
যে কোনো ফুল সুসংগঠিত বিন্যাসে তার পাপড়ি মেলে ধরে। একবার নয়, বারবার। একই ধাঁচের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় সে। কিন্তু সুসংগঠিত এই ছন্দের আড়ালে লুকিয়ে থাকে বিশৃঙ্খলার গল্প। এই নিয়ে কর্নেল ইউনিভার্সিটির এক দল বিজ্ঞানী চমকপ্রদ এক গবেষণা চালিয়েছেন। তারা বলছেন, গাছের পাপড়ি, পাতা আর কান্ডর নিখুঁত গঠনের আড়ালে ভিতরের কোষগুলোতে চলছে এলোমেলো জিনের কার্যকলাপ। গবেষণাটি চলে সরিষা পরিবারের ছোট্ট একটি গাছকে কেন্দ্র করে। বিজ্ঞানীরা এমন কিছু জিনের ওপর নজর রাখেন, যেগুলি গাছের মধ্যে হরমোন (অক্সিন) পেলে সক্রিয় হয়। তারা দেখেন, সব কোষ একই হরমোন পাচ্ছে, অথচ তাদের সবার প্রতিক্রিয়া এক নয়। একই বার্তা পেয়েও একেকটা কোষ যেন আলাদা ভাষায় উত্তর দিচ্ছে। কেউ নিশ্চুপ আবার কেউ যেন চিৎকার করছে। মজার ব্যাপার হলো, এই এলোমেলো কোষগুলো দিয়েই গাছ সঠিকভাবে চারটি ‘সেপাল’ (ফুলের নিচের সবুজ অংশ) গড়ে তোলে। মানে, ভেতরে যতই গোলমাল হোক, বাইরে গঠন একেবারে অনবদ্য! এর কারণ? গবেষকরা বলছেন, এখানে কাজ করছে এক জাদুকরী পদ্ধতি, নাম ‘পরিসর ঘটিত গড়’ (spatial averaging)। অনেকগুলো কোলাহলপূর্ণ কোষ যেন একসঙ্গে গেয়ে চলে এক সমবেত সঙ্গীত। একটি কোষ হয়ত গোলমাল করছে, কিন্তু আশেপাশের কোষেরা ঐ গোলমাল সামলে নেয়। এভাবেই গাছ তৈরি করে নির্ভরযোগ্য বার্তা। তার উপর নির্ভর করেই ফুলের অঙ্গগুলি গঠিত হচ্ছে। তারা আরও দুটো জিনের (AHP6এবং DOF5.8) ক্রিয়া অনুসরণ করেছেন। দেখা যায়, এরা তুলনামূলকভাবে কম এলোমেলো। এ থেকে বোঝা যায়, গাছ প্রয়োজনের সময় ‘সংকেত বা বার্তার গোলমালকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে’। অর্থাৎ, উদ্ভিদের মধ্যে এমন ব্যবস্থা আছে যা বুঝে নেয় কোন জিনকে কতটা স্বাধীনতা দেওয়া যাবে। প্রধান গবেষক অধ্যাপক এতিয়েন রোডার বলেন,“জীবজগতের নির্ভুলতা তৈরি হয় বিশৃঙ্খলাকে পুরোপুরি সরিয়ে দিয়ে নয়, এমন ব্যবস্থার মাধ্যমে, যা ঐ বিশৃঙ্খলাকে সামলে রাখতে পারে।”এটাই ক্যান্সার গবেষণা, বিশেষত জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো ভবিষ্যতের প্রযুক্তির জন্য বড় শিক্ষা হবে। সুতরাং এ যেন নিয়মের বাইরে থেকে নিয়মের কথাই বলা। নিখুঁত ফুলের ভেতরে বাস করে ছোট ছোট বেনিয়ম। আর সেগুলি মিলেই গড়ে তোলে প্রাণের সুন্দর রূপ!