বিধিনিষেধ মেনে খাবার খেলে মস্তিষ্কের বয়ঃপ্রাপ্তি ধীরে হয়

বিধিনিষেধ মেনে খাবার খেলে মস্তিষ্কের বয়ঃপ্রাপ্তি ধীরে হয়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১৮ জানুয়ারী, ২০২৪

খাবারে ক্যালোরির মাত্রা সীমিত রাখলে স্বাস্থ্যের যেমন উন্নতি ঘটে তেমনই আয়ু বৃদ্ধি পায়। তবে কীভাবে যে এই প্রক্রিয়াটি সংঘটিত হয় তা আজও অনেকটাই রহস্যময়, বিশেষ করে কীভাবে এই নিয়ন্ত্রণ আমাদের মস্তিষ্ককে রক্ষা করে। বিজ্ঞানীরা OXR1 নামক একটি জিনের সন্ধান পেয়েছেন যা খাবারের বিধিনিষেধ মেনে চললে আয়ু বাড়িয়ে দিতে এবং মস্তিষ্কের সুস্থভাবে বয়ঃপ্রাপ্তিতে সাহায্য করে। নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত এক জার্নালে কেনেথ উইলসন বলেছেন যে মানুষ যখন তার খাবারের পরিমাণ সীমিত করে, তখন সে ভাবে যে তার পরিপাকতন্ত্রে প্রভাব পরবে বা মেদ বৃদ্ধি হ্রাস পাবে, তবে তা কীভাবে মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে সে সম্পর্কে সে কিছু ভাবে না। কিন্তু আজ এটা স্পষ্ট যে একটি জিন মস্তিষ্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষকের দল কোশীয় স্তরে প্রক্রিয়া করে দেখিয়েছে কীভাবে খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ মেনে চললে বার্ধক্যকে বিলম্বিত করা যেতে পারে এবং স্নায়ু সংক্রান্ত রোগ বা নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের অগ্রগতি ধীর করা যেতে পারে। পরীক্ষাটি মাছি এবং মানব কোশের উপর করে দেখা গেছে সম্ভাব্য থেরাপিউটিক লক্ষ্যগুলোকে চিহ্নিত করে বার্ধক্য এবং বয়সজনিত স্নায়ু সংক্রান্ত রোগগুলোকে ধীর করা যায়। গবেষক অধ্যাপক পঙ্কজ কাপাহির মতে মাঝে মাঝে উপোস করা বা ক্যালোরি মেপে খাওয়া দাওয়া করা, অথবা পুষ্টির মাপকাঠি ঠিক রেখে খাওয়া এইরকম বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করলে ওই জিনের প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে খাবারে বিধিনিষেধ জীবনকাল এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি করে ঠিকই কিন্তু ব্যক্তি বিশেষে এবং শরীরের বিভিন্ন কলায় এই ক্যালোরি হ্রাসের প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্নতা দেখা যায় ফলত এটা স্পষ্ট যে এর অভ্যন্তরে এখনও এমন অনেক প্রক্রিয়া রয়েছে যা আবিষ্কার করা বাকি আছে। এই গবেষণায় দেখার চেষ্টা করা হয়েছে কেন বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ভাবে খাদ্যের প্রতি সাড়া দেয়।
দলটি প্রায় ২০০টি প্রজাতির ফলের মাছি খুঁটিয়ে দেখা শুরু করেছিল। মাছিদের দুটি ভিন্ন খাদ্য তালিকার পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষা করা হয়েছিল- একটি স্বাভাবিক খাদ্য এবং অন্যটি মেপে খাবার খাওয়া যা স্বাভাবিক পুষ্টির মাত্র ১০% ছিল। গবেষকরা পাঁচটি জিন শনাক্ত করেছেন যার নির্দিষ্ট বৈচিত্র্য ছিল এবং যা খাদ্যতালিকায় বিধিনিষেধের ফলে আয়ুকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে, দুটি জিনের অনুরূপ জিন মানব দেহে পাওয়া যায়। দলটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অন্বেষণ করার জন্য একটি জিন বেছে নিয়েছে- একটি জিন মাছিতে পাওয়া যায়, মাস্টার্ড (mtd) এবং অন্যটি “অক্সিডেশন রেজিস্ট্যান্স 1” (OXR1) যা মানুষ ও ইঁদুরে পাওয়া যায়। এই জিন কোশকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, যদিও কীভাবে সেটা কাজ করে তা অজানা। নিউরনে সক্রিয় একটি জিন কীভাবে সামগ্রিক জীবনকালকে প্রভাবিত করে তা নির্ধারণ করার জন্য, গবেষকের দলটি বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে। তারা দেখেছে OXR1, রেট্রোমার নামক একটি কমপ্লেক্সকে প্রভাবিত করে। রেট্রোমার কোশীয় স্তরে প্রোটিন এবং লিপিড পুনর্ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিনের একটি গুচ্ছ। এই রেট্রোমার ঠিকভাবে কাজ না করলে বয়সজনিত স্নায়ু রোগ বিশেষ করে অ্যালজাইমার বা পারকিনসন যা খাদ্যতালিকাগত বিধিনিষেধ দ্বারা সুরক্ষিত থাকে তার কারণ হতে পারে। এই গবেষণা দেখিয়েছে যে রেট্রোমার পাথওয়ে, যা কোশীয় স্তরে প্রোটিন পুনঃব্যবহারের সাথে সংযুক্ত, শরীরে পুষ্টির সীমাবদ্ধতার সময় স্নায়ু তন্ত্রের নিউরনগুলো রক্ষা করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দলটি এও দেখেছে যে mtd/OXR1 জিন শুধু রেট্রোমারের কাজ সংরক্ষণ করে তা নয় বরং বিধিনিষেধ মেনে খাবার খেলে স্নায়ু তন্ত্রের স্বাভাবিক কাজ, মস্তিষ্কের বয়ঃপ্রাপ্তি, এবং আয়ু বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়।