
এক কেজি মাছের দাম ৭৫০ টাকা হলে ৩৭৫ গ্রামের দাম কত হবে? ক্যালকুলেটর থাকলে এটা কোনো সমস্যাই নয়। কিন্তু যদি মুখে মুখে করতে হয় হিসেবটা? রীতিমতো ঘাম ছুটে যাবে। অথচ আমাদের দেশে যেসব ছেলেমেয়ে খুচরো (রিটেল) বাজারে কাজ করে, তারা হামেশাই এসব জটিল হিসেব মুখে মুখে করে দেয়। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, ক্লাসঘরে যখন তাদের ওই একই ধরণের গণিতের সমস্যা দেওয়া হয়, তারা বেশ খারাপ ফল করছে। এইসব ছাত্রদের অনেকেই এখনো স্কুলছাত্র কিংবা সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণি পেরিয়ে এসেছে। উল্টো দিকে, ওই একই সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, যেসব স্কুলছাত্র কোনো চাকরি করে না, তারা স্কুলপাঠ্য গণিতের সমস্যা সমাধানে অপেক্ষাকৃত পটু হলেও বাস্তব ক্ষেত্রের জটিল হিসেবেনিকেশে অনেক সময়েই ব্যর্থ। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, “স্কুলের বাচ্চা” আর “বাজারের বাচ্চা” এই দুই দলই একে অপরের কাজে বেশ কাঁচা। কী করে গণিতে এই দু দলের সর্বাঙ্গীণ পটুত্ব বাড়ানো যায় তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। এ বিষয়ে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের সহ-রচয়িতা, মাসাচুসেট্স ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির অর্থশাস্ত্র বিশেষজ্ঞ এস্থার ডাফ্লো মন্তব্য করেছেন, স্কুলের বাচ্চারা বিমূর্ত সমস্যার তুলনায় সুনির্দিষ্ট বাস্তব সমস্যার সমাধানে কাঁচা; বাজারের বাচ্চাদের বেলায়, ঠিক তার উলটো। আরেকজন সহ-রচয়িতা, অর্থশাস্ত্রবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, যেসব বাচ্চা স্কুলে পড়তে পড়তেই কোনো চাকরি করে তারা “মানসাঙ্কে অসম্ভব পটু হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষায় ভালো ফল করে না। এটাই আমার কাছে চিরকালের প্রহেলিকা। একদিককার পটুত্ব কেন অন্য দিককার পটুত্বে রূপান্তরিত হয় না?” তাঁদের গবেষণাপত্রটি নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হবে। এঁরা দুজন ছাড়াও আনন্দবাজার পত্রিকার স্বাতী ভট্টাচার্য, আই আই এম কলকাতার রাঘবেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত মনস্তত্ত্বের অধ্যাপক আলেজান্দ্রো জে গাইমিয়ান, এম আই টি-র অর্থশাস্ত্রর গবেষক কৈলাস রাজাহা এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্বের অধ্যাপক এলিজাবেথ এস স্পেলকে এই গবেষণাপত্রটির সহ-রচয়িতা।