদয়ের নানা তারকে বাধতে চেষ্টা করি নানা সুরে।’ সংগীত, চারুকলা ও গীতবাদ্যেও গভীর আগ্রহ ছিল বিজ্ঞান তপস্বী সত্যেন্দ্রনাথের। বস্তুত তিনি একজন নিমগ্ন সংগীতরসিক ছিলেন। বিশেষ ক’রে যন্ত্রসংগীত ছিল তাঁর কাছে অতীব প্রিয়। বিশারদ প্রতিভাধরদের মতো তিনি বাজাতে পারতেন এসরাজ। ফাইন আর্টসেও ছিল গভীর আগ্রহ। আমরা অনেকেই জানি না যে, স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী যামিনী রায়ের সঙ্গেও ছিল তাঁর সখ্য। প্রাচ্য, পাশ্চাত্য, লোকসংগীত, ধ্রুপদী সংগীত – সবধরণের সংগীতেই ছিল তাঁর অনুরাগ। কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা ধ্রুপদী সংগীতের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ থাকলে তিনি অনুষ্ঠানে যাননি, এমনটা কদাচিৎ হয়েছে। শুধু উচ্চমানের বিজ্ঞান গবেষণাই নয়; সাহিত্য, শিল্পকলা বিভাগেও তাঁর ছিল অবাধ বিচরণ। উল্লেখ করতে হয়, স্বনামধন্য কবি বিষ্ণু দে-র ‘পরিচয়’ পত্রিকার সাপ্তাহিক সান্ধ্য আড্ডায় সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন অন্যতম সদস্য। যেখানে তিনি নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন, বিজ্ঞানী হিসেবে নয়, সাহিত্যরসিক হিসেবে।
আর্ট, শিল্প, সংগীতকলার সাংস্কৃতিক মনন যখন বিজ্ঞান সংস্কৃতির সঙ্গে গ’ড়ে তোলে অপূর্ব সমন্বয় আর সংযোগ, তখন এই সংযোগই অন্তরের আবেগ, বোধ আর অনুভূতিগুলিকে জাগ্রত ও পুষ্ট হয়ে উঠতে সাহায্য করে। অজস্র বিরল প্রতিভাধর বিজ্ঞানীদের উদাহরণ থেকে সে কথা বোঝা যায় । এই যে সৃজনশীলতা বিকাশের সঙ্গে বহুমুখী আগ্রহ ও চর্চা। বিজ্ঞানের সঙ্গে শিল্পকলা বা সংগীতের সংযোগ এবং তার প্রভাব। বিজ্ঞানসঙ্গত ভাবেও ব্যাখ্যা হয়েছে তার। কাব্যবোধ, শিল্পকলা কিংবা সুর ও সংগীত, মানুষের মগজের ক্রিয়াকলাপে নানাভাবে প্রভাব ফেলে। আধুনিক মগজ বিজ্ঞানের গবেষণা থেকে সেরকমই ইঙ্গিত মিলেছে। এখানে সেসব প্রসঙ্গে যাব না। কেবল নোবেলজয়ী পদার্থবিদ সুব্রামনিয়াম চন্দ্রশেখরের (১৯১০-১৯৯৫) একটি উক্তি উল্লেখ করতে চাই। তিনি বলেছেন, ‘কেউ যদি সচেতন ও সুশৃঙ্খলভাবে শিল্পকলার প্রতি নিবিড় অনুরাগ ও সংযোগ জাগিয়ে রাখতে পারেন, সেক্ষেত্রে তাঁর বিজ্ঞানচর্চা উন্নততর হবে ব’লেই আমার নিশ্চিত ধারণা।’ ইতিহাসের পাতায় বেশ কিছুটা পিছনে তাকালে দেখতে পাব, সে-সময় শিল্পকলা আর বিজ্ঞানের অবস্থান আলাদা ছিল না। একাধিক দার্শনিক স্কলারের মধ্যে তখন বৈজ্ঞানিক মেধা ও মননের পাশাপাশি কাব্য-শিল্পকলায় প্রতিভার সহাবস্থান দেখতে পাব। সে রকমই এক বিরল প্রতিভা – লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯)। ‘Study the Science of art . Study the art of Science. Develop your senses – Learn how to see. Realize that everything Connects to everything else.’। এরকম কথা ভিঞ্চির মতো বহুমুখী প্রতিভাধর এবং দার্শনিক ছাড়া আর কেই বা বলতে পারেন! আসলে সে সময়ে সৃষ্টিশীল যে-কোনো মানুষকেই স্বভাব-দার্শনিক হিসেবে ভাবা হত। তখন জ্ঞানেরও এত স্পেশালাইজেসন ছিল না। স্পেনীয় শারীরবিজ্ঞানী সান্টিয়গো রামোন ই কাহাল (১৮৫২-১৯৩৪) ছিলেন একজন বহুদর্শী বরেণ্য মনীষা। ১৯০৬ সালে ফিজিওলজি এবং মেডিসিন বিভাগে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। পেইন্টিং আর সৃজনশীল সাহিত্য রচনাতেও তাঁর ছিল যথেষ্ট আগ্রহ। একজন দূরদর্শী প্রতিভাবান শিক্ষক আসলে কেমন ছাত্রদের সম্বন্ধে বেশী আগ্রহী হয়? এই নিয়ে রামোন কাহালের মন্তব্যটি পড়লেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলছেন, ‘সুদূরপ্রসারী ভাবুক শিক্ষকদের কাছে সেই সমস্ত ছাত্ররাই বেশী পছন্দের, যে-সব ছাত্রদের থাকে অপর্যাপ্ত অসীম, উদ্বেল, প্রখর ও কল্পনাপ্রবণ মন। যারা সমানভাবে নিজেদের নিয়োজিত রাখে সাহিত্য, শিল্প , দর্শন কিংবা বিভিন্ন বিনোদনমূলক কাজকর্ম আর মননচর্চায়। এইসব ছাত্ররাই তাদের বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা আর কল্পনাপ্রবণ মন নিয়ে সমর্থ হয় সত্যের খোঁজ পেতে।’
বস্তুত, শিল্প আর আর্টের সঙ্গে বিজ্ঞানের সীমারেখা ততটা দুর্ভেদ্য নয়, যতটা আসলে আমরা ভেবে নিই। বিজ্ঞান তো কোনো বিষয় নয়। লাতিন থেকে আসা ‘সায়েন্স’ কথার অর্থ ‘জ্ঞান’। বস্তুত বিজ্ঞান-ও একটি সংস্কৃতি। বিজ্ঞান আর আর্ট – দুই বিভাগেরই কাজ প্রকৃতির অজানা-অচেনাকে বোঝার চেষ্টা করা। শিল্প বা কবিতার মতোই, বিজ্ঞানও আসলে একটি ইমাজিনেটিভ-অ্যাক্টিভিটি। এই কল্পনা যখন মেধাবী ডানায় ভর ক’রে সন্ধান পায় সত্যের, তখনই আসে সেই আলোকিত ইউরেকা মুহূর্তগুলি। এভাবেই বিভিন্ন সময়ে একটু একটু ক’রে বিকশিত হয়েছে বিজ্ঞান সংস্কৃতির সৌধ। ওপরের আলোচনার সঙ্গে ‘শিক্ষা’-র ও রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। তবে তা যেহেতু একটি বড়ো পরিসরের আলোচনা দাবী করে, তাই এখানে সে বিষয়ে যাব না । শুধু এ বিষয়ে দু’একটি জরুরি কথা ব’লে লেখাটি শেষ করব। হয়তো নতুন কথা কিছু নয়, তবু আবার উত্থাপন করতে চাই প্রসঙ্গটি। স্বপ্ন, প্রশ্ন বা কল্পনা তৈরির অবকাশ যে শিক্ষায় থাকে না, সে শিক্ষা ছাত্রছাত্রীদের নিছক বুকিশ ক’রে তোলে। সৃজনীশক্তির বিকাশের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, চিন্তার মুক্তি। ভাবনা ও চেতনার স্বাধীন বিচরণ। স্কুলে তো বটেই। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণার ক্ষেত্রেও এই বিষয়ে তাই আরও যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই যে, আমাদের পাঠ্যদান পদ্ধতি কিংবা কোর্স-কারিক্যুলামগুলি তথ্য, জ্ঞান আর পান্ডিত্যের বোঝাতেই ভারাক্রান্ত। সোজা কথায় বললে, ভাবনা আর কল্পনা বিকাশের জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করা দরকার, সেই ভাবনা ও উদ্যোগের খামতি সেখানে সুস্পষ্ট। আমাদের শিক্ষার মধ্যে এত বিবিধ বিষয়ের ছড়াছড়ি। এত স্পেসালাইজেশন। তবু এসবের মধ্যে একটা ইন্টারডিসিপ্লিনারি পাঠ থাকা যে জরুরি – এ কথা আমরা কবেই বা বুঝব? কবে উপলব্ধি করব, প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে রয়েছে প্রতিটি বিষয়ের নিবিড় সংযোগ? যাদের মধ্যে রয়েছে অর্থপূর্ণ যোগাযোগ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা। নিজের নিজের বিশেষজ্ঞতার নিরাপদ স্বাচ্ছন্দ্য জায়গা আর টেক্সটবুক নির্ভরতা থেকে কোনও শিক্ষকই বেরিয়ে আসতে পারেন না। বেদনার হলেও এ কথাটাই সত্যি। দর্শন, সাহিত্য, আর্টস, ইতিহাস, লজিক, গণিত, অর্থশাস্ত্র, ভূগোল, ভাষাবিজ্ঞান… ইত্যাদির ধারণা ছাড়াই বিজ্ঞানপাঠ যে সম্ভব নয় – এ কথা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। তেমনি বিজ্ঞানকে সম্পূর্ণ বর্জন ক’রে, সাহিত্য বা মানবীয় বিদ্যার পাঠ যে নিস্ফল, এ-কথাও একইভাবে সত্যি। এসব কথা এখনও যদি আমরা না বুঝি, তা’তে আগামী দিনের সৃজনশীল প্রতিভাধর ছাত্রছাত্রীদের বিকাশের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে উঠবে, সে কথা বলা বাহুল্য। তাই এ বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণই হবে এই লেখার সার্থকতা ।
তথ্য সূত্র-
RESONANCE –Journal of Science Education, Indian Academy of Sciences,Vol 12; Issue 5, May 2007 , pp 88-100 Imagination in Science Jacobus Henricus Van’t Hoff
Root-Bernstein, R.S. Art –Advances Science , Nature, 407: 134, 2000
Root-Bernstein, R.S, Music, Creativity, and scientific thinking, Leonardo 34,No.1,63-68,2001
Joseph L. Goldstein, A Well-Hung Horse: Sired by knowledge and Imagination, Cell , Vol. 162, Issue 6, pp 1179-1182
Brian Foster, 2005 Physics World 18 (1) 34 , Einstein and his love for music
Sandor G. Vari , 2016 Croat Med J. Apr;57(2):87-88, Creative mind links art and science
Robert Root-Bernstein et al , Journal of Psychology of Science and Technology, Volume 1,Number 2,2008, Springer Publishing Company, 51-59 Arts Foster Scientific Success: Avocations of Nobel, National Academy, Royal Society, and Sigma Xi Members
দুই ভুবনের পারে, সৃষ্টি সুখ প্রকাশন, জানুয়ারি ২০১৭ সিদ্ধার্থ মজুমদার ISBN-978-1-63535-521-5