বিরল প্রাচীনতম শিলার সন্ধান

বিরল প্রাচীনতম শিলার সন্ধান

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ জুলাই, ২০২৫

পৃথিবীর গল্প শুরু অরণ্য, মহাসাগর এমনকি প্রাণ সৃষ্টিরও অনেক আগে। ভূ-ত্বকের নীচে থাকা প্রাচীন শিলাগুলি নীরবে আমাদের গ্রহের প্রথম দিনগুলির গোপনীয়তা সংরক্ষণ করে রেখেছে। এই প্রাচীন শিলা আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা আমাদের গ্রহের জন্মের শুরুর দিকের রহস্য উন্মোচনে নতুন দ্বার খুলেছে। কানাডার উত্তর কুইবেকের ইনুকজুয়াক গ্রামের কাছে নুনাভিক অঞ্চলে এই প্রাচীন শিলার সন্ধান পাওয়া গেছে। গবেষণাটি পরিচালনা করেন অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী জনাথন ও’নিলের নেতৃত্বাধীন দল।
বিজ্ঞানীরা জানান, এই আবিষ্কার পৃথিবীর প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে রহস্যময় অধ্যায় হেডিয়ান যুগের একটি বিরল ঝলক দেয়। যা পৃথিবীর প্রথম ৫০ কোটি বছরের ইতিহাসকে ধারণ করে। হ্যাডিয়ান যুগ শুরু হয় প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে, যখন পুরো সৌরজগৎ ছিল অস্থির অবস্থায়। সে সময় পৃথিবী ছিল এক উত্তপ্ত তরল পাথরের গোলা, বারবার মহাকাশের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে জর্জরিত। প্রচণ্ড আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং বিষাক্ত গ্যাসে ভরা ছিল চারপাশ। যদিও কোনো জীবন ছিল না, সেই বিশৃঙ্খলার মধ্যেই ভবিষ্যতের প্রাণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হচ্ছিল।

গবেষণা অনুযায়ী, ইনুকজুয়াকের নুভুয়াগিট্টুক গ্রিনস্টোন বেল্ট অঞ্চলের আগ্নেয় শিলাগুলোর বয়স নিয়ে দীর্ঘদিন বিতর্ক চলছিল। ২০১৭ সালে সেখানে সংগৃহীত নমুনা বিশ্লেষণ করে বোঝা যায়, এই শিলার বয়স প্রায় ৪.৩ বিলিয়ন বছর হতে পারে। তবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সময় লেগেছে। অবশেষে উন্নত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে, আগ্নেয় শিলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অন্তর্ভেদী শিলার বয়স ৪.১৬ বিলিয়ন বছর, যার অর্থ, আগ্নেয় শিলাগুলো তারও আগে তৈরি হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা রেডিওমেট্রিক কাল নিরুপণ পদ্ধতি ব্যবহার করে শিলার বয়স নির্ধারণ করেছেন। এতে স্যামারিয়াম এবং নিয়োডিমিয়াম নামক মৌল বিশ্লেষণ করা হয়। কারণ স্যামারিয়াম ধীরে ধীরে নিয়োডিমিয়ামে রূপান্তরিত হয় এবং এই রূপান্তরের হার জানা থাকার কারণে শিলার প্রকৃত বয়স নির্ণয় সম্ভব হয়। দুটি ভিন্ন আইসোটোপ পদ্ধতির মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য ফলাফল পাওয়া গেছে।

এই শিলা কেবলমাত্র পৃথিবীর বয়সই নয়, বরং কীভাবে প্রথম মহাদেশ তৈরি হলো এবং কীভাবে পরিবেশ জীবনের উপযোগী হয়ে উঠলো, সে সম্পর্কেও ইঙ্গিত দেয়। এই আবিষ্কার আমাদের গ্রহের উৎপত্তি ও বিকাশের ইতিহাসকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven + twelve =