বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধে, ভরসা মিথেন

বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধে, ভরসা মিথেন

Posted on ১৪ আগষ্ট, ২০১৯

পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত পাঁচটি অংশের সমন্বয়ে জলবায়ুতন্ত্র – অ্যাটমোস্ফিয়ার (বায়ু), হাইড্রোস্ফিয়ার (জল), ক্লায়োস্ফিয়ার (বরফ), বায়োস্ফিয়ার (জীবজগত) এবং লিথোস্ফিয়ার (পৃথিবীর উপরজলের শিলীভূত অংশ) । পার্থিব জলবায়ুর যাবতীয় বল বা শক্তি আসে সূর্য থেকে এবং তুলনামূলকভাবে স্বল্পাংশ উদ্ভূত হয় পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে। উল্লেখ্য, এই যে জাগতিক জলবায়ুতন্ত্র, এবং তার প্রকাশিত শক্তি বিলীন হয়ে যায় মহাবিশ্বে, যাকে আমরা বলি ‘আউটার স্পেস’। শক্তির এই যে আগমন ও বহিরাগমনের সমতা ও ভারসাম্যতা জলবায়ুতন্ত্রের মধ্যে দিয়ে, তা নির্ধারণ করে পৃথিবীর শক্তি-সামর্থ্যকে বা ‘এনার্জি বাজেট’ কে। আগত শক্তির পরিমাণ যখন নির্গত শক্তির তুলনায় মাত্রাধিক হয়ে পড়ে তখন পৃথিবীর শক্তিবাজেট পজিটিভ অর্থাৎ জলবায়ু উষ্ণতর হবে। বিপরীত কাণ্ড ঘটলে শৈত্য বৃদ্ধি পাবে, পরিবেশবিদদের মতে পৃথিবীর এনার্জি বাজেট তখন নেতিবাচক।
কার্বন-ডাই অক্সাইড অধুনায় বিজ্ঞানীমহলের চিন্তা- দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। এই মাত্রা-অতিরিক্ত সতর্কতা অস্বাভাবিকও নয়। কারণ ২০১৯ সালের ১১ই মে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে প্রতি মিলিয়নে এই গ্যাস পৌঁছেছে ৪১৫ পার্টসে। এত উদ্বিগ্নতা কেন? কেন না গত ৮ হাজার বছরে এই বৃদ্ধির হার পরিমান ১০০পিএম-এরও বেশি। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, এই গ্যাস উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া গেল আজ থেকে, তারপরও কিন্তু সমস্যার সমাধান হবে না কারণ যে বিপুল পরিমাণে এই গ্রিন হাউস গ্যাস পরিবেশে এখনই বিদ্যমান, তাতে আগামী কয়েক হাজার বছর পৃথিবীকে উষ্ণায়িত রাখতে সক্ষম।
সমস্যার কথা বলা হল, কিন্তু সমাধানটা কোথায়? গোটা বিশ্বের পরিবেশবিজ্ঞানীরা চিন্তিত। আর এই চিন্তা ও গবেষণার ফলশ্রুতিতে আজ না হলেও সুদূর ভবিষ্যতে এর সমাধান মিলতে পারে। বিজ্ঞানীদের আশা জাগাচ্ছে যে বস্তুটা সেটাও একধরণের গ্রিন হাউস গ্যাস। এর নাম মিথেন। বিজ্ঞানীদের ধারনা আমাদের জলবায়ুর বিবিধ সমস্যাকে প্রশ্নাতীত করতে পারে এই মিথেন গ্যাস। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি জার্নালে প্রকাশিত একটি সন্দর্ভে বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, মিথেন গ্যাসকে কার্বন ডাই অক্সাইডে রাসায়নিক ভাবে রুপান্তরিত করা গেলে উষ্ণায়নকে রোধ করা সম্ভব। এই গবেষণাটির প্রধান লেখক রব জ্যাসমন বলেন “মিথেন এক বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেছে”।
শিল্প বিপ্লবের পূর্বে বাতাসে যে পরিমাণ মিথেন ছিল, বর্তমানে তার আড়াই গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিমাণটি এমন – প্রতি বিলিয়নে ১৮৬০ পার্টস। প্রায় ৬০ শতাংশ মিথেন মানুষই বাতাসে যুক্ত করে নানাভাবে- কৃষি, পশুপালন প্রভৃতি। তবে এই গ্যাসীয় পদার্থটির আয়ুকাল খুবই কম। কিন্তু এই অল্প সময়কালেই পরিবেশকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে উত্তপ্ত করে তোলে এই গ্যাস। কার্বন ডাই অক্সাইড কুড়ি বছর ধরে যে পরিমানে তপ্ত করে পরিবেশকে, মিথেন তুলনায় ৮৪ গুণ বেশি কাজটি করে থাকে। মিথেন ও অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় কার্বন ডাই অক্সাইড ও জল। থার্মোডায়নামিক্সের এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বস্তুত, পরিবেশে এই ক্রিয়াটি প্রাকৃতিকভাবেই ঘটে থাকে। স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, যদি আমরা কোনভাবে এই প্রক্রিয়াটিকে প্রকৃতিতে ত্বরান্বিত করতে পারি, তাহলে বিশ্ব উষ্ণায়নকে রোধ করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six − one =